শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৩ পূর্বাহ্ন

২৫ বছরের মধ্যে চীনে বিদেশী বিনিয়োগ সর্বনিম্ন

চীনে ২৫ বছরের মধ্যে বিদেশী বিনিয়োগ সর্বনিম্নে, যা দেশটির নীতিনির্ধারকদের রীতিমতো চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি চীনা হালকা প্রযুক্তি আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে এবং গুপ্তচরবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করেছে। খবর নিক্কেই এশিয়া।

চীনের বিদেশী মুদ্রা বিনিময় বিভাগের প্রশাসক সম্প্রতি চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। এতে লেনেদেনের ভারসাম্য মেলানো যায়নি। সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) ১ হাজার ১৮০ কোটি ডলার কমেছে। আরো কয়েকটি কারখানায় বিনিয়োগ কাটছাঁট করা হচ্ছে। ১৯৯৮ সালের পর এ প্রথম অর্থনীতিতে নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

২০২২ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে বিদেশী বিনিয়োগ মন্থর হওয়ার পর থেকে এটা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তখন জিরো কভিড-১৯ নীতির কারণে সাংহাইয়ে লকডাউন ছিল। চীনের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল।

চীনে অবস্থিত জাপানিজ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্যদের গত সেপ্টেম্বরের জরিপ অনুসারে, জাপানি অর্ধেক কোম্পানি ২০২৩ সালে নতুন বিনিয়োগ করেনি। বাকি অর্ধেক বিনিয়োগ করলেও তা ২০২২ সালের তুলনায় কম।

চীনে অবস্থিত আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স সম্প্রতি এক জরিপে দেখিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ায় চীনে বিদেশী বিনিয়োগ কমেছে। ৬৬ শতাংশ আমেরিকান ব্যবসায়ী দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনাকে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন।

যুক্তরাষ্ট্র গত আগস্টে চীনের চিপ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে। বেইজিংয়ের সহযোগিতায় ওয়াশিংটন নভেম্বরে একটি সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। যেখানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও শি জিনপিং উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু অর্থনৈতিক নিরাপত্তার নামে প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞার পথ থেকে সরে আসবে না যুক্তরাষ্ট্র।

চীন কৌশল হিসেবে হালকা প্রযুক্তি খাতে বিদেশী বিনিয়োগের নতুন গন্তব্য খুঁজছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোডিয়াম গ্রুপের প্রতিবেদন অনুসারে, চীনের শেয়ারবাজারে সূচকের পতন শুরু হয়েছে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন লক্ষ করা যাচ্ছে। কোনো কোনো শেয়ার শূন্য থেকে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ভারত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার যৌথ শেয়ার ১০-৩৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

এরই মধ্যে গুপ্তচর বিরোধী চীনা আইন সংশোধন করা হয়েছে, যা জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। এসব উদ্যোগে চীনা কোম্পানিগুলো দুশ্চিন্তায় পড়েছে।

জাপানের এনএলআই রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক ইয়্যুসুকে ম্যুরা বলেন, ‘‌চীনা আইনে স্বচ্ছতার অভাব। এ কারণে দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন।’

কয়েকটি চীনা কোম্পানি প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছে। এ কারণে বিদেশী কোম্পানিগুলো টিকতে পারছে না। বিশেষ করে মিৎসুবিশি মোটরসের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সম্প্রতি কোম্পানিটি বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি তৈরিতে নজর দিয়েছে। অক্টোবরে কোম্পানিটি চীনে উৎপাদন কারখানা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।

এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় চীনা সরকার এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। উৎপাদন খাতে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নীতিমালা আরো সহজ করেছে।

জাপানি গবেষক ইয়্যুসুকে ম্যুরা আরো বলেন, ‘‌বিদেশী কোম্পানিগুলো চীনা কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা ইস্যুতে ক্রমাগত উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছে। এটা অস্বাভাবিক যে এসব উদ্বেগ বিবেচনায় নিয়ে চীন শিগগির নীতি বদলাবে।’

এটা ধরে নেয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ সত্ত্বেও চীন শিগগির চিপ সরবরাহ চেইন তৈরি করবে। তার পরও উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে খুচরা যন্ত্রাংশ কেনাকাটা কমবে। যদি প্রযুক্তির উৎপাদন ও উদ্ভাবন হ্রাস পায়, এটা চীনের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com