বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩১ অপরাহ্ন
নব্বই দশকের তুমুল আলোচিত গায়িকা ডলি সায়ন্তনী। একটা সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্ম নেওয়া ডলি সায়ন্তনীর মাও ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী। বড় ভাই বাদশাহ বুলবুলও একজন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী। ছোট বোন পলি সায়ন্তনীও গানের সঙ্গে জড়িত। নিজের তিন মেয়ে কথা, রিমঝিম ও ফাইজাকেও তৈরি করেছেন গানের শিল্পী হিসেবে। একটা সময় ছিল যখন ডলি সায়ন্তনী ঘুম ছেড়েই ছুটতেন স্টুডিওতে।
আধুনিক ও লোকজ ধারার গানে দারুণ শ্রোতাপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কখনো প্লে-ব্যাক, কখনো সলো অ্যালবাম আবার কখনোবা মিক্সড অ্যালবামের গানে ব্যস্ত সময় পার করতেন। সময়ের স্রোতে পরবর্তী সময়ে তার সেই নিয়মিত চিত্রটা একেবারে উল্টে যায়। দীর্ঘদিন ধরেই নব্বই দশকের আলোচিত এই সঙ্গীত তারকা পাদপ্রদীপের আলো থেকে দূরে সরে আছেন। না মঞ্চে, না টিভিতে, না প্লে-ব্যাকে কোথাওই তাকে সেই আগের মতো সচলরূপে দেখা যাচ্ছে না।
এখন প্রায় আলোচনার বাইরে চলে যাওয়া এমন একজন সঙ্গীত তারকা আবার ফিরে এসেছেন আলোচনায়। তবে এবার যেরূপে আলোচনায় এসেছেন সেটা তার চিরচেনা জগতের শোবিজের আলোচনায় নয়। আলোচনায় এসেছেন এবার তিনি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। তার চিরচেনা স্বভাবসুলভ গানের মঞ্চ ছেড়ে এবার উঠেছেন অন্য মঞ্চে। সুরের সম্পূর্ণ বিপরীতে রগরগে বাক্যশেলের রাজনীতির মঞ্চে। যে মঞ্চের রাজনীতিতে খোদ রাজনৈতিক দলগুলোই নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন তখন আচমকাই সম্প্রতি ১০ আগস্ট নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হওয়া একটি রাজনৈতিক দলে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন তিনি এবং সেইসঙ্গে দলটির ‘নোঙর’ প্রতীকে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও শোবিজ মহলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাও আবার কোনো ডাক সাইটে রাজনৈতিক দলের হয়ে নয়। একেবারেই অপরিচিত একটি নতুন রাজনৈতিক দলের হয়ে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেখা গেছে ৩ ডিসেম্বর রোববার পাবনার রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বাতিল করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) নামের একটি রাজনৈতিক দল থেকে নেওয়া তার এই মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। খবরটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য ডলি সায়ন্তনী তার এই মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
আত্মপক্ষ নিয়ে তার এই দৃঢ়তা থেকেই আন্দাজ করা যাচ্ছে এবারের নির্বাচনকে তিনি অত্যন্ত সিরিয়াসলিই নিয়েছেন এবং তিনিও অন্য সব শোবিজ তারকার মতোই রাজনীতিতে সক্রিয় হতে যাচ্ছেন সেটাও বোঝা গেল তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।
সঙ্গীত তারকাদের মধ্যে এর আগে ফোক সম্রাজ্ঞীখ্যাত মমতাজ তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ডলি সায়ন্তনীও সেই পথে হাঁটতে যাচ্ছেন। তবে তিনি যে অপরিচিত রাজনৈতিক দলের হাল ধরেছেন সেরকম প্রতিকূল পরিবেশে থেকে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কতটা সামনে নিয়ে যেতে পারবেন সেটা সময়ই বলে দেবে।
