বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৩ অপরাহ্ন
চট্টগ্রামে পাইকারি ও খুচরা বাজারে আলুর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকে আলু আনা বন্ধ রাখায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। আড়তদাররা আলু না আনার কারণে খুচরা বাজারেও সরবরাহ ফুরিয়ে আসছে। ফলে বাজারে আলুর তীব্র সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। সংকট মেটাতে চট্টগ্রামের হিমাগারেও নেই পর্যাপ্ত আলু। তবে ক্রেতারা বলছেন আলুর বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। এই সংকট সৃষ্টি করতেই ব্যবসায়ীরা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন হিমাগার থেকে আলু আনা বন্ধ রেখেছেন।
আলু ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতিদিন আলুু বিক্রি করে কমিশন পাই ২ হাজার টাকা। মোবাইল কোর্ট এসে জরিমানা করে ১০ হাজার টাকা। আড়তদারি করে লাভের চেয়ে ক্ষতি হচ্ছে। এজন্য আলু আনা বন্ধ রেখেছি। রিয়াজউদ্দিন বাজারে অর্ধ শতাধিক আলু আড়ত রয়েছে। যারা উত্তরবঙ্গ থেকে আলু এনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন্ন বাজারে সরবরাহ করেন। কিন্তু এখন তারা আলু আনা বন্ধ রেখেছে তাই আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে।
তবে আলু ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করা সম্ভব নয় ফলে তারা উত্তরবঙ্গের হিমাগার থেকে আলুর ট্রাক আনা বন্ধ রেখেছেন। তবে ক্রেতারা বলছে, আড়তদাররা ভোক্তাদের জিম্মি করে আলুর দাম বাড়াতে উত্তরবঙ্গ থেকে আলুর ট্রাক আনা বন্ধ রেখেছেন। গতকাল চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ আড়তই আলুশূন্য। সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও আলু বিক্রি হচ্ছে না। বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। অথচ চলতি বছরের জানুয়ারিতে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি আলুর দাম ছিল ১৮ থেকে ২২ টাকা। জুন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৮ টাকার মধ্যেই স্থির ছিল। তবে জুলাইয়ে এক লাফে দাম বেড়ে ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, হিমাগারে আলুর দাম বলা হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। এছাড়া পরিবহণসহ আরও অনেক খরচ আছে। এদিকে সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। এত বড় লোকসান দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে না। আগের দামে বা অতিরিক্ত দামেই বিক্রি হচ্ছে। নগরীর বাজারগুলোতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়। খোলা সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১৪৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৫৮ টাকায়। চট্টগ্রামের মফস্বলের বিভিন্ন কাঁচাবাজারে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে। ভারত থেকে আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭২ টাকায়। যদিও সরকার বুধবার ৬৫ টাকা দাম নির্ধারণ করার আগে এসব পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ টাকা প্রতি কেজি। তবে কিছু নিম্নমানের পেঁয়াজ সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর কাঁচা বাজারে সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও অধিকাংশ সবজিই বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫ টাকার বেশি দামে।
চট্টগ্রামে দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের। গরুর মাংস প্রতি কেজি এক হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৮৫ টাকায়। বড় ও মাঝারি আকারের তেলাপিয়া মাছের কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। মাঝারি চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।