শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নেই, চীনে একদিনে ১৪৩ জনের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, নগরকন্ঠ.কম : নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণে চীনে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। প্রতিদিনই এ মিছিলে যুক্ত হচ্ছেন শতাধিক মানুষ। নতুন করে আরও ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে গত দেড় মাসে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫২৩ জনে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মূল ভূখণ্ডে শুক্রবার আরও ২ হাজার ৬৪১ জনের শরীরে নতুন এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৪২৯ জনে। এশিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে ভাইরাসটি ইতিমধ্যে আফ্রিকায় পৌঁছেছে। কমপেক্ষ ২৬টি দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানী বেইজিংয়ের বাসিন্দাদের মধ্যে যারা ছুটি শেষে নগরে ফিরছেন, তাদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসে সংক্রমণ নেই। চীনের উহান সিটি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি যে ৩১২ জনকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল তারা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। শনিবার বিকালে তাদের ‘কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ড’ শেষ হয়। এরপর কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের ছাড়পত্র দেয়া হয়। এদিকে সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত চার বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। চীনে মোট ৫ বাংলাদেশি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

আইইডিসিআরের সংবাদ সম্মেলন : গত ২৪ ঘণ্টায় সিঙ্গাপুরে নয়জন নতুন রোগী যোগ হয়েছেন। তবে সেখানে বাংলাদেশি নতুন কোনো রোগী নেই। সিঙ্গাপুরে এ পর্যন্ত ৬৭ রোগী নিশ্চিত হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা করার পর নেগেটিভ এসেছে ৭৫৪ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭ জন। বাংলাদেশের চারজন আক্রান্তের মধ্যে আইসিইউতে আছেন একজন, বাকিরা আইসোলেশনে। শনিবার দুপুরে আইইডিসিআরের করোনাভাইরাসসংক্রান্ত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি বলেন, আমাদের নজরদারির একটা বড় অংশ হটলাইনের মাধ্যমে হয়। সেখানে ২৪ ঘণ্টায় ১২২টি কল এসেছে। এর মধ্যে কভিড-১৯ নিয়ে কল এসেছে ৯৩টি। গত ২৪ ঘণ্টায় আর কোনো রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। ৬২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে কারও শরীরে কভিড-১৯ এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ১৪ ফেব্রুয়ারি চীনের উহান থেকে আসা ৩১২ জনকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। শনিবার বিকালে তাদের ১৪ দিন পূর্ণ হবে। সেখানে অবস্থারত ৩১২ জন সুস্থ আছেন। তাদের কারও মধ্যে কভিড-১৯ এর কোনো লক্ষণ-উপসর্গ নেই। তারপরও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী নির্ধারিত সময় অতিক্রমের পর আবার তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। এটা সম্পন্ন করেই তাদের পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়া হবে। অতিরিক্ত সতর্কতার অংশ হিসেবে তাদের মাস্ক, স্যানিটাইজার নিয়ে যেন যেতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হবে। এখান থেকে চলে যাওয়ার পর তাদের করণীয় কী হবে সে সম্পর্কেও নির্দেশনা দেয়া হবে। ৩১২ জনের স্ক্রিনিং সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কেউই যেতে পারবেন না। তাদের আগে একটি স্বাস্থ্য ফর্ম দেয়া হবে। সেটি পূরণ করবেন। কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করেছেন এমন সার্টিফিকেট নেবেন। এরপর তাদের পুরো কার্যক্রম শেষ হবে। এসব সম্পন্ন করতে রাত হয়ে যাবে। এরপর তারা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হজ ক্যাম্প ত্যাগ করবেন। তবে আমরা আগামীকাল পর্যন্ত তাদের থাকার ব্যবস্থা ওখানে রেখেছি।

অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, প্রতিটি জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সিভিল সার্জনসহ অন্যদের আহ্বান জানিয়েছি, সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে সমন্বয় কমিটি গঠন করে প্রতিটি জেলা পর্যায়ে কভিড-১৯ সম্পর্কিত কার্যক্রম পরিচালনা করতে।

আক্রান্তদের দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই : সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত চার বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। শনিবার দুপুরে সাভারের বিরুলিয়ায় ব্র্যাক সিডিএমে বিসিএস ফোরাম-৮৫ আয়োজিত বার্ষিক প্রীতি সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আক্রান্ত পাঁচ বাংলাদেশি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। তবে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরতে চাইলে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

উষ্ণ প্রধান অঞ্চলে করোনা আতঙ্কের নয় : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশসহ উষ্ণ প্রধান অঞ্চলের মানুষের জন্য করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জলবায়ু ও আবহাওয়াগত কারণে বাংলাদেশে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সেভাবে দেখা দেবে না। শনিবার দুপুরে যবিপ্রবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের গ্যালারিতে অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ আয়োজিত নবীনবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, চীনে যে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, সেটা করোনা গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল ভাইরাস। ফেব্রুয়ারি চলে গেলেই বাংলাদেশে গরম শুরু হবে। তখন এটা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আতঙ্কের কিছু থাকবে না। তবে চীনে যাওয়া-আসা মানুষের মাধ্যমে অন্যরা আক্রান্তের শঙ্কা থাকলেও তা মহামারী আকার নেবে না।

