বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪১ পূর্বাহ্ন

৯০ বছর বয়সেও হজ গাইডের কাজ করেন আবুল ফায়েজ

ডান হাতে লাঠিতে ভর করে একটু কুঁজু হয়ে হাঁটেন। বয়স প্রায় ৯০ বছর। দীর্ঘকায় সুঠাম দেহ। উনার বয়সী অনেকেই মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন তারাও বার্ধক্য জনিত কারণে চলাফেরা করতে পারেন না। কিন্তু তিনি এই বয়সেও শারীরিকভাবে অনেকটা সুস্থ্য। এ বয়সের মানুষের নাতি-নাতনি নিয়ে খেলাধুলা আর ইবাদত বন্দেগী করে সময় কাটে। কিন্তু অশীতিপর এই বৃদ্ধ আরাম আয়েশের চিন্তা করেন না। তিনি হজ¦ গাইড (মুয়াল্লিম) হিসেবে হাজীদেরকে নিয়ে যান মক্কা-মদিনা। হজ¦ পালনে সহযোগিতা করেন। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিরামহীনভাবে তিনি এ কাজটি করছেন। তবে তিনি টাকার জন্য নয়, মানুষের দোয়া আর আল্লাহর রহমত পাওয়ার আশায় এ কাজ করেন। এই পরিশ্রমি মানুষটি হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরশহরের দেবগ্রামের বাসিন্দা আলহাজ¦ আবুল ফায়েজ।

আলহাজ¦ আবুল ফায়েজের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে যাই। সেখানে ২৩ বছর গাড়ি চালিয়েছি। ১৯৯৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। তারপর আরবি বলতে পারতেন বিধায় স্থানীয় এক ট্রাভেল এজেন্সির মালিকের পরামর্শে হজ¦যাত্রীদের গাইড হিসেবে কাজ শুরু করেন। এভাবেই তিনি এ পেশায় জড়িয়ে পড়েন। প্রতি বছর হজে¦র সময় এবং ওমরাহ হজ¦ যাত্রী নিয়ে যান। এ পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি মানুষকে হজ¦ পালনে গাইড হিসেবে সহযোগিতা করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে কাজ করেন।

আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জানিয়ে এই বৃদ্ধ বলেন, আল্লাহ তাকে অনেক সম্পদ দিয়েছেন। তার তিন ছেলে, চার মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ২ ছেলে সাইথ আফ্রিকা থাকে। এক ছেলে দেশে আছে। ছেলে মেয়েরা তাকে বারণ করে ঝক্কি ঝামেলার কাজ না করার জন্য। কিন্তু তিনি তাদের কথা শুনেন না। তিনি বলেন, এ কাজটা করে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। বিদেশ যাওয়া-আসা করতে আমার কষ্ট হয় না। আমি মানুষের খেদমতের উদ্দেশ্যে করি। টাকার জন্য করি না।

হজ¦যাত্রী সংগ্রহের বিষয়ে আবুল ফায়েজ বলেন, পৌরশহরের সড়ক বাজারে তার একটি অফিস আছে। তিন জনে মিলে অফিসটি খুলেছেন। অফিসের এসে আগ্রহীরা যোগাযোগ করে। তাছাড়া পরিচিত লোকজনে মাধ্যমে খবর পাই কোন এলাকার কে হজে¦ যেতে চায় তখন তাদের সাথে যোগাযোগ করি। যারা একবার যায় তারাও আমাকে সহযোগিতা করে। তিনি আরও বলেন, আমার কোন রোগ শোক নাই। পায়ে একটু ব্যাথা আছে। চোখে পরিষ্কার দেখি, কানে শুনি। হাঁটাহাটি করাতে আমার শরীরটা ভালো আছে। মসজিদে গিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি।

আবুল ফায়েজ বলেন, মক্কা মদিনা সব সময় আমার চোখে ভাসে। আমি হজ¦ করেছি। বদল হজ¦ করেছি ৩০/৩২ বার। ওমরা হজ্ব করেছি বহুবার। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন মক্কা মদিনায় আমার মউত (মৃত্যু) করে। জানতে চাইলে হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ সামছুল আলম বলেন, আমি ২০০৬ সালে আবুল ফায়েজের মাধ্যমে ওমরাহ হজ¦ পালন করেছি। আল্লহামদুল্লিাহ ভালো সেবা পেয়েছি। কোন সমস্যা হয়নি।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে দেবগ্রাম জামিয়া মাজহারুল হক উলুম মাদ্রসার প্রিন্সিপাল মুফতি আস্য়াদুজ্জামান বলেন, উনি যদি সৎভাবে এ কাজ করেন তাহলে ছওয়াব পাবেন। মানুষকে যেরকম সেবা দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যান, কথা-কাজে যদি মিল থাকে তাহলে ব্যবসা করলেও ছওয়াব পাবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com