বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১০ পূর্বাহ্ন
রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা-ইজারাদার কারও হিসাব মিলছে না। ক্রেতাদের অভিযোগ, গো-খাদ্যের দাম, শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহণ ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বাড়ার অজুহাতে গরু-মহিষ-ছাগলের আকাশচুম্বী দাম হাঁকছেন গৃহস্থ ও বেপারীরা। ৮০ হাজার টাকার গরু তারা এক লাখ টাকার কমে বিক্রি করতে চাইছে না। তবে বিক্রেতাদের দাবি, ক্রেতারা যে দামে পশু কিনতে চাইছেন তাতে তাদের লাভ দূরে থাক, আসল চালান (বিনিয়োগকৃত মূলধন) খোয়াতে হবে। বাজার ঘুরে দেখা লাখের নীচে কোনো গরু নেই। এতে অনেকে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছেন।
এদিকে হাট ইজারাদাররা বলছেন, রোববার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেচাকেনা শুরু হলেও ক্রেতা-বিক্রেতার দরদামে বড় ফারাক থাকায় ঢাকার হাটগুলো এখনো জমে উঠছে না। অথচ সামনে মঙ্গল-বুধ আর মাত্র দু’দিন কোরবানির পশু বেচাকেনা চলবে। এ গতিতে বেচাকেনা চললে হাট ইজারার নেওয়ার জন্য বিনিয়োগকৃত টাকা তোলাও কঠিন হবে।
ক্রেতারা জানান, বেপারী ও গৃহস্থরা দরকষাকষি করে যেখানে এসে ঠেকছেন, ওই দামে গরু কিনলে হাসিলসহ অন্যান্য খরচ দিয়ে প্রতি কেজি মাংসের দাম এক হাজার থেকে ১১শ’ টাকা পড়বে। অথচ বর্তমান বাজারে ৮শ’ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ কোরবানির গরুতে কেজি প্রতি ২ থেকে ৩শ’ টাকা গচ্চা যাবে। এ হিসাবে ৩ মণ ওজনের গরুতে ২ হাজার ৪শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার ৬শ’ টাকা লোকসান হবে। অর্থনৈতিক মন্দার এ বাজারে যা মেনে নেওয়া মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারের জন্যই কঠিন।
যাত্রাবাড়ী দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গায় জমে ওঠা হাটে সোমবার দুপুরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মাতুয়াইলের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোসাদ্দেক আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিবছরের মতো ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় গরু কেনার জন্য হাটে এসেছেন। কিন্তু সকাল থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টা ঘুরেও পছন্দমতো কোনো গরু খুঁজে পাচ্ছেন না।
বেপারীরা দরদারি করে যে গরুর দাম ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকায় এসে ঠেকছেন, তাতে কোনো অবস্থাতেই দুই মণ মাংস হবে না। তবে এর চেয়ে বড় গরুর দাম কিছুটা কম। অথচ তা কিনে এককভাবে কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য তার নেই। তাই শেষ পর্যন্ত কী করবেন তার হিসাব মেলাতে পারছেন না।
মোসাদ্দেক আলী জানান, বাসায় ফিরে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে সন্ধ্যার পর আবার হাটে আসবেন। ছোট গরুর দামে না পোষালে আত্মীয়-স্বজন কাউকে সঙ্গে নিয়ে ভাগে মাঝারি সাইজের গরু কোরবানি দিবেন।
কমলাপুর পশুর হাটে একই ধরনের হতাশা প্রকাশ করেন বীমা কর্মকর্তা শফিকুল আলম। তিনি জানান, দু’দিনে আফতাব নগর ও মেরাদিয়াসহ ঢাকার ৪টি হাট ঘুরেছেন। প্রতিটি হাটেই কোরবানিযোগ্য পশু কানায় কানায় পূর্ণ। এখনো ট্রাকে ট্রাকে গরু ঢাকায় ঢুকছে। অথচ সবখানেই বিক্রেতারা গবাদি পশুর আকাশচুম্বী দাম হাঁকছেন। গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি চাইছেন। এত চড়া দরে গরু কিনে কোরবানি দেওয়া মধ্যবিত্তদের জন্য সত্যিই দুষ্কর বলে মনে করেন তিনি।