সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন
বেচাকেনার জন্য প্রস্তুত রাজধানী ঢাকার ১৯ কোরবানির পশুর হাট। এখন অপেক্ষা শুধু ট্রাকে ট্রাকে গরু-মহিষ-ছাগলসহ বিভিন্ন গবাদি পশু নিয়ে বেপারী, খামারি ও গৃহস্থদের আগমনের। হাটের সার্বিক নিরাপত্তা ছকও এরই মধ্যে পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে। প্রবেশমুখের গেটে আলোক সজ্জার পাশাপাশি গোটা হাটে বৈদ্যুতিক সংযোগও পুরোপুরি সম্পন্ন। ইতোমধ্যে অনেক হাটে পশু উঠাতে শুরু করেছেন ব্যাপারিরা।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ২৫ জুনের আগে কোরবানির পশু ঢাকার কোনো অস্থায়ী হাটে না তোলার নির্দেশ দেওয়া হলেও উত্তরা ও শাহজাদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার হাটে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন বেপারী ও খামারি গরু-ছাগল নিয়ে হাজির হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ঢাকায় ঢুকতে দেখা গেছে। বেপারীরা জানান, ভালো জায়গা দখল করতেই তারা আগেভাগেই গরু নিয়ে হাটে চলে এসেছেন। যদিও এ জন্য তাদের বাড়তি খরচ হচ্ছে। তবে ভালো দামে গরু বেচতে পারলে তা পুষিয়ে যাবে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে জায়গা চিহ্নিত করে বেপারীরা নাম লেখা কাগজ ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তারা আগেভাগে আসলেও তাদের গরু-ছাগল ২৪ জুন রাতে কিংবা ২৫ জুন সকালে ঢাকায় ঢুকবে। হাটগুলোতে দালালদের আনাগোনাও আগেভাগেই শুরু হয়েছে। তারা এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে হাটে আসা বেপারী ও খামারিদের সঙ্গে তাদের গরু বিক্রি করে দেওয়ার জন্য আগাম চুক্তি করার চেষ্টা করছেন।
হাটে ইজারাদারদের লোকজন ও শ্রমিকরা কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন। কোথাও কোনো ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কি না তা খুঁজে দেখছেন। বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হলে ভিড়ের মধ্যে কেউ হাসিল না দিয়ে বিক্রীত গরু নিয়ে ভিন্ন কোনো পথে চলে যেতে পারে কি না তা ভালোভাবে যাচাই করছেন। বৃষ্টিতে হাটে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় তা-ও ইজারাদাররা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর বৃহত্তম স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে বিভিন্ন ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠানের দুই শতাধিক কর্মী কাজ করছেন। হাটের ভেতরে যেসব রাস্তায় গরুর ট্রাক ঢুকবে তা সংস্কারে ব্যস্ত একদল শ্রমিক। ইজারাদারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থায়ী পশুর হাট হলেও কোরবানির পশুর বড় চালান এখনো সেখানে আসেনি। তবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ গরু-ছাগল-মহিষ বেশি আসছে। বিক্রিও বেশখানিকটা বেড়েছে।
গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটের ম্যানেজার আবুল হাশেম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘হাটে কোরবানির পশু বিক্রির প্রস্তুতি পুরোপুরি শেষ। এরই মধ্যে পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। ১১টি হাসিল ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, বরগুনা, নাটোর, মেহেরপুর, রাজশাহী, পাবনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানের ৮৫ জন বড় বেপারী প্রায় একশ’ সেড বরাদ্দ নিয়েছেন। কাজ শেষে সেগুলো তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এবার হাটের হাসিল লেখার জন্য লোক নিয়োগ করা হয়েছে ৪০০ জন। স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবেন দুই বেলা মিলে ৮০০ জন। স্থায়ী টয়লেট থাকলেও অস্থায়ীভাবেও কিছু বসানো হয়েছে।’
