বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন
পূবের আলো এসে ঠিকরে পড়তেই ঝকঝমকিয়ে উঠল কাঞ্চনজঙ্ঘা। আহা সৌন্দর্য, আহা; একদিকে সূর্য উঠছে আর অন্যদিকে গনগনে আগুনে উত্তপ্ত হয়ে থাকা সোনার মতো পাহাড়চূড়া, স্বর্ণাভ কাঞ্চনজঙ্ঘা।
পঞ্চগড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে রওনা দিয়েছিলেন কয়েকজন যুবক। সারারাত ট্রেন ভ্রমণ করে ক্লান্তই ছিলেন সকলে। চোখ ঘুমে আচ্ছন্ন। ভোরের ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে থামছে, লোকজন নামছে; উঠছে। সেসবে যুবকদের খেয়াল নেই। থাকার কথাও নেই। তাদের জিনিসপত্র এখানে মানুষের গায়ে লেগে সরে যাচ্ছে কি না সেসব কি আর খেয়াল আছে।
এরইমধ্যে দ্রুতযান ট্রেনটি পার্বতীপুর স্টেশন অতিক্রম করে দ্রুতবেগে চলে যাচ্ছে পঞ্চগড়ের দিকে। আর তখনই যুবকেরা ঘুম ভেঙে খেয়াল করেন তাদের একটি ব্যাগ নেই। সেই ব্যাগে একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা, আইফোন,মানিব্যাগে দুটি ডেবিটকার্ড ও টাকা… ঘুম থেকে উঠে যেখানে প্রথমে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার কথা ছিল, চোখে দেখছিলেন শর্ষেফুল। ট্রেন দ্রুতবেগে ছুটে যাচ্ছে, আর সেই ট্রেনে যুবকেরা মূলবান ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হারিয়ে যেন হাহাকার করছিলেন।
ফোন দিলেন ব্যাগে থাকা আইফোনে, কেউ ধরলো না। দ্বিতীয়বার ধরলেন এক্সিনি তিনি দ্রুতযান এক্সপ্রেসেরই অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুস সাত্তার। জানালেন, এক যুবক তার কাছে একটি ব্যাগ নিয়ে এসেছে, সেই ব্যাগেই ফোন রয়েছে। ছেলেটি নিজের ব্যাগ মনে করে ভুল ব্যাগ নিয়ে পার্বতীপুর স্টেশনে নেমেছে।
রফিকুল ইসলাম সাহেব ও পরিচালক আব্দুস সাত্তার সাহেব ট্রেনের টিটি সাহেবকে ফোন করায় পরের স্টেশন চিরিরবন্দরে ট্রেনটির স্টপেজ করানো হয়। এরপ;অরে যুবকেরা চিরিরবন্দর থেকে রওনা দেন পার্বতীপুরে। অবশেষে খোঁজ মেলে সেই ব্যাগের। ওই যুবকদের জন্য পার্বতীপুরের একটি রেস্তোরাঁয় অপেক্ষা করছিলেন দুই সাবেক ও বর্তমান পরিচালক ও ব্যাগটি যার হাতে ছিল সেই যুবক।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই ঘটনার পুরো বিষয়টি জানিয়ে ওই পর্যটক দলের সদস্য ফাইয়াজ আদি শুভ্র বলেন, আমরা একজন অতিমানবীয় মানুষের সন্ধান পেয়েছি। যিনি ব্যাগটি নিয়ে নেমে গিয়েছিলেন, তিনি ভুল করেই এই কাজটি করেছিলেন। পরে তিনি স্টেশনে পরিচালকের কাছে ব্যাগ নিয়ে উপস্থিত হন। অন্য উদ্দেশ্য থাকলে তিনি ব্যাগ নিয়ে চলে যেতেন। আমরা তাকে সামান্য কিছু আর্থিক উপহার দেই। পরে আমরা পঞ্চগড় রওনা দেই। এটা ছিল সত্যিই রোমাঞ্চকর ভ্রমণ।