শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন
হাই-এন্ড বা উন্নতমানের চিপ তৈরিতে বিভিন্ন অংশ অ্যাসেম্বল বা যুক্ত করতে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কাজ করবে চীন। দেশটিতে প্রযুক্তি পণ্য, যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তি সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বাড়তে পারে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এ কারণে চীনের সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইনকারী কোম্পানিগুলো এ উদ্যোগ নিয়েছে। খবর রয়টার্স।
বিভিন্ন সূত্রের তথ্যানুযায়ী, চীনের কোম্পানিগুলো মালয়েশিয়ার বিভিন্ন চিপ প্যাকেজিং কোম্পানিকে জিপিইউ (গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট) অ্যাসেম্বল বা যন্ত্রাংশ যুক্ত করার অনুরোধ জানাচ্ছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, এর মাধ্যমে চিপ অ্যাসেম্বলির বিষয়েই জোর দেয়া হয়েছে, যা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন নয়। এ বিষয়ে অবগত সূত্রের তথ্যানুযায়ী, কয়েকটি কোম্পানি এরই মধ্যে চুক্তিও সম্পন্ন করেছে। চুক্তির গোপনীয়তা রক্ষার অংশ হিসেবে কোম্পানিগুলোর নাম জানা যায়নি।
কম্পিউটারের জন্য জিপিইউ গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। চীনে এ পণ্যের সরবরাহ বন্ধে চিপ বিক্রি এমনকি চিপ তৈরির সরঞ্জামের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওয়াশিংটন। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে চীন বেশকিছু করতে পারে। এর মাধ্যমে নিজস্ব সুপার কম্পিউটার তৈরি সম্ভব। এছাড়া সামরিক খাতেও এ ধরনের চিপ ব্যবহার নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলেও মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র।
চীনের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি দেশটিতে এআই চিপের চাহিদাও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে পর্যাপ্ত উন্নতমানের প্যাকেজিং সেবা দিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তুলনামূলক ছোট চীনা সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলোকে। দুটি সূত্রের তথ্যানুযায়ী, কিছু চীনা কোম্পানি উন্নত চিপ প্যাকেজিং পরিষেবা দিতে আগ্রহী। এ ধরনের প্যাকেজিং ব্যবস্থা চিপের পারফরম্যান্সে বড় উন্নতি সাধনের পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ চেইনের অন্যতম মূল হাব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে মালয়েশিয়া। এছাড়া চীনা কোম্পানিগুলো নিজেদের অ্যাসেম্বলিং ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে চীনের বাইরে নজর দেয়ায়, দেশটিতে ব্যবসা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র বলেছে, এরই মধ্যে চীনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও ব্যবসা বাড়াচ্ছে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন চিপ প্যাকেজিং কোম্পানিকে। এর মধ্যে ইউনিসেমও রয়েছে। যাদের সিংহভাগ মালিকানাই চীনা কোম্পানি হুয়াতিয়ান টেকনোলজির কাছে। কোম্পানির চীনা গ্রাহকদের সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি ইউনিসেমের চেয়ারম্যান জন চিয়া।
মালয়েশিয়ার সঙ্গে চীনের সুসম্পর্ক থাকায় দেশটিকে ভালো ও সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবেও দেখছে চীনা চিপ ডিজাইনার কোম্পানিগুলো। দেশটির অভিজ্ঞ কর্মশক্তি ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এর প্রধান কারণ।
চীনা কোম্পানিগুলোর চিপ সমন্বয় করার অর্ডার গ্রহণের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার ঝুঁকি আছে কিনা সে সম্পর্কে চিয়া বলেন, ইউনিসেমের ব্যবসায়িক চুক্তিগুলো পুরোপুরি বৈধ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর এ ধরনের ঝুঁকি সম্পর্কে কোম্পানির ভাবার সময় নেই।’
সেমিকন্ডাক্টর প্যাকেজিং, অ্যাসেম্বলি ও পরীক্ষার বৈশ্বিক বাজারে বর্তমানে ১৩ শতাংশ অবদান রাখছে মালয়েশিয়া। এছাড়া ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যাকে ১৫ শতাংশে নেয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে দেশটি।
যেসব চীনা কোম্পানি মালয়েশিয়ায় ব্যবসা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে একসময় হুয়াওয়ের ইউনিট হিসেবে কাজ করা কোম্পানি এক্সফিউশন। কোম্পানিটি বলেছে, জিপিইউ সার্ভার তৈরির জন্য তারা মালয়েশিয়ান কোম্পানি ন্যাশনালগেটের সঙ্গে জোট তৈরি করবে।
অন্যদিকে মালয়েশিয়ার পেনাং অঙ্গরাজ্যে নতুন ডিজাইন সেন্টার নির্মাণ করছে সাংহাইভিত্তিক কোম্পানি স্টারফাইভ। গত বছর চীনভিত্তিক চিপ প্যাকেজিং কোম্পানি টংফু মাইক্রোইলেকট্রনিকস বলেছিল, মার্কিন চিপ নির্মাতা এএমডির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তারা মালয়েশিয়ায় একটি কারখানা স্থাপন করবে।