রবিবার, ১৫ Jun ২০২৫, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘ম্যানেজ’ নয় বরং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের যুক্তরাষ্ট্র “ম্যানেজ” হয়ে যাওয়ার বক্তব্য ডাহা মিথ্যা এবং এটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা এটিকে “ডিপ ফেক নিউজ” বলে অভিহিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ম্যানেজ নয় বরং তারা গণহারে বিরোধীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।’ ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী মন্ত্রীরা ৭ জানুয়ারি আরেকটি জালিয়াতির নির্বাচন করার জন্য বিরোধী দলকে নিষ্ঠুর দমনের পাশাপাশি দেশে-বিদেশে নির্লজ্জ মিথ্যাচারে নিজেদের লিপ্ত রেখেছে। কারচুপির নির্বাচন কণ্টকমুক্ত করতে মন্ত্রীরা দেশে-বিদেশে নিজেদের মানসম্মান খুইয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রীদ্বয়ের বক্তব্য কূটনৈতিক আচরণের ইতিহাসে বড় ধরনের কেলেঙ্কারি। অর্থবিত্ত, টাকা পাচার, অঢেল সম্পত্তির মালিক, গার্ড অব অনার, নিরাপত্তা বেষ্টনীর মায়া ভুলতে পারছেন না বলেই মিথ্যা, বানোয়াট ও নৈতিক অনাচারমূলক বক্তব্য দিতে বিবেকের অনুতাপ বোধ করেন না প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা ধরে রাখতে বেপরোয়া ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্রকামী মানুষের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। নয়াপল্টনের ত্রিসীমায় যেতে পারেন না আমাদের নেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়েও নজরদারি রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বুধবার গভীর রাতে পুলিশ গুলশানের কার্যালয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে প্রবেশ বা তল্লাশি করতে গেলে অনুমতি নেয়ার নিয়ম রয়েছে। পুলিশ সেখানে হানা দিয়ে কক্ষে কক্ষে তল্লাশি চালিয়েছে।’
অফিসে গেলে গ্রেফতারের হুমকি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য সেখানে রাখা পুষ্পস্তবকসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু নিয়ে গেছে পুলিশ। আবার হুমকিও দিয়েছে কেউ অফিসে গেলে গ্রেফতার করবে। বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে বাধার সৃষ্টি এবং মহান বিজয় দিবসের বিজয় র্যালি করার অনুমতি দিতেও তারা টালবাহানা করছে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত ক্ষণে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করেও মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ঠেকানো যায়নি, বর্তমান সরকার গুম, খুন ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে পাতানো প্রহসনের নির্বাচনের পাঁয়তারা করলেও নিজেদের পতন ঠেকাতে পারবে না। পাকিস্তানি হানাদাররা যখন দেখল তাদের পরাজয় অবধারিত তখন তারা কাপুরুষোচিত কায়দায় রাতের অন্ধকারে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে আমাদের মনোবল ভেঙে দিতে চেয়েছিল। সেদিনকার বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড বাংলার মানুষকে আরো বেশি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল। একই পদ্ধতিতে গুম, খুন, গ্রেফতার ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে দমন করতে চায় সরকার। তারা মনে করেছে তাদের দুর্নীতি, লুটপাট ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সব আওয়াজকে তারা থামিয়ে দেবে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ সরকারের উৎপীড়ন-দুঃশাসন-জুলুম-নিপীড়ন-বাজার সিন্ডিকেটের করাল থাবায় অশান্তিতে জীবনযাপন করছে। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে, আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা এদের মনের মধ্যে আসে না।’
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এরা শুধুই ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করছেন। কারণ শেখ হাসিনার সরকারই শেষ সরকার নয়। আজ হোক কাল হোক বিদায় তাদের অনিবার্য পরিণতি। আজ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের শত্রুতে পরিণত করা হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের জেলে পুরে, ভিটেমাটি-ঘরবাড়ি ছাড়া করে তাড়িয়ে পোড়ামাটি নীতির বাস্তবায়ন প্রকল্পে এসব প্রাতিষ্ঠানিক কর্তাব্যক্তিরা সহযোগিতা করছেন। গোটা দেশকেই এখন বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর জন্য এক শ্বাসরুদ্ধকর কারাগারে পরিণত করা হয়েছে।’
জনগণকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘দেশের ১৮ কোটি মানুষ ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আওয়ামী ডামি, আওয়ামী স্বতন্ত্র, আওয়ামী নৌকা, মনোনীত নৌকা, অনুমতিক্রমে স্বতন্ত্র, বিদ্রোহী নৌকা, আওয়ামী জোট, আওয়ামী পার্টির এক অদ্ভুত কিম্ভূতকিমাকার নির্বাচনের আয়োজন চলছে। এক ক্লাবের খেলা! খেলোয়াড়ও একই দলের। যেটা লাউ সেটাই কদু। নিজেরাই নিজেদের বিরোধী দল! ভোটারদের কাছে আহ্বান জবরদস্তি করলেও ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। ভোট বর্জন করুন। এ ভোটরঙ্গ রুখে দিন।’