সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন
রাজধানীর অস্থায়ী হাটগুলোতে রোববার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে প্রথম দিন প্রতিটি হাট গবাদিপশুতে কানায় কানায় পূর্ণ থাকলেও ক্রেতা সমাগম ছিল নগণ্য। হাটে আসা বেশিরভাগ মানুষ দরদাম যাচাই করে সময় কাটিয়েছেন।
বিক্রেতারাও চড়া দর হেঁকে বাজার বোঝার চেষ্টা করেছেন। ফলে ঢাকার ১৯টি হাটের কোনোটিতেই এদিন বেচাকেনা তেমন জমেনি।
এদিকে বেচা-বিক্রির শুরুতে বিক্রেতারা হাটে আনা গবাদিপশুর আকাশচুম্বি দাম হাঁকলেও শেষ পর্যন্ত মোটামুটি লাভে তা বিক্রি করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তাদের ধারণা, ঢাকার হাটগুলোতে স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি কোরবানির পশু এসেছে। আরও বিপুলসংখ্যক পশুবাহী ট্রাক ঢাকামুখী রাস্তায় রয়েছে। অথচ আর্থিক দুরবস্থার কারণে অনেকেই এবার ৫-৭ জনে মিলে ভাগে কোরবানি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েক বছর বন্ধ থাকলেও এবার ভারতীয় গরু দেশে ঢুকেছে। চোরাপথে মিয়ানমার থেকেও বিপুলসংখ্যক গরু আসছে। ফলে সব মিলিয়ে শেষ সময় গরু-মহিষের দামে বড় পতন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে গো-খাদ্যের দাম বাড়ার অযুহাতে গরু ব্যবসায়ীরা যেভাবে দাম হাঁকছে, এতে অনেকের পক্ষেই এবার কোরবানি দেওয়া বেশ দুষ্কর হবে বলে মনে করছেন ক্রেতারা। তাদের শঙ্কা, গরু-মহিষের দাম এতটা চড়া থাকলে যারা এককভাবে পশু কোরবানি দিতেন, তাদের একাধিক ভাগিদার খুঁজতে হবে। আর যারা ৩-৪ জন মিলে ভাগে পশু কোরবানি করতেন, তারা বাধ্য হয়ে আরও শরিকদার বাড়াবেন। গত ৬-৭ মাস ধরে গরুর মাংস কেজিতে ২০০ টাকা বাড়ায় কোরবানির পশুর হাটে তিন মণ ওজনের মাংসের গরুর দাম আগের তুলনায় ন্যূনতম ২০-২৫ হাজার টাকা বাড়বে বলে মনে করেন ক্রেতারা।
এদিকে এবার গরুর দাম কতটা চড়া হবে? না-কি ক্রেতা সংকটে শেষ সময় বড় ধরনের দরের পতন ঘটবে? হাটে ওঠা কত পশু অবিক্রিত থাকবে? এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন হাট ইজারাদাররাও। তাদের শঙ্কা, এবার বিপুলসংখ্যক গরু-মহিষ উদ্বৃত্ত থাকবে। ফলে হতাশ বেপারী-খামারি ও গৃহস্থরা শেষ সময় কোরবানির পশু সস্তা দরে বেচে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে হাসিল কম সংগ্রহ হওয়ায় লোকসান হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ইজারাদাররা।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে গবাদিপশু আমদানি ও পাচার বন্ধ থাকার পরও গত কয়েক বছর কোরবানির ঈদে ২০-২২ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকছে। এবারও চাহিদার চেয়ে ২১ লাখ ৪১ হাজার বেশি পশু প্রস্তুত আছে। অথচ ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বেশকিছু দিন ধরে নানা কৌশলে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বিপুলসংখ্যক গরু-মহিষ দেশে ঢুকছে। কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে, আবার কখনো প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত করে গরু আনা হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সংঘবদ্ধ চক্র এর সঙ্গে জড়িত থাকায় চোরাপথে আসা এসব পশু সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন হাটে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। যার একটি বড় অংশ এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে তোলা হয়েছে। সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও অনেকে ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু পাচার হয়ে দেশে ঢোকার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজসেই কালোবাজারিরা অনেকটা প্রকাশ্যেই এই অপতৎপরতা চালিয়েছে। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিষয়টি অবহিত করেও কোনো লাভ হয়নি।