সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৪১ অপরাহ্ন
আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বরিশালে স্থায়ী ও অস্থায়ী কিছু পশুর হাট বসলেও সেগুলো এখনো জমে উঠেনি। হাটগুলোতে ব্যাপক ক্রেতা সংকট দেখা গেছে। তবে আজ বিকালে ও আগামীকাল এই দুইদিন হাটগুলোতে পশু বিক্রির সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বরিশালের পশুর খামারগুলোতে চলতি মাসের শুরু থেকেই ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এতে খামার ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই বুকিং নেওয়ায় তাদের পশু বিক্রি শেষ পর্যায়ে।
বরিশাল নগরীসহ আশেপাশের খামারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরের তুলনায় এবার খামারে বিক্রি ভালো হচ্ছে। ইতিমধ্যে খামারগুলোতে অর্ধেকের বেশি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। চলতি বছর কোরবানির হাট জমতে না জমতেই খামারগুলোতে বিক্রি শেষ পর্যায়ে। তারা এখন পশু ডেলিভারি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে হাটগুলোতে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী চরমোনাই পশুর হাটে ক্রেতার সংকট। গরুগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখলেও ক্রেতার দেখা নাই। বরিশাল নগরীর মধ্যে কিছু হাট বসলেও গরু এবং ক্রেতা দুইয়ের সংকটই লক্ষ্য করা গেছে।
এবার কোরবানির ঈদ উপলক্ষে খামারে দেশি, শাহীওয়াল ও ফিজিশিয়ান গরু পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ৭৫ কেজি থেকে সাড়ে ৫০০ কেজি ওজনের কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৭৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ লাখ টাকায়। তবে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু প্রতি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খামার মালিকরা।
বরিশাল নগরীর লাকুটিয়া সড়কের মুখার্জি বাড়ি পুল সংলগ্ন সাদ সাইদ অ্যাগ্রোতে দেখা যায়, বিভিন্ন দামের গরু সারিবদ্ধভাবে খামারে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি গরু গোসল করিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। এবার কোরবানির জন্য খামারটিতে ৯০টির বেশি গরু সংগ্রহে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি আবার অনেক বড় গরুও রয়েছে। তবে এসব গরু বুকিং হয়ে গেছে বলে জানান খামার কর্তৃপক্ষ।
সাদ সাঈদ অ্যাগ্রো খামারের পরিচালক মো. মিরাজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের এখানে সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে হালাল উপায়ে গরুগুলো কালেকশনে রেখেছিলাম। এছাড়াও কাস্টমারের কথা বিবেচনা করে ছোট-বড় সব ধরনের গরু আমাদের খামারে ছিল। খামারে ৬০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত গরু রয়েছে। প্রাইজটা রিজনেবল রাখায় অনেক ক্রেতা পেয়েছি। এটাই বড় ফ্যাক্ট। ক্রেতারা চিন্তা করে সাধ্যের মধ্যে দাম আর ভালো মানের গরু। যা আমাদের এখানে ছিল, তাই এখন পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ গরু বিক্রি হয়ে গেছে। আমরা এখন ডেলিভারি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে হাটে গিয়ে গরু কিনলে ক্রেতার অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় এবং গরু এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিতে ঝামেলায় পরতে হয়।
অন্যদিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের রহমতপুর দোহারিকা ব্রিজ থেকে হাতের ডান পাসে বরিশাল জনপদের মধ্যে সব থেকে বড় পশুর খামার এমইপি অ্যাগ্রো। এখানে ৩ শতাধিক গরু কোরবানি উপলক্ষে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তার মধ্যে ৩২ মণেরও একটি গরু আছে। শখ করে যার নাম রাখা হয়েছে ‘টাইটানিক’। প্রতিষ্ঠানটি গরুটির দাম হাকিয়েছে ৮ লাখ টাকা। এছাড়াও এই ফার্মে ৬০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত গরু, ছাগল সংগ্রহে রাখা হয়েছে। এমইপি অ্যাগ্রো তাদের ৭৫ ভাগ গরু বিক্রি করেছে বলে দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ফার্মের ম্যানেজার মো. রাফিউর রহমান।
ক্রেতারা বলছেন, বর্তমানে শহরের যান্ত্রিক জীবনে পশু কিনে স্থানান্তর করা মুশকিল। আর আগেভাগে কোরবানির পশু কিনে তার পরিচর্যা করার মতো লোকবল কম থাকায় তার ঝামেলায় যেতে চাচ্ছেন না। তাই পশুর হাটের বিড়ম্বনা এড়াতেই বর্তমানে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন খামারগুলোতে।
বরিশাল নগরীর কাগাশুরা, চরমোনাই, জেলার বানারীপাড়া উপজেলার গুয়াচিত্রাসহ কয়েকটি হাটে কিছুটা ক্রেতার সমাগম রয়েছে। তবে অধিকাংশ হাটে কোরবানির পশু ও ক্রেতা শূন্য। যে কয়টি গরু উঠেছে তার দামও গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। এবার বরিশালে মোট ৬৩টি কোরবানির পশুর হাট বসেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নুরুল আলম জানান, বরিশাল জেলায় এবার চাহিদার বেশি কোরবানির পশু রয়েছে। তাদের হিসাবে চলতি বছরে বরিশাল জেলায় ৯০ হাজার ৯২৮টি কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। তার মধ্যে জেলায় ৬ হাজার ৪৩০টি খামারে কোরবানির পশু রয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৪০৮টি। তবে এবার কোরবানির পরেও পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানান তিনি।