সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:২২ পূর্বাহ্ন

যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে রুশ শিশুদের

দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ ছাড়া চলতি বছরের জুন মাস থেকে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইউক্রেনও।

এরই মধ্যে রাশিয়াতে স্কুলে পড়ুয়া শিশুদের যুদ্ধ সম্পর্কে হাতে কলমে শেখানোসহ প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ। রাশিয়ার স্কুলের খেলার মাঠগুলো যেনো হয়ে উঠছে প্যারেড গ্রাউন্ড।

ইতিমধ্যে রাশিয়ায় নার্সারি গ্রেডের স্কুলের শিশুরা সামরিক ইউনিফর্ম পরে এবং মার্চিং অনুশীলনে অংশ নেয়। এ ছাড়া তুলনামূলক বড় বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে কিভাবে পরিখা খনন করতে হয়, গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে হয় এবং গোলাবারুদ দিয়ে গুলি করতে হয়।

রবিবার এ বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্তাসংস্থা সিএনএন।

সিএনএন জানায়, রাশিয়া সারা দেশের স্কুলগুলিতে শিশু-কিশোরদের “স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা” গঠন করা হচ্ছে এবং মাতৃভূমির প্রতিরক্ষার উপর জোর দেওয়ার জন্য জাতীয় পাঠ্যক্রম পর্যন্ত পরিবর্তন করা হচ্ছে।

এক ঘোষণায় রুশ শিক্ষামন্ত্রী সের্গেই ক্রাভতসোভ জানান, রাশিয়ান স্কুল এবং কলেজগুলিতে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার “সামরিক-দেশপ্রেমিক” ক্লাব রয়েছে প্রচুর লোক তাদের কাজে অংশ নেয়।

পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন

চলতি বছরের আগস্টে স্কুলগুলিতে “মাতৃভূমির সুরক্ষা এবং প্রতিরক্ষার মৌলিক বিষয়” নামক বাধ্যতামূলক কোর্স চালু করতে একটি আইনে স্বাক্ষর করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

এই আইনের মাধ্যমে শিশুদের জন্য সামরিক ইউনিটে ভ্রমণ, সামরিক-ক্রীড়া-গেমস, সামরিক কর্মীদের এবং প্রবীণদের সাথে মিটিং এবং ড্রোনের ক্লাস অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের অভিজ্ঞ সামরিক ইউনিট অফিসার বা প্রশিক্ষকদের দ্বারা গোলাবারুদ ব্যবহার করতে শেখানো হবে।

অর্থাৎ স্কুল জীবন থেকেই শুরু হবে সামরিক জীবন।

এ ছাড়া পাঠ্য-পুস্তকে আধুনিক ইতিহাসও নতুন করে লেখা হচ্ছে। বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে ‘রাশিয়ার ইতিহাস’ নামক প্রচ্ছদে ইউক্রেনের সাম্প্রতিক ইতিহাস নিয়েও নতুন অধ্যায় রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে যে, পশ্চিমারা রাশিয়ার অর্থনীতিকে নিচে নামানোর চেষ্টা করছে।

সিএনএন বলছে অধ্যায়টি দ্বারা রাশিয়ান শিশুদের মধ্যে ক্ষোভের অনুভূতি জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে পুতিন সরকার।

শিশুদের সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান

রাশিয়ার স্থানীয় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সিএনএন-এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সাত বা আট বছর বয়সী শিশুদের প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে রুশ কর্তৃপক্ষ।

যার মধ্যে জুলাই মাসে বেলগোরোডের শিশুদের এক অনুশীলনে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের ব্যবহার এবং একটি মেশিনগান খুলে আবার সংযোগ করা শেখানো হয়েছে। এ ছাড়া বেলগোরোডের গভর্নর ব্যাচেস্লাভ গ্ল্যাডকভ নিয়মিত স্কুলছাত্র ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন।

এর আগে মে মাসে ক্রাসনোদরে, সাত বা আট বছরের কয়েক ডজন শিশু সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর ইউনিফর্ম পরে অনুকরণের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে নিয়ে একটি মঞ্চে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সামনে কুচকাওয়াজ করে।

সিএনএন জানায়, এই কুচকাওয়াজের বেশিরভাগ শিশুই এক ধরণের সামরিক ইউনিফর্ম পরে ধাপে ধাপে মার্চ করার চেষ্টা করছে। প্রায়শই তারা রাশিয়ান সামরিক বীরদের ছবি বহন করে।

শিশুদের সামরিক প্রশিক্ষণের এসব বিষয় ক্রিসমাস ট্রি অফ উইশস প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রসার বাড়িয়েছে স্কুলগুলো। যেখানে সক্রিয় রয়েছে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু নিজে।

সেনাবাহিনীর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম

রাশিয়ার শিশুরাও বাস্তবিক উপায়ে যুদ্ধের প্রচেষ্টায় অবদান রাখবে বলে আশা করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। করা হচ্ছে। আর এই লক্ষ্যে কারিগরি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর জন্য মোবাইল স্টোভ, ট্রেঞ্চ মোমবাতি তৈরি, হেডব্যান্ড এবং ব্যান্ডেজ সেলাই, বালাক্লাভা সেলাইসহ নানারকম কাজ করে থাকে।

এ ছাড়া কিশোর-কিশোরীদেরকে ইয়ুথ মিলিটারি স্পোর্টস প্রতিযোগিতা করতেও উৎসাহিত করা হয়।

মূলত রাশিয়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য হল “পারস্পরিক সহায়তা এবং সহানুভূতিশীল সমর্থনের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী রাশিয়ান ফেডারেশনে পরিষেবার জন্য তরুণ প্রজন্মকে প্রস্তুত করা।”

আর তাই এই লক্ষ্য হাসিলে প্রায়ই বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করে থাকে রুশ সামরিক বাহিনী।

আলোচনা-সমালোচনা

তবে শিশুদের সামরিক প্রশিক্ষণ বা যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণের জন্য কম উৎসাহী বা আগ্রহী নয় এমন শিক্ষকদের স্কুল থেকে সরিয়ে দিচ্ছে রুশ কর্তৃপক্ষ বলছে সিএনএন। এরকম শিক্ষকের সংখ্যা কত তাও বিস্তারিত বলতে পারছে না বার্তা সংস্থাটি।

তবে এসব বিষয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এসব বিষয়ের বিরোধিতা জানিয়েছেন কিছু অভিভাবকরা।

তবে রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা আরআইএ নভোস্তি জানিয়েছে যে, একটি সমীক্ষা অনুসারে ৭৯ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানদের যুদ্ধের ভিডিও দেখানোকে এবং সামরিক প্রশিক্ষণকে সমর্থন করেন।

সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্যে দেখা যায় যে অনেক রাশিয়ান মনে করেন যে তাদের দেশ শত্রু শক্তি দ্বারা বেষ্টিত এবং বঞ্চিত। আর এর একমাত্র বিকল্প হল আত্মরক্ষা করা। সেই বার্তা এখন জনগণ থেকে রাশিয়ার স্কুলগুলিতে নেওয়া হচ্ছে বলছে সিএনএন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com