বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন
অবশেষে রাজধানীর বাজারে কমেছে ডিম-আলু-পেঁয়াজসহ সবধরনের সবজির দাম। যদিও বেশকিছু পণ্যের দাম এখনো স্বাভাবিকের থেকে বেশি। এদিকে শুল্কহার কমিয়ে অর্ধেক করা হলেও বাজারে বেড়েছে চিনির দাম। খোলা এবং প্যাকেটজাত উভয় চিনিতে দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত।
শুক্রবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি দেশি আলু বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে যা গত ২ সপ্তাহ ধরে বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা দরে। অন্যদিকে, আমদানিকৃত ভারতীয় আলুর কেজি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। যদিও সরকার নির্ধারিত দামের থেকে যা এখনো ৫ টাকা এবং আমদানি মূল্যের থেকে ২০ টাকা বেশি। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ সপ্তাহের মধ্যে আলুর দাম আরও কমবে।
মূলত আমদানিকৃত আলু সরবরাহ শুরু হওয়ায় বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। যদিও শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে অনেক বিক্রেতাই ভারতীয় আলু বিক্রি করছেন না। তবে পাইকারিতে ভারতীয় আলুর সরবরাহ থাকায় দেশি আলু কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে। এছাড়াও চলতি মাসের শেষের দিকে বাজারে নতুন আলু আসতে শুরু করবে। ফলে স্টোরেজ মালিকরা আলুর দাম কমাতে বাধ্য হবেন বলেও জানিয়েছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে, বাজারে কেজিতে প্রায় ২০ টাকা কমে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১শ’ থেকে ১১০ টাকা এবং ২০ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা দরে যা এখনো নির্ধারিত দামের থেকে দ্বিগুণ বেশি। এর আগে অক্টোবরের শেষ দিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক বৃদ্ধিসহ বিধিনিষেধ আরোপ করলে দেশের বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১৩০ টাকা বিক্রি হয়।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারতের বিকল্প হিসেবে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির ফলে পাইকারি বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। গত দু’দিনে দেশের বাজারে মাত্র ১০ ট্রাক বার্মা পেঁয়াজ আসায় কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। শুক্রবার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি বার্মা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা কেজি দরে। বার্মা পেঁয়াজের সরবরাহ অব্যাহত থাকলে দাম আরও কমবে।
এছাড়াও আমদানির খবরে বাজারে কমতে শুরু করেছে ডিমের দাম। শুক্রবার যা সরকার নির্ধারিত দামের থেকে ৫০ পয়সা এবং গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি ডিমে প্রায় ১ টাকা কমেছে। এদিন বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৬ টাকা দরে। অর্থাৎ দাম নির্ধারণের প্রায় দু’মাস পর বাজারে ডিমের দাম কমেছে।
রাজধানীর বাজারে ভারতীয় ডিমের সরবরাহ না এলেও আমদানি শুরুর খবরে দাম কমেছে বলে জানিয়েছে বিক্রেতারা। সবশেষ তথ্যনুযায়ী, বুধবার ৬৪ হাজার ভারতীয় ডিমের একটি চালান বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে ঢুকেছে। এ ডিমের প্রতি পিসের আমদানি ব্যয় ৭ টাকা ৬৩ পয়সা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অধীনে ১০ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে প্রায় ২ মাস পর রাজধানীর বাজারে স্বাভাবিক হয়েছে সবজির দাম। এদিন টমেটো ছাড়া সব ধরনের সবজি বিক্রি হয়েছে ১শ টাকার নিচে। দু-একটি সবজি ছাড়া সব ধরনের সবজির দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। মাত্র এক সপ্তাহ ব্যবধানে ১শ’ থেকে দেড়শ’ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে বেশ কিছু সবজিতে। এদিন প্রায় ৯০ টাকা কমে প্রতি কেজি গোল বেগুণ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা, দেড়শ’ টাকা কমে প্রতি কেজি সিম বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা, ১২০ টাকা কমে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা, ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমে বরবটি, করোল্লা, ঢেড়শ, লাউ, চাল কুমড়া, চিচিঙ্গা, কচুর লতি ও পটল বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা দরে। এছাড়াও ২০ টাকা কমে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা দরে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। ফলে সারা বছর পাওয়া যায় এমন সবজির দাম কমতির দিকে রয়েছে। এছাড়াও বাড়তি দামের কারণে ক্রেতারা দামি সবজি কিনছে না। ফলে পাইকারিতে এসব সবজির চাহিদা হ্রাসে পেয়েছে এবং দামও কমেছে।
অন্যদিকে, আরও কিছুটা কমে বাজারে প্রতি কেজি সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ৩১০ টাকা, লেয়ার ৩০০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা দরে। প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের বাজার। তবে ইলিশের সরবরাহ বৃদ্ধিতে নদী-নালার মাছের দাম কিছুটা কমেছেÑ যা পুরো অক্টোবর জুড়েই কেজিতে ১শ’ থেকে ২শ’ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ছিল।
এদিন বাজারে বড় আকারের ইলিশ কিছুটা কম থাকলে সরবরাহ গত কয়েক দিনের তুলনায় বেড়েছে। ৪শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ৭শ’ টাকা, ৭শ’ থেকে ৮শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৯শ’ টাকা এবং ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১২ টাকার উপরে।
অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা, বড় কাতল ৫শ’ টাকা, বড় পাঙ্গাশ ২শ’ টাকা, চাষের কই (ছোট) ৩২০ টাকা, তেলাপিয়া আড়াইশ টাকা ও শিং মাছ ৬শ’ টাকা। এছাড়া শোল মাছ ৮শ’ টাকা, পাবদা ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, ট্যাংরা মাছের কেজি আকারভেদে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা, মলা মাছ ৫শ’ টাকা, বাইলা ১ হাজার টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪শ’ টাকা, মাঝারি আকারে বোয়াল ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, গুড়ামাছ ৩শ’ টাকা, ছোট চিংড়ি ৫শ’ টাকা, গলদা ৭শ’ এবং বাগদা ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা ও রূপচাঁদা ৯শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ গত মাসের তুলনায় এসব মাছে কেজিতে কমেছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।