বেইজিং ফেরতদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন : ছুটি শেষে বিভিন্ন স্থান থেকে বেইজিং শহরে ফেরত যাওয়া মানুষদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদেশ অমান্য করলে শাস্তি পেতে হবে বলে জানানো হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে নতুন এ নিয়ম চালু করা হয়েছে বলে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

চীনে স্বাস্থ্য কর্মীদের মৃত্যু : চীনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ছয় স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের ভাইস মিনিস্টার জেং বলেন, উহানে ১১০২ জন স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমণের শিকার হয়েছেন এবং হুবেই প্রদেশের অন্যান্য স্থানে আরও ৪০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

মিস্টার জেংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সামনে থেকে যেসব স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তদের সেবা করছেন, তাদের দায়িত্বটা অনেক বেশি। তাদের কাজ করার এবং বিশ্রামের জায়গা অনেক সীমিত। তাছাড়া মানসিক চাপ এবং ঝুঁকিটাও অনেক বেশি। ৭ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাকর্মীদের দুর্দশা সামনে আসে উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াংয়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। তিনি ৩০ ডিসেম্বর ভাইরাসটি নিয়ে প্রথম সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলেন।

আমার বিশ্বাস আমরা এ থেকে বেরিয়ে আসব : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে চীনে প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে তদন্ত করতে চলতি সপ্তাহের শেষে একটি মিশন শুরু হতে যাচ্ছে। যার মূল উদ্দেশ্য কোভিড-১৯ নামের ভাইরাসটি কিভাবে ছড়াচ্ছে এবং তার মাত্রা কতটা ভয়াবহ তা যাচাই করা। সংস্থাটির পরিচালক টেডরস আধানম ঘেব্রয়েসাস একথা জানান। এ মিশনে থাকবেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। যারা তদন্ত করে দেখবেন কিভাবে এবং কখন ১৭শ’রও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। এ দলে ১২ জন আন্তর্জাতিক এবং ১২ জন চীনের বিশেষজ্ঞ থাকবেন। ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া, এর ভয়াবহতা এবং চলমান পদক্ষেপের প্রভাব সম্পর্কে বুঝতে চেষ্টার করার ওপর বিশেষ জোর দেয়া হবে।

আফ্রিকায় প্রথম আক্রান্ত শনাক্ত : মিসরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার নিশ্চিত করেছে যে, আফ্রিকা অঞ্চলে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্তকে শনাক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তি একজন বিদেশি। কিন্তু তার জাতীয়তা সম্পর্কে জানানো হয়নি। দেশটি জানিয়েছে যে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বিষয়টি অবহিত করেছে। একটি হাসপাতালে ওই ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। চীনের সঙ্গে আফ্রিকা অঞ্চলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে এর আগে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, আফ্রিকায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়া কাউকে খুঁজে পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।

ইউরোপের প্রথম মৃত্যু ফ্রান্সে : নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফ্রান্সে এক চীনা পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরাশক্তি চীনের উহান রাজ্যে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর প্রথমবারের মতো এশিয়ার বাইরে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম কারো মৃত্যু হল। ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যাগনেস বুজইয়ানেকে জানান, ৮০ বছর বয়সী ওই নারী চীনের হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা।

চীনের বাইরে : চীন সীমান্তের কাছে অবস্থিত ভিয়েতনামে রাজধানী হ্যানয়ের আশপাশের গ্রামগুলোতে হাজার হাজার মানুষকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু সংক্রমণের খবর পাওয়ার পর এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। ভিয়েতনামে এ পর্যন্ত ১৬ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের আহ্বান জানিয়েছে রেডক্রস, যেন সহায়তা সংস্থাগুলো তহবিল স্থানান্তর করে সরঞ্জাম কিনতে পারে। সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে প্রস্তুতি নিতে টেস্টিং কিট এবং প্রতিরোধী পোশাক অবিলম্বে^ কেনা দরকার বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

করোনাভাইরাসের মাইক্রোস্কোপিক ছবি প্রকাশ : সম্প্রতি প্রাণঘাতী নতুন করোনাভাইরাসে ছবি প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (এনআইএআইডি)। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথের একটি অংশ। হ্যামিল্টনের রকি পর্বতমালার ল্যাবে তারা করোনাভাইরাসের ছবি ধারণ করেছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন স্ক্যানিং অ্যান্ড ট্রান্সমিশন ইলেক্ট্রো মাইক্রোস্কোপ দিয়ে। এনআইএআইডির মলিকিউলার প্যাথোজেনেসিস ইউনিটের প্রধান এমি ডি উইট এ ভাইরাসের নমুনা সরবরাহ করেন। মাইক্রোস্কোপিস্ট এলিজাবেথ ফিশার এর ছবি ধারণ করেন এবং ল্যাবের ভিজ্যুয়াল মেডিকেল আর্ট বিভাগ ওই ছবি রঙিন করে তোলে।

নগরকন্ঠ.কম/এআর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com