কিন্তু হঠাৎ এমন অতর্কিতে একটি নতুন রাজনৈতিক দলে কেন যোগদান করলেন এবং নির্বাচনেও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন এমন প্রশ্নে ডলি সায়ন্তনী বলেন, ‘পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়া) আসনটি আমার দাদারবাড়ি। দীর্ঘদিন ধরে একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে জনগণের যে ভালোবাসা পেয়েছি সেই ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে এখন প্রথমে নিজ এলাকার জন্য কিছু করতে চাই এবং তারপরে দেশের হয়ে কাজ করতে চাই। এই ইচ্ছা থেকেই এবার প্রথমবারের মতো কোনো একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিলাম।’
কিন্তু নিজ এলাকার জন্য যদি কাজ করবেনই তাহলে তিনি ক্ষমতাসীন দলের বাইরের এমন একটি অপরিচিত রাজনৈতিক দলের হয়ে কেন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলেন, যেখান থেকে নির্বাচিত হলেও ক্ষমতাসীন দলের বাইরে থেকে নিজ এলাকার জন্য কতটা কী করতে পারবেন সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়? ডলির এই সিদ্ধান্তটিও যে ভেবেচিন্তে নিয়েছেন তাও নয়। কারণ, এ সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেন, ‘আমি বেশ কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলাম। সম্প্রতি দেশে আসার পরপরই বিএনএম থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের পক্ষ থেকে আমাকে ভালো অফার করা হয়েছিল। আমাদের শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই তো রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। ভেবে দেখলাম, একটা ভালো অফার যখন বিএনএম আমাকে দিয়েছে, তাহলে কেন নয়? তারপর তাদের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। তখনই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করি। যেহেতু আমার সঙ্গে অন্য কোনো বড় রাজনৈতিক দল যোগাযোগ করেনি তাই অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে মনোনয়ন ফরম নেইনি। বিএনএম থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে তাই তাদের হয়ে নির্বাচন করছি।’
কিন্তু একটি অপ্রতিষ্ঠিত ও অপরিচিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে তিনি কতটা আশাবাদী এমন প্রশ্নে ডলি সায়ন্তনী বলেন, ‘যদি আপিলে আমার মনোনয়ন ফিরে পাই তাহলে আমার জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। কারণ, পাবনা-২ আমার দাদারবাড়ির এলাকা। সেখানে আমার সব আত্মীয়স্বজন আছেন। আর এলাকার সঙ্গে আমার সম্পর্ক আগে থেকেই খুবই ভালো। শিল্পী হিসেবে জনগণের ভালোবাসা তো পেয়েছিই। আশা করি, আমার প্রতি জনগণের ভালোবাসা সেই ভোটের মধ্য দিয়েও প্রতিফলিত হবে। তবে নির্বাচনটা অবশ্যই ফেয়ার হতে হবে। ফেয়ার ইলেকশন হলে আমি নির্বাচিত হব এ ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত।’ এখন রাজনৈতিক প্রভাবে তার গানের ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা এমন প্রশ্নে ডলি সায়ন্তনী বলেন, ‘নির্বাচন শেষে আবার আমি গানে সক্রিয় হব।’
তবে বাংলাদেশের শোবিজে দেখা গেছে যিনিই একবার কোনো রাজনীতিতে জড়িয়েছেন এবং তাতে যদি তিনি ব্যস্ত হয়ে উঠেন তখন তাকে খুব কমই শিল্প-সংস্কৃতিতে খুঁজে পাওয়া যায়। অন্যদিকে, ডলি সায়ন্তনী যে ধারার গান করে শ্রোতাপ্রিয় হয়ে উঠেছেন সে ধারার গান থেকেও বাংলা গান অনেকখানি দূরে সরে এসেছে। যে কারণে এখন তাকে আগের মতো প্লে-ব্যাকেও খুঁজে পাওয়া যায় না। প্লে-ব্যাকে এখন নতুনদেরই জয়জয়কার পরিস্থিতি চলছে। আর অডিও বাজার তো কবেই মরে গেছে। সবেধন নীলমনি এখন ডলি সায়ন্তনী নিজের ইউটিউব চ্যানেলেই মোটামুটি সক্রিয় আছেন। তার মানে হয়ত রাজনীতি আর ইউটিউব চ্যানেলই সম্ভবত ডলি সায়ন্তনীর আগামী ব্যস্ত দিনের ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।