রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:২০ অপরাহ্ন

লাল চিনিতে কারসাজি, প্যাকেট বদলে বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে

হাতবদল আর মোড়ক পাল্টে সরকারি লাল চিনির দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে কেজিতে ৫০ টাকা। আর এই মূল্যবৃদ্ধির কাজটি করছে ৩ থেকে ৪টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এরা চিনি ও খাদ্য করপোরেশনের ডিলার থেকে কিনে গোপনে নিজেরাই প্যাকেটজাত করে। আর প্যাকেটের গায়ে বাড়তি দাম লিখে বাজারজাত করছে সরকারি চিনি। ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অনুসন্ধানে ক্রেতা ঠকানোর এই চিত্র উঠে আসে।

আখের চিনি তৈরি ও বাজারজাতের দায়িত্ব কেবল সরকারি সংস্থা, চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের। এর আড়াই হাজার ডিলারের খুচরা ও পাইকারি বাজারে এই চিনি বিক্রি করার কথা। কিন্তু মজুদ কমায় খুচরা পর্যায়ে চিনি বিক্রি বন্ধ গত রোজা থেকে। অথচ রাজধানীর বাজারে প্যাকেটজাত সরকারি লাল চিনি ঠিকই মিলছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাশিরা বিডি লিমিটেড, গাংচিল, সতেজ ফুডসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান করপোরেশনের ডিলার নয়। এরা করপোরেশনের ডিলার উল্লেখ করে সরকারি চিনির প্যাকেট বাজারে বিক্রি করছে। করপোরেশন ১১২ টাকা দাম ঠিক করে দিলেও মোড়কের গায়ে লেখা ১৬২ টাকা কেজি। এর মধ্যে মাশিরা বিডি’র প্যাকেটই খুচরা বাজারে সরবরাহ বেশি।

প্যাকেটে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা রাজধানীর ঝিগাতলা দেয়া হলেও কোন হোল্ডিং নম্বর নেই। তাই অফিস খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। এলাকার লোকজনের কাছেও প্রতিষ্ঠানটি অচেনা।

অনেক খোঁজাখুজির পর ঝিগাতলা মোড়ের কাছে একটি বহুতল ভবনের নীচতলায় স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার গুদাম ঘরে মেলে বস্তাভর্তি সরকারি চিনির বিশাল স্তুপ। অপ্রাপ্তবয়স্ক কয়েকজন শ্রমিক করপোরেশনের বড় বস্তা থেকে ছোট প্যাকেটে ভর ছিলো লাল চিনি।

নানা কৌশল করে প্রতিষ্ঠানের মালিক এস এম শহিদুল্লাহ ইমরানের দেখা মিললেও ক্যমেরার সামনে কথা বলতে নারাজ তিনি। স্বীকার করেন নিজের অসাধুতার কথাও। তিনি বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে আমরা কিনে নিয়ে আসি। আপনি যেটা বলছেন এটা ঠিক আছে, সরকারি চিনি প্যাকেট বানানো… কিন্তু তারা সিস্টেমটাই এমন করে রেখেছে। আমি যদি ৫০ বস্তা কিনতে যাই, আমাকে দেবে না। এখন কিন্তু খুচরা প্যাকেটও তারা বন্ধ করে দিয়েছে।’

চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন বলছে, ডিলার বাদে অন্য কারো প্যাকেটে ভরে সরকারি লাল চিনি বিক্রির সুযোগই নেই। সংস্থার চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান আপু বলেন, ‘প্যাকেট চিনি ১১২ টাকা। এবং এর বাহিরে যদি কেউ বিক্রি করে আমাদের চিনি, তাহলে সেটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এটা আমরা জানিয়েছি কিন্তু আসলে আমাদের তো কোনো ম্যাকানিজম নেই যে আমরা এটা মার্কেটে মনিটর করবো। আমরা ভোক্তা অধিকার তারপর বিএসটিআই এদেরকে জানিয়েছি।’

আর প্রতারক চিনি ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনার কথা জানায় ভোক্তা অধিকার। সংস্থার মহাব্যবস্থাপক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘এটা কি কারণে এমন হচ্ছে এটা ক্ষতিয়ে দেখা যেতে পারে।’

দুর্মূল্যের এই বাজারে সরকারি চিনি নিয়ে নানা কারসাজি হলেও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের নির্বিকার দশায় হতাশ ভোক্তারা।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com