রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩৫ অপরাহ্ন
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এক দফার আন্দোলন সফলের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে চায় বিএনপি। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আন্দোলনের শেষ ধাপ শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে এবার ছক সাজানো হয়েছে। তবে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে মঙ্গলবার থেকে ২ সপ্তাহের ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে তারা। যাতে কয়েকটি সমাবেশ, একাধিক রোডমার্চ থাকবে।
বিএনপি সূত্র জানায়, আজ সোমবার শুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২ সপ্তাহের কর্মসূচি মঙ্গলবার ঢাকার কেরানীগঞ্জে বড় সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হবে। ঢাকায় ও নারায়ণগঞ্জে হবে আরও তিনটি সমাবেশ। এই সমাবেশগুলোর ফাঁকে ফাঁকে দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে চারটি রোডমার্চ কর্মসূচি করা হতে পারে। এর মধ্যে ঢাকায় একটি পেশাজীবী সমাবেশ, একটি নারী ও একটি শ্রমিক সমাবেশ হবে। আর সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে চারটি রোডমার্চ কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নতুন কর্মসূচি বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, এক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে আন্দোলনে দেশের মানুষ সবাই এক হয়ে আছে। সবাই একমত, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি সোমবার ঘোষণা করা হবে।
গত ১২ জুলাই সরকার হটানোর ‘এক দফার’ আন্দোলন শুরুর পর ঢাকায় মহাসমাবেশ, রাজধানীর চার প্রবেশমুখে ‘অবস্থান’ কর্মসূচি এবং একাধিকবার পদযাত্রাসহ গণমিছিল করেছে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল ও জোটগুলো। আগামী ২ সপ্তাহে জন্য নতুন কর্মসূচিগুলো শান্তিপূর্ণভাবে ব্যাপক জনসমাবেশ ঘটিয়ে সরকারকে চূড়ান্ত ‘বার্তা’ দেওয়া হবে। এতে কাজ না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংবিধানে জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে। আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে। এর আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। সে হিসেবে ১ নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এই নির্বাচন করতে হবে। বিএনপির সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আন্দোলনে দাবি আদায় করেই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারা।
আর সরকার যদি এই দাবি উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়, বিএনপি তা প্রতিহত করবে এবং সেই নির্বাচনে অংশ নেবে না। সূত্রমতে, এক দফা কর্মসূচির চূড়ান্ত সময়সীমা চলতি সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসকে ধরে আন্দোলনের রোডম্যাপ তৈরি করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সাম্প্রতিক সময় অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকসহ উচ্চপর্যায়ের বৈঠকগুলোতে আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এবং অক্টোবরের মাঝামাঝির মধ্যে এক দফার চলমান আন্দোলনকে সফল পরিণতির রূপ দেওয়ার জন্য বেশিরভাগ নেতা মতামত দেন। তারা ঘেরাওয়ের ওপর গুরুত্ব দেন। এ জন্য দলের মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য নিশ্চিত এবং রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলোকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে তারা বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। বৈঠকগুলোতে হাইকমান্ডের পক্ষ থেকেও আন্দোলন সফলে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সামনের আন্দোলনে আর কোনো ভুল করার সুযোগ নেই। সমন্বিতভাবে ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে হবে।
সূত্রমতে, আন্দোলনের শেষ ধাপে মহাসমাবেশ, সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘিরে অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করা হয়েছে। এসব কর্মসূচি চলবে একটানা অক্টোবরের মধ্যভাগ পর্যন্ত। এর ফাঁকে দেশের বিচার বিভাগ নিয়ে বিরোধী দলগুলোসহ সব মহলের নজরে আনতে আদালত ঘেরাও, আদালতের সামনে বিক্ষোভ, পুলিশ সদর দপ্তর, ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।