বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:১০ অপরাহ্ন
জাহাজে পণ্য পরিবহনের জন্য বরাদ্দপত্র দেয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে জাহাজ মালিকদের সংগঠন ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাং (আইভোয়াক)। সংস্থাটির প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। তবে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরু করা এ সংগঠনের কার্যক্রমকে অপরাধ আখ্যা দিয়েছে দুই দশক আগে থেকে জাহাজ পরিচালনাকারী বেসরকারি সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি)। অবশ্য বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, একাধিক সংস্থার অধীনে জাহাজ পরিচালনার কাজ শুরু হওয়ায় আমদানি পণ্য পরিবহনে প্রতিযোগিতামূলক আবহ তৈরি হবে। ফলে এতে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।
আইভোয়াকের মুখপাত্র পারভেজ আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমদানিকারকের প্রতিনিধিদের চাহিদা অনুযায়ী নিয়মিত জাহাজ বরাদ্দ দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারা দেশে নদীপথে বছরে যে পণ্য পরিবহন হয় তা ছয় কোটি টনেরও বেশি। আমাদের কার্যক্রমের ফলে এখন থেকে আমদানিকারকের কাছে চয়েস থাকবে।’
এদিকে গতকাল ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের কনভেনার মো. নূরুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জাহাজ মালিকদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘একটি স্বার্থান্বেষী অর্থলিপ্সু মহল জাহাজ মালিকদের বেশি ট্রিপের প্রলোভন দেখিয়ে সুন্দর সুশৃঙ্খল এ সেক্টরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সিরিয়ালবিহীনভাবে জাহাজের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করছে। ক্রমাগতভাবে তারা এ পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করে চলেছি। সে মোতাবেক বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্টও বসানো হয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে জাহাজ মালিকদের কারো প্ররোচনায় না পড়ে নিয়ম মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানানো হয়। ডব্লিউটিসির ছাড়পত্র ছাড়া কোনো জাহাজে পণ্য লোড বা পরিবহন করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। বলা হয়, এ আদেশ অমান্য করে সিরিয়ালবিহীন পণ্য পরিবহনকৃত কোনো জাহাজ চেকপোস্টের নজরে এলে ওই জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠানের সংগঠনের সদস্যপদ বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মো. নূরুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আইভোয়াক নামে নতুন নাম দিয়ে জাহাজ পরিচালনায় যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে এটা অন্যায়, অপরাধ। এভাবে হয় না। গায়ের জোরে করেছে, ঠিকও হয়ে যাবে। কারণ সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে।’
আইভোয়াকে যারা আছে তাদের কাছ থেকে ডব্লিউটিসি অনেক টাকা পায় বলেও দাবি করেন তিনি। মো. নূরুল হক বলেন, ‘কোনো এজেন্ট পণ্য লোড করতে যেতে বললে জাহাজ মালিকদের ছাড়পত্র আছে কিনা, সেটি ডব্লিউটিসির দপ্তরে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হতে এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি।’ তবে এমন নির্দেশনাকে অনৈতিক উল্লেখ করে অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো ঘটনার বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আইভোয়াক।
অভ্যন্তরীণ নৌপথে প্রায় শতাধিক জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সমতা শিপিংয়ের স্বত্বাধিকারী ও আইভোয়াকের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে দেয়া নির্দেশনাটি আমাদের নজরে এসেছে। মনগড়াভাবে এভাবে তারা লিখতে পারে না। আমরা যে কার্যক্রম শুরু করেছি সেটি চালিয়ে নেব। আমাদের এ সংগঠনও ২০ বছরের বেশি পুরনো। কথায় কথায় জাহাজ বন্ধ করে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বন্দরের কার্যক্রমে আর বিঘ্ন ঘটতে দেয়া হবে না।’ ডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে টাকা পাওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে সেটিও সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।
প্রিমিয়ার সিমেন্ট পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আলাদা করে দুটি সংস্থার পরিচালনার কারণে এখন পণ্য পরিবহন খাতে প্রতিযোগিতা তৈরি হলো। এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।’