বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৪ অপরাহ্ন

যে কারণে গণমৃত্যুর শিকার হয় ৩৫টি আফ্রিকান হাতি

মাত্র তিন মাসে উত্তর-পশ্চিম জিম্বাবুয়েতে ৩৫টি আফ্রিকান হাতির মৃত্যু সবাইকে চমকে দিয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় মারা যায় ১১টি। ২০২০ সালের আগস্টের শেষ থেকে নভেম্বরের মধ্যে এ গণমৃত্যু ঘটে। আফ্রিকান হাতিদের রহস্যময় এ মৃত্যুর কারণ অবশেষে উন্মোচিত হয়েছে। খবর সিএনএন।

বিজ্ঞানীরা নতুন এক লেখায় বলেছেন, চলমান জলবায়ু সংকটের মাঝে বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার প্রাদুর্ভাবের শিকার হয়েছিল স্থলভাগের সবচেয়ে বড় এ প্রাণী।

এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জিম্বাবুয়ের ভিক্টোরিয়া ফলস ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্টের পশুচিকিৎসক ডা. ক্রিস ফগিন। তিনি বলেন, অনেক প্রাণী একসঙ্গে খুব কাছাকাছি সময়ে মারা যায়। কিন্তু এতটা কম সময়ে নয়। এ মৃত্যুগুলো যে ধাঁধা তৈরি করেছিল তার সবচেয়ে রহস্যময় অংশগুলোর একটি এটি।

একই বছরের শুরুতে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেশী উত্তর বতসোয়ানায় প্রায় ৩৫০টি হাতি মারা যায়।

আফ্রিকার সবচেয়ে বড় হাতির সংখ্যার কমে যাওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে চোরাচালান, বিষক্রিয়া ও খরাকে দায়ী করা হয়। তবে জিম্বাবুয়েতে মারা যাওয়া ১৫টি প্রাণী থেকে সংগ্রহ করা নমুনার ওপর ভিত্তি গবেষকরা বলছেন, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে মারা গেছে প্রাণীগুলো।

নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে ২৫ অক্টোবর প্রকাশিত বিশ্লেষণ অনুসারে, বিসগার্ড ট্যাক্সন ৪৫ নামের স্বল্প পরিচিত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে। যারা সেপ্টিসেমিয়া বা রক্তে বিষক্রিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ি।

গবেষকরা আরো বলছেন, ওই অঞ্চলের তাপমাত্রা, খরা ও সংখ্যা অনুসারে হাতির ঘনত্ব সম্ভবত প্রাদুর্ভাবে প্রভাব ফেলেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার ফলে ভবিষ্যতে আরও হাতির মৃত্যু ঘটতে পারে বলেও সাবধান করে দেন বিজ্ঞানীরা।

বতসোয়ানায় হাতির মৃত্যুর জন্য দায়ি করা হয় সায়ানোব্যাকটেরিয়াল নিউরোটক্সিনকে। তবে তা বিশদভাবে প্রকাশ করা হয়নি। ডা. ফগিন বলেন, জিম্বাবুয়ে ও বতসোয়ানার হাতির মৃত্যুর মধ্যে প্রমাণিত কোনো সম্পর্ক নেই।

শিকার ও বাসস্থানের ক্ষতির কারণে আফ্রিকান হাতি এমনিতেই বিপদের মুখে রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার রেড লিস্টে তারা বিপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত। ২০০৭ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে এ হাতির সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ থেকে কমেছে এক লাখ ৪৪ হাজারে। প্রতি বছর ৮ শতাংশ হাতে কমেছে।

প্রায় দুই লাখ ২৭ হাজার ৯০০ হাতি কাভাঙ্গো-জাম্বেজি ট্রান্সফ্রন্টিয়ার কনজারভেশন এলাকায় বাস করে। পাঁচ লাখ বর্গ কিলোমিটারের সুরক্ষিত এ এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ পড়েছে বতসোয়ানা ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে।

হাতির মৃত্যুর জন্য দায়ি বিসগার্ড ট্যাক্সন ৪৫ বাঘ ও সিংহের কামড়ে মানবদেহে সৃষ্ট ক্ষতে পাওয়া গিয়েছিল এর আগে। চিপমাঙ্ক ও খাঁচায় পোষা সুস্থ তোতাপাখির শরীরেও দেখা গেছে।

এ অণুজীবের আনুষ্ঠানিক কোনো নাম নেই। এটি অন্য একটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়া যা পাস্তুরেলা মাল্টোসিডা নামে পরিচিত, এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এ ব্যাকটেরিয়াও এশিয়ান হাতিসহ অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে হেমোরেজিক সেপ্টিসেমিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালে কাজাখস্তানে দুই লাখ বিপন্ন প্রজাতির সাইগা অ্যান্টিলোপের গণমৃত্যুর সঙ্গেও যুক্ত ছিল বিসগার্ড।

গবেষকরা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির জন্য আফ্রিকার ওই অঞ্চলের বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে বিসগার্ড ট্যাক্সন ৪৫ এর ফলে ২০২০ সাল থেকে আর কোনো হাতির মৃত্যু হয়েছে কিনা তারা নিশ্চিত নন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com