রাজধানীর কমলাপুর পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার প্রস্তুতিও শেষের পথে। গরু-ছাগল ঢুকলে বেচাকেনা শুরু করা যাবে। তবে পুরোদমে বিক্রি শুরুর জন্য যতটা প্রস্তুতি দরকার, তা সম্পন্ন না হওয়ায় বড় বেপারীরা সেখানে পশু তুলতে দেরি করছেন। যদিও দূর-দূরান্ত থেকে বেশকিছু বেপারী হাটটিতে এসে আগেভাগেই আস্তানা গেড়েছেন। তারা কোথায় গরু তুললে সহজেই ক্রেতা আকৃষ্ট করা যাবে সে জায়গা খুঁজে নিচ্ছেন। কয়েকজন ছোট ও মাঝারি বেপারী এরই মধ্যে হাটে কিছু পশু তুলেছেন। শুক্রবার থেকে সেখানে বেচাকেনা শুরু হবে বলে তারা আশা করছেন।
এ হাটের প্রধান প্রবেশপথ তৈরি করা হয়েছে কমলাপুর ও মুগদার সংযোগ সড়কে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশ দিয়ে ও গোপীবাগ হয়েও পশু প্রবেশের পথ রয়েছে। প্রধান প্রবেশ পথে হাসিল দেওয়ার কাউন্টার বসানো হচ্ছে। এছাড়া কমলাপুরের উট খামারের আগে, দেওয়ানবাগ শরিফের সামনে ও গোপীবাগের প্রবেশমুখেও হাসিল সংগ্রহের কাউন্টার তৈরি করা হয়েছে। হাটে কাউন্টারের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০টি হবে বলে জানিয়েছেন হাট ইজারাদারের লোকজনেরা।
হাট মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের অন্তত এক সপ্তাহ আগেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটগুলো সাজানোর প্রস্তুতি নেন ইজারাদাররা। তবে এবার সবাই কিছুটা আগেই সে প্রস্তুতি নেওয়ায় হাটে আগেভাগেই কিছু পশু এসেছে। যদিও বেচাকেনা সেভাবে শুরু হয়নি।
রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির খেলার মাঠে দেখা গেছে সারি সারি বাঁশ পুঁতে রাখা হয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা বেপারী ও হাটের কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থা করেছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। এছাড়া আলাদা করে নির্মাণ করা হয়েছে পশুর খাবার রাখার স্থানও। একই অবস্থা দেখা গেছে হাজারীবাগ লেদার ইনস্টিটিউটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গায় বরাদ্দ দেওয়া অস্থায়ী হাটেও।
এ মাঠের ইজারাদার সোলায়মান সেলিম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৫ জুন থেকে পশু বিক্রি শুরু হবে। তবে ঢাকার বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে আমরা দুই-তিন দিন আগেই সব প্রস্তুতি শেষ করেছি।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলেন, ‘ডিএনসিসিতে একটা স্থায়ী গরুর হাট ছাড়া আরও আটটি অস্থায়ী হাট নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি হাটেই ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবস্থা থাকবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘যারা হাটগুলো ইজারা নিয়েছেন, আগত ক্রেতা এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় সুবিধাদি নিশ্চিত করতে তাদের সার্বিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘হাটগুলোতে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত, চাঁদাবাজি প্রতিরোধ ও সড়কে চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে।’
প্রসঙ্গত, দুই সিটির হাটের মধ্যে রয়েছে- ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, খিলগাঁও মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, যাত্রাবাড়ী দনিয়া কলেজসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাব নগরের ব্লক ই, এফ, জি, এইচ পর্যন্ত অংশের খালি জায়গা, দক্ষিণখানের কাওলা শিয়াল ডাঙ্গাসংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদ নগর) পশুর হাট, মোহাম্মদপুর বছিলা এলাকার ৪০ ফুট সড়কসংলগ্ন রাজধানী হাউজিং ও বছিলা গার্ডেন সিটির খালি জায়গা ও গাবতলী হাট (স্থায়ী)।