বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৮ অপরাহ্ন

কারখানা পণ্যের বৈশ্বিক মজুদ চার বছরে ৩০% বেড়েছে

বিশ্বব্যাপী বড় কারখানাগুলো মহামারী চলাকালে পণ্যের যে মজুদ (ইনভেন্টরি) তৈরি করেছিল, সেগুলো বিক্রি করতে কঠিন লড়াই করছে। এমনকি সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পরও দুর্বল অর্থনীতির কারণে পণ্যের চাহিদা কমে গেছে।

কুইক-ফ্যাক্টসেটের তথ্যানুসারে, ৪ হাজার ৩৫৩টি কোম্পানির মোট মজুদ সেপ্টেম্বরের শেষে ২ দশমিক ১২ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের ছিল। এটা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কোভিড-পূর্ব স্তর থেকে ২৮ শতাংশ বেশি।

২০২৩ সালের মার্চে ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের পরিসংখ্যানটি ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল এবং অতিরিক্ত মজুদ কমানোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সেপ্টেম্বরে ২ শতাংশ বেড়েছে।

ইনভেন্টরি হলো অর্থনৈতিক কার্যক্রমের একটি প্রধান সূচক। মজুদের ধীর গতি মহামারী-পরবর্তী বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে হুমকিতে ফেলেছে।

জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের হিসাব অনুযায়ী, কোম্পানিগুলো মজুদের মাধ্যমে পরিচালনা করার জন্য ৮৭ দশমিক ২ দিন প্রয়োজন। ২০২০ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিক বাদ দিলে গত এক দশকে এটা সর্বোচ্চ। ওই সময় মহামারীর কারণে বিক্রয় হ্রাস পেয়েছিল। বিশেষ করে দীর্ঘ টার্নওভারের সময় ১০ বছরে সর্বোচ্চ ১১২ দিন ও ১৪০ দিন চালানোর মতো ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম মজুদ ছিল। ৪০ দিন চলার মতো ৭০ শতাংশের বেশি কারখানা গত ত্রৈমাসিকে (এক বছরের আগের তুলনায়) শক্তিশালী অবস্থানে ছিল।

চীনে কম বিক্রি অনেক কোম্পানিকে লোকসানে ফেলে দিয়েছে।

জাপানি রোবট নির্মাতা ফানুক উল্লেখ করেছে যে কারখানার স্বয়ংক্রিয় সরঞ্জামগুলোর জন্য মজুদ সমন্বয় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় নিচ্ছে। চীনে মূলধন ব্যয় এখনো গতি পায়নি। এয়ার কন্ডিশনার নির্মাতা ডাইকিন ইন্ডাস্ট্রিজ জানায় যে রিয়েল এস্টেট খাতে কঠিন পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী ব্যবসা কঠিন করে তুলেছে।

ইউরোপের অর্থনীতিও স্থবির হয়ে আছে। সুইডিশ শিল্প যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক স্যান্ডভিকের মতো সংস্থাগুলো সংকুচিত হচ্ছে। স্যান্ডভিক জানায়, মজুদ সামঞ্জস্য পর্যায়ে আনতে আরো কত সময় লাগবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

জাপানি নির্মাণ সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোমাতসু জানায় যে ইউরোপীয় পরিবেশকদের কাছে তার কোম্পানির মজুদ বেশি। কারণ সেখানে অর্ডার কমে গেছে।

উত্তর আমেরিকায় অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। জাপানের মিতসুবিশি ইলেকট্রিকের এয়ার কন্ডিশনার ও অ্যাপ্লায়েন্স সেগমেন্টের বিক্রি কমে গেছে। কারণ পরিবেশকদের কাছে পণ্য মজুদ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কামিনস পরিবেশক পর্যায়ে উচ্চ মজুদের কারণে নির্মাণসরঞ্জাম ইঞ্জিন বিক্রিতে ভাটা পড়েছে।

বিশ্বব্যাপী মজুদ পণ্য নগদ লেনদেনের ওপর চাপ তৈরি করে রেখেছে। তুলনামূলক ডেটা অনুসারে, ৪ হাজার ৭৬টি কোম্পানির সর্বশেষ বার্ষিক নিট মুনাফা ৯৪ হাজার ৫৯০ কোটি ডলার। এটা কভিড-পূর্ব স্তরের চেয়ে ৪২ শতাংশ বেশি। কিন্তু নগদ অর্থ লেনদেন ধীর হওয়ায় এটা মাত্র ২৪ শতাংশ বেড়েছে, যা ১ দশমিক ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার হয়েছে। উচ্চ মজুদ এ সংখ্যাকে ২৫ হাজার কোটি ডলার কমিয়ে দিয়েছে।

বৈশ্বিক কারখানার মজুদ কতদিন বেশি থাকবে, তা আপাতত বলা যাচ্ছে না। চীন সরকারের প্রণোদনা ব্যবস্থার প্রভাব এখনো দেখা যাচ্ছে না। পাশাপাশি মার্কিন ভোক্তা ব্যয়ের মন্দাও লক্ষ্যণীয়।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com