টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের পদ হারিয়ে বায়েজিদ আলম জোবায়ের নিপু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ছেড়েছিলেন প্রায় অর্ধযুগ আগে। ২০১৬ সালে নিপু টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের পদ ছাড়ার পর এই পদে যোগ দিয়েছিলেন ব্রিটিশ পল স্মলি। তিনি ২০২০ সালে চলে গেলেও ফের তাকে ফিরিয়ে আনে বাফুফে। এরপর তিন বছর দায়িত্ব পালন করে স্মলি ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে আবার বাফুফে ছাড়লে টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের পদটি শূন্য হয়। অবশেষে ৭ বছর পর নতুন স্থানীয় টেকনিক্যাল ডিরেক্টর নিয়োগ দিচ্ছে বাফুফে। এই পদে আসছেন জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ও কোচ সাইফুল বারী টিটু।
বাফুফের নয়া টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে তার নিয়োগ অনেকটাই চুড়ান্ত। বৃহস্পতিবার বাফুফের টেকনিক্যাল কমিটির সভায় আগামী এক বছরের জন্য টিটুকে এই পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। বাফুফের নতুন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে আগামী সোমবার থেকে কাজ শুরু করবেন তিনি। বাফুফের দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, ৪ লাখ টাকা মাসিক সম্মানীতে সাইফুল বারী টিটু নতুন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন।
কাজী মো. সালাউদ্দিন ২০০৮ সালে সভাপতি হওয়ার পর বাফুফেতে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পদটি আনুষ্ঠানিকভাবে সৃষ্টি হয়। দেশের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক শহিদুর রহমান চৌধুরী সান্টু ২০০৯ সালে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দিতে আমেরিকা থেকে ঢাকায় আসেন। তবে দেড় বছরের বেশি এই পদে থাকেননি তিনি। সান্টুর বিদায়ের পরই স্থানীয় হিসেবে বায়োজিদ জোবায়ের আলম নিপু টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কয়েক বছর কাজ করেন। তবে ২০১৬ সালে প্রথম বিদেশি হিসেবে এই পদে আসেন পল স্মলি।
সাইফুল বারী টিটু টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হচ্ছেন এমন ক্ষেত্র আগে থেকেই সাজিয়ে রেখেছিল বাফুফে। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা। কাল সেই আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন হয়। এই পদে নতুন নিয়োগের জন্য লোক দেখানো তিনদিনের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল বাফুফে। সেখানে বাংলাদেশিদের প্রাধান্য দেয়ার কথা উল্লেখও ছিল। দেশের দুই শীর্ষ কোচ মারুফুল হক ও জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু আবেদন করেননি। আবেদন করেছিলেন শুধু সাইফুল বারী টিটু। কাল টেকনিক্যাল কমিটির সভায় এক পর্যায়ে টিটু এসেছিলেনও। সেখানে মূলত আলোচনা হয়েছে তার সম্মানী নিয়ে। শেষ পর্যন্ত ৪ লাখ টাকা মাসিক সম্মানী দফারফা হয়। সাবেক ফুটবলার ও কোচ সাইফুল বারী টিটু গত দেড় মৌসুম দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবল থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন।
গত বছর গোলাম রব্বানী ছোটন ও পল স্মলি দায়িত্ব ছাড়ার পর জাতীয় নারী দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচের দায়িত্ব পান টিটু। এরপর থেকেই মূলত বাফুফে সভাপতি ও একজন প্রভাবশালী সদস্যের গুডবুকে দেশের এই শীর্ষ কোচ। কয়েক মাস নারী দলে কাজ করার পর এখন টেকনিক্যাল ডিরেক্টরও হচ্ছেন টিটু। বাফুফের সাবেক ব্রিটিশ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি এশিয়ার সর্বোচ্চ কোচিং সনদ প্রো লাইসেন্স কোর্স করাতে পারতেন। টিটুর পক্ষে এটি করানো সম্ভব নয়। তারপরও টিটুকে নিয়োগ দেওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বলেন, ‘আমরা এক বছরের জন্য তাকে (সাইফুল বারী টিটু) দায়িত্ব দিচ্ছি। এর মধ্যে প্রো লাইসেন্স কোর্স আমরা আয়োজন করব না। কারণ টিটু এই লাইসেন্স দিতে পারবেন না। তবে এর মধ্যে তিনি ‘এ’ লাইসেন্স কোর্স সম্পাদন করতে পারবেন।
ঢাকা আবাহনীর সাবেক ক্রোয়েশিয়ান কোচ দ্রাগো মামিচ, বিকেএসপির সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর রেপার, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সাবেক কোচ রেজা পার্কাস সহ আরও সাতজন বিদেশি আবেদন করেছিলেন এই পদে। অধিক যোগ্যতর বিদেশি থাকলেও তড়িঘড়ি করে স্থানীয় একজনকে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে বাফুফের সহ-সভাপতি ও টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহি ব্যাখ্যা দেন এভাবে, ‘বিজ্ঞপ্তির মেয়াদের ব্যাপারে আমাদের কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই। ফিফার একটা নির্দেশনা রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে থেকেই একজনকে এই পদে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে। আমরা তাই স্থানীয় একজনকেই প্রাধান্য দিয়েছি।