শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন

ওটিটির এই জোয়ার এক সময় থাকবে না : আবুল হায়াত

আবুল হায়াত, পেশাগতভাবে প্রকৌশলী হলেও এরচেয়েও বড় পরিচয় তিনি মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের বরেণ্য এক অভিনেতা। এমন কোনো চরিত্র নেই যেখানে তিনি অভিনয় করেননি। অসাধারণ এ অভিনেতার কাছে অভিনয় হচ্ছে জাদুবাস্তব জাতীয় কিছু। অভিনয়ের পাশাপাশি অসংখ্য নাটক পরিচালনা করেও সফলতা অর্জন করেন এই খ্যাতিমান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।

নাটকের চলমান ব্যস্ততা কাজ কেমন? মূলত বেশ কয়েক বছর ধরেই নাটকে অভিনয় কম করছি। সর্বশেষ মঙ্গলবার আসন্ন বিজয় দিবস উপলক্ষে অরুণ চৌধুরীর একটা নাটকে শুটিং করলাম। এছাড়া আরও কয়টি প্রস্তাব আছে। নতুন স্ক্রিপ্টও আসছে। সেগুলো নিয়ে যাচাই-বাছাইও চলছে।

এর মধ্যে নতুন কোনো চলচ্চিত্রে কাজ করছেন? কিছুদিন আগেও তো আমার একটা সিনেমা মুক্তি পেল। অরুণা বিশ্বাসের ‘অসম্ভব’। এ ছাড়া সরকারি অনুদানে নির্মিত বদিউল আলম খোকনের ‘দায়মুক্তি’ নামের একটা সিনেমাতে কাজ করলাম। সেটা এখন মুক্তির অপেক্ষায় আছে। সিনেমা তো টুকটাক করছিই।

সিনেমা ভালো হলেও দর্শক দেখছেন না কেন?

ভালো সিনেমা হলে তো দর্শক দেখছেন। তারা তো সব সময়েই উৎসাহী হয়ে থাকেন ভালো সিনেমা দেখার জন্য। কিন্তু আমরা ভালোটা দিতে পারি না বলে সেটা একটা নেগেটিভ সাইড হয়ে থাকবে। দর্শক তো ভালো ভালো বাণিজ্যিক সিনেমা দেখতে চান।

নতুনরা কি সিনিয়রদের জন্য বিশেষ চরিত্র সৃষ্টি করতে পারছেন? আমি বলব, বর্তমানে পারছেন না। কেন পারছেন না, জানি না। তাদের ধারণা, সিনিয়র আর্টিস্টদের দর্শক দেখতে চান না। প্রযোজকরা বলেন যে, সিনিয়রদের লাইক নাই, ভিউ নেই, এদেরকে নেবেন না- এরকম একটা খবর আমরা শুনি। তাই সিনিয়রদের নিয়ে তারা লেখেও না।

আপনারা তো লাইক নিয়ে পড়েও থাকেন না। আমাদের তো এখন আর নতুন কিছু পাওয়ার নেই (হাসি)। যা পাওয়ার তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছি। প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছি। আমার বাবা সব সময় বলতেন, চাইবা কম পাইবা বেশি। এজন্য সব সময় আমি কম চেয়েছি, কিন্তু পেয়েছি বেশি (হাসি)।

অনেকেই বলেন তরুণরা সিনিয়রদের নির্দেশনা দিতে সঙ্কোচবোধ করেন। আমি জানি না। তবে নতুন পরিচালকদেন কেউ কেউ মনে করেন সিনিয়র শিল্পীরা তাদের কথা শুনতে চাইবেন না। তারা যদি ভয় পান তো সেটা আলাদা ব্যাপার। তাদের তো এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তারা তো ডিরেক্টর। অনেক সময় ডিরেক্টররা মনে করেন, এই চরিত্রে ওই চরিত্রে তাকে মানাবে না- এ রকম চিন্তা করে। কিন্তু এটা তো ঠিক না। তবে একজন অভিনয় শিল্পীকে সব ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করতে পারা উচিত। তবে অনেক সময় ডিরেক্টররা মনে করে এই চরিত্র তাকে দিয়ে হবে না, ওকে দিয়ে হবে না। প্যাকেজ সিস্টেম হওয়ার পর থেকে এই সমস্যা তো আছেই।

