শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন
সংবর্ধিত হলেন অর্থনীতিবিদ এ. বি. এম. মো. আজিজুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। গবেষণা, অর্থনীতি, নীতিনির্ধারণ ও উন্নয়ন চিন্তায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে এ দুই গুণীজনের সংবর্ধনার আয়োজন করে বণিক বার্তা ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)।
অনুষ্ঠানে ড. মসিউর রহমানের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং বিআইডিএসের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। আর এ. বি. এম. মো. আজিজুল ইসলামের পক্ষে ক্রেস্ট গ্রহণ করেন ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজিবুল হক। শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন এ. বি. এম. মো. আজিজুল ইসলাম।
বণিক বার্তা ও বিআইডিএসের আয়োজনে এটি ষষ্ঠ ‘গুণীজন সংবর্ধনা’। এর আগে ২০১৪ সালে অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ২০১৫ সালে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন ও ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ২০১৭ সালে অধ্যাপক রেহমান সোবহান ও ২০১৯ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান ও আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। ২০২২ সালে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও ট্রাস্টি অধ্যাপক ড. রওনক জাহানকে সংবর্ধনা ও প্রয়াত অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খানকে মরণোত্তর সম্মাননা দিয়েছিল বণিক বার্তা ও বিআইডিএস।
সংবর্ধনার পর নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে এ. বি. এম. মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বণিক বার্তা এবং বিআইডিএস আমাকে সংবর্ধিত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে এর জন্য আমি তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। সংবর্ধনা দেয়ার এ সিদ্ধান্ত উত্তরোত্তর বিনয়ের সঙ্গে আমাকে অভিভূত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বণিক বার্তার একজন নিয়মিত পাঠক, প্রতিদিনই বণিক বার্তা পড়ি। তাদের বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন থেকে আমি উপকৃত হই। আমার নিজের মতামতের সঙ্গে বণিক বার্তার প্রকাশিত মন্তব্যের অনেক ক্ষেত্রে পূর্ণ মিল থাকে। বিআইডিএসের সঙ্গেও আমার সম্পৃক্ততা আছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে থাকাকালে বিআইডিএসের সদস্য ছিলাম। এ দুটো প্রতিষ্ঠান আমাকে সংবর্ধিত করায় তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘স্বীকৃতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বও কিছুটা বেড়ে যায়। দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক ভূমিকা যাতে পালন করতে পারি, তার জন্য সবার কাছ থেকে আশীর্বাদ চাই।’
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান তাকে সম্মাননা জানানোর জন্য বিআইডিএস ও বণিক বার্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠ সহকর্মী অর্থনীতিবিদ এ. বি. এম. মো. আজিজুল ইসলামকেও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘সতীর্থ, সহকর্মী ও বন্ধুদের উপস্থিতিতে আমি আনন্দিত। আমি যাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও পরামর্শে উপকৃত হয়েছি, তাদের ঋণ স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা জানাই।’
অনুষ্ঠানে দেশের অর্থনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার নানা দিক নিয়ে কথা বলেন ড. মসিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যুক্তি ও পরিচালনার লক্ষ্য সমাজের সার্বিক কল্যাণ। রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ সার্বিক সমাজকল্যাণ অর্জনের মাধ্যমে জনগণের সমৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। ন্যায্যতার মৌলিক নীতি হলো আত্মমর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন, অন্যের ক্ষতি না করা এবং সবার প্রাপ্য অধিকার বা সম্পদ নিশ্চিত করা। নাগরিকরা সৎ গুণের অধিকারী ব্যক্তিদের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নির্বাচিত করবেন। আইনে প্রতিষ্ঠিত শান্তি, ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতা; স্বাস্থ্য, জীবন ও সম্পদের সুরক্ষা; অর্থনৈতিক নিরাপত্তা; শাসন ব্যবস্থা ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব ও ক্ষমতা বিন্যাস মৌলিক পণ্যের অন্তর্ভুক্ত।’
গুণীজনদের এ সম্মাননা আয়োজনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘আজকে আমার খুব ঘনিষ্ঠ দুজনকে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে। আমি এতে আনন্দিত। মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম (এ. বি. এম. মো. আজিজুল ইসলাম) শ্যাডো প্রাইসের ওপর কাজ করেছেন। তিনি অত্যন্ত গুণীজন। প্রত্যেকটি বিষয়ের একটি দার্শনিক দিক রয়েছে, যেদিকে ড. মসিউর রহমান আমাদের ধাবিত করেছেন। সবসময় নতুন বইয়ের প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। তার কারণে নতুন নতুন বইয়ের সন্ধান পেতাম। সরকারি কর্মচারীদের নতুন নতুন বই পড়ার বিষয়ে একটি নিদর্শনও তিনি রেখেছেন।’
অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষকতা জীবনের একেবারে শুরুর দিকের ছাত্র ছিলেন আজিজ (এ. বি. এম. মো. আজিজুল ইসলাম)। নিজের কর্মের মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক এবং পেশাগত জীবন পরিপূর্ণ করেছেন। তিনি একাধারে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তার পেশাজীবন ছিল বর্ণিল। অন্যদিকে দেশের অর্থনীতি ও নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে মসিউর রহমানের জ্ঞান ও দক্ষতা। আমি তাদের দুজনকেই অভিনন্দন জানাই।’