শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:০৪ অপরাহ্ন

রাসিকে তৃতীয় লিঙ্গের কাউন্সিলর

বুধবার ফল ঘোষণার পর থেকে সুলতানা আহমেদ সাগরিকাকে নিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠেছেন। এবারই প্রথম কোনো তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এ কারণের তাদের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই।

জানাযায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের একজন সদস্য।পাঁচ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হারিয়ে সুলতানা আহমেদ সাগরিকা নামের এই প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।

বুধবার (২১ জুন) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত জোন-৭ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

ঘোষিত ফল অনুযায়ী, নির্বাচনে আনারস প্রতীকে সাগরিকা পেয়েছেন ৬ হাজার ২৬৩ ভোট। এই আসনের বর্তমান নারী কাউন্সিলর উম্মে সালমা মোবাইল ফোন প্রতীকে ৩ হাজার ২৩১ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। আর হেলিকপ্টার প্রতীকে ৫ হাজার ৪৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন নাজমা খাতুন নামের এক নারী। এছাড়া নূরজাহান পারভীন বই প্রতীকে ৩ হাজার ১২৬ ভোট, বীনা মজুমদার জিপগাড়ি প্রতীকে ২ হাজার ২৯২ ভোট এবং মোসা. সুমি চশমা প্রতীকে ৭০৫ ভোট পেয়েছেন।

নির্বাচিত হওয়ার পর সাগরিকা বলেন, ‘আমি ভোটারদের একটা ইশতেহার দিয়েছি। পাঁচ বছরে আমি এই ইশতেহার বাস্তবায়ন করব। জনগণ আমাকে সম্মান দিয়েছে, আমিও তাদের সম্মান দেবো।’

সাগরিকার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানার শিল্পীপাড়া এলাকায়। মা-বাবার চার সন্তানের একজন তিনি। বাবা মারা গেছেন। বর্তমানে মা-বোনের সঙ্গে থাকেন সাগরিকা। সংসারের দায়িত্ব তার কাঁধেই। সাগরিকার পড়াশোনা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। নবম শ্রেণিতে ওঠার পর সহপাঠীদের টিপ্পনীর কারণে স্কুল ছাড়তে হয়েছিলো তাকে। এক সময় বাড়িও ছাড়তে হয়েছিলো তাকে।

এখন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে কাজ করেন সাগরিকা। তিনি ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ নামের একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। ২০০০ সাল থেকে সংগঠনটি তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ভোটের প্রচার চলাকালে সাগরিকা অভিযোগ করছিলেন যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তার নামে অপপ্রচার করছেন। তারা বলছেন, সাগরিকা নির্বাচিত হলে এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর ‘অত্যাচার’ বেড়ে যাবে। নির্বাচিত হওয়ার পর সাগরিকা বললেন, ‘এটা যে অপপ্রচার ছিলো তা ভোটাররা বুঝতে পেরেছেন। ভোটাররা ভেবেছেন, আমি নির্বাচিত হলে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর “অত্যাচার” বাড়বে না। আমি চাইব না যে, আমার এলাকার মানুষ খারাপ থাকুক।’

তিনি বলেন, আমি এক ভিন্নধর্মী মানুষ। ভোটাররা ভাবলেন, সবাইকেই তো সুযোগ দিয়েছেন। এবার আমাকে দিয়ে দেখা যাক। তারা আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। আমি সবার জন্য কাজ করব।

এই নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের ১০টি সংরক্ষিত জোনের মধ্যে ছয়টিতেই এসেছে নতুন মুখ। আর জোন-১ এর তাহেরা খাতুন, জোন-৫ এর সামসুন নাহার, জোন-৮ এর নাদিরা বেগম ও জোন ১০ এর সুলতানা রাজিয়া এবারও নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ছয় জোনের মধ্যে জোন-২ এর আয়েশা খাতুনকে হারিয়ে মোসা. শিউলী, জোন-৩ এর মুসলিমা বেগম বেলীকে হারিয়ে সেবুন নেসা, জোন-৪ এর শিরিন আরা খাতুনকে হারিয়ে আলফাতুন নেছা, জোন-৬ এর মাজেদা বেগমকে হারিয়ে মমতাজ মহল, জোন-৮ এর উম্মে সালমাকে হারিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সদস্য সুলতানা আহমেদ সাগরিকা এবং জোন-৯ এর আয়েশা খাতুনকে হারিয়ে মোসা. ফেরদৌসি নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com