দর্শকের কাছে তো এখনও অনেক চাহিদা আছে আপনার।

সেটা তো আমার চেয়ে আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে এখনও মানুষের যে ভালোবাসা পাই সেটা বলতে পারি। এ তো ধারণার চাইতেও অনেক বেশি। যেখানেই যাই সেখানেই মানুষের ভালোবাসা পাই। এর চেয়ে বড় পুরস্কার তো জীবনে কিছু হতে পারে না।

আপনার চরিত্রগুলোও তো মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার মতোই!

(হাসি) হ্যাঁ, আমার জীবনে তো এমন কোনো চরিত্র বাদ রাখিনি যে চরিত্রে আমি অভিনয় করিনি। মানে, এমন কোনো চরিত্র নেই যে, যেটা আমি করিনি। আছে হয়তো এমন কিছু চরিত্র যেগুলো আমার করা হয়নি। হয়তো এসেও যাবে হঠাৎ করে তেমন কোনো চরিত্র। তবে মোটামুটিভাবে আমি অনেক ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোনো স্ক্রিপ্টে কাজ করেন? না, না- নাটক তো সব রকমই হচ্ছে। আগেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। আগেও ভালো-মন্দ হয়েছে, এখনও হচ্ছে। আমি সব ধরনের নাটকেই অভিনয় করি। আগে যখন খুব ব্যস্ত থাকতাম তখন হয়তো সব খেয়াল করতাম না। এখন সেভাবে প্রফেশনাল কাজ করব না। বরং কঠিন চরিত্র পেলেই বেশি খুশি হই। তা ছাড়া ডিরেক্টররা আমাকে প্রয়োজন মনে করেন কিনা- সেটারও ব্যাপার আছে। এই পছন্দের ব্যাপারটি তো একতরফা ইচ্ছেতেও হয় না।

আপনার অভিনয়ে তো স্বভাবসুলভ মৃদু হাস্যরসও থাকে! কমেডি শেক্সপিয়ার, রবীন্দ্রনাথও করেছেন। আমরাও কমেডি করেছি। টেলিভিশনে কমেডি করেছি। স্টেজে কমেডি করেছি। তবে একেবারে গায়ে গুঁতো দিয়ে কাতুকুতু দেওয়া কমেডি হয়তো আমরা করি না। অন্তত আমি করি না। কমেডিতে তো আলাদা একটা চার্ম, মাধুর্য ও সৌন্দর্য আছে। কিন্তু এখন কমেডি বলতে যেটা হয় জোর করে কাতুকুতু দিয়ে কমেডি করানো- এরকম কাতুকুতুর হাসানো নাটক আমি করি না।

ওটিটির কন্টেন্টগুলো কেমন মনে করেন। আমি ওটিটিতে কাজ করিনি। এ সম্পর্কে আমার বাস্তব ধারণা নেই। তবে যা শুনি- ওদের কাজ ভালো। ভালো লোকেশনে কাজ হয়। আর্টিস্টরা, লেখকরা ভালো পেমেন্ট পায়। যেহেতু ভালো বাজেট- কাজ তো ভালো হবেই। আমি এটা ইতিবাচক হিসেবেই দেখি। তবে ওটিটিতে সব ধরনের কাজ হয় না; হরর, থ্রিলারই বেশি হচ্ছে। তবে এই ট্রেন্ড এক সময় থাকবে না।

ক্যারিয়ারে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে কিছু ভাবেন? আল্লাহর রহমতে আমি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে, পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে অনেক ভালো আছি। নিজেকে সব সময় সুখী মানুষ মনে করি। মানুষের ভালোবাসায় প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হই। যে জীবন আমি কাটিয়েছি, সে জীবন নিয়ে আমি তৃপ্ত। আমার কোনো আফসোস নেই।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com