সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৪১ অপরাহ্ন

আতঙ্কে পেশা বদলাচ্ছে পরিবহণ শ্রমিকরা

চলমান অবরোধ-হরতালে যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আতঙ্কে নিরূপায় হয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন পরিবহণ শ্রমিকরা। এর মধ্যে দূরপাল্লার বাসের শ্রমিকদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। জীবন বাঁচাতে বহু শ্রমিক ইতোমধ্যেই পরিবহণের চাকরি ছেড়ে হোটেলে, গার্মেন্টস, গ্যারেজ ও কৃষি কাজে যোগ দিয়েছেন। অনেকে দিনমজুরের কাজও করছেন। অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়া শ্রমিকদের সংখ্যা হাজারো হতে পারে। পরিবহণের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনালে শিপন (২৩) নামের এমনই এক পরিবহণ শ্রমিকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, আমার পিতার নাম আবুল কাশেম। বাড়ি ময়মনসিংহ সদর জেলার বাঘমারা এলাকায়। পরিবারে আমি ছাড়াও পিতা-মাতা ও এক ভাই এবং দুই বোন আছে। আমিই সবার বড়। অভাবের সংসারে লেখাপড়া হয়নি। পিতা-মাতা চেষ্টা করেও অভাবের কারণে পড়াশোনা করাতে পারেননি। পিতা দিনমজুর। মা বিভিন্ন হোটেলে ও মেসে কাজ করেন। যা রোজগার হয় তাই দিয়েই ছয় জনের পরিবার চলছিল।

তিনি বলেন, অভাবের তাড়নায় বাসের হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করি। দুই মাস আগে ঢাকা-ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটে যাতায়াতকারী সৌখিন পরিবহণের হেলপার হিসেবে যোগ দেই। দিনে একটি ট্রিপ দেওয়া যায়। আবার রাতে আরেকটি ট্রিপ দেই। দুটি ট্রিপে ৮০০ টাকা পাই। এর মধ্যে খাওয়া-দাওয়াসহ অন্যান্য খরচ আছে। সব শেষে কোনো কোনো দিন ৩০০ বা ৪০০ টাকা থাকে। সবদিনই রোজগার সমান হয় না। প্রতিমাসে গড়ে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত থাকে। এই দিয়েই সংসার চলে। টাকার অভাবে বিয়ে হয়নি। তারপরেও ভালোই দিন চলছিল।

পরিবহণ শ্রমিক শিপন বলেন, এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলের হরতাল অবরোধ শুরু হলে একেবারে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। দূরপাল্লার বাস যাতায়াত করে না বললেই চলে। আর বাস না চললে টাকা রোজগার বন্ধ। কারণ পরিবহণ শ্রমিকরা দিন হাজিরা অনুযায়ী টাকা পায়। ট্রিপ নাই, টাকাও নাই। অবরোধ-হরতালে মালিকরা গাড়ি বের করেন না। উল্টো গাড়ি ভালোভাবে পাহারা দিতে বলেন। অথচ দিন হাজিরার কোনো টাকাও দেন না। শুধু সামান্য দুই বেলা খাওয়ার জন্য মানবিক কারণে টাকা দেন। আবার কোনো কোনো মালিক তাও দেন না বলে পরিচিত অনেক হেলপারের কাছে শুনেছি।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com