বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫৬ অপরাহ্ন

বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকছে না তামিম

আসছে বছরে বিসিবির নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকতে চান না সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। অনেকদিন ধরে খেলার বাইরে থাকা এই ওপেনার বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যানকে নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায় তামিমের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়ে গেল।

বিসিবি কর্মকর্তারা মনে করছেন, কিছু শর্ত কার্যকর করা হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে যেতে পারেন তামিম। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে প্রধান কোচ এবং সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক না রাখা হলে জাতীয় দলে ফেরার ইচ্ছা আছে তার। তবে হাথুরুসিংহে ও সাকিব দু’জনই জাতীয় দলে থাকায় প্রশ্ন উঠছে, তামিমের আন্তর্জাতিক কি ক্যারিয়ার শেষ? সেদিক বিবেচনা করেই তামিমকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির খসড়া তালিকা করে ফেলেছে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এই সংস্থা।

গত জুলাই মাসে আফগানিস্তান সিরিজের মাঝে আচমকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তামিম। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে একদিন পরই সিদ্ধান্ত বদলান। পিঠের চোটে লড়াই করে বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজে ফিরলেও নেতৃত্ব আর নেননি।

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে বিরোধ ও নানান নাটকীয়তায় পরে বিশ্বকাপ স্কোয়াডেও জায়গা পাননি তিনি। বিশ্বকাপের পর বড় প্রশ্ন দাঁড়ায়, তামিম আবার কি ফিরবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে? তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো আভাস মেলেনি। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট, নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে কোনোটাতেই দেখা যায়নি তাকে।

রোববার গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে বিসিবির পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস জানিয়েছেন, নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছেন তারা। তাতে থাকছেন না তামিম, ‘তামিমের সঙ্গে আমাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না। তামিম নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলেছিল, প্রধান নির্বাচকের সঙ্গে কথা বলেছে, আমার সঙ্গেও কথা বলেছে। আপনারা জানেন যে, বোর্ড সভাপতির সঙ্গে বসার কথা আছে আগামী মাসে। প্রধানত নির্বাচনের পরে। সে চাচ্ছিল তার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবে। তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী, সামনের দিনে কীভাবে এগিয়ে যাবে। তার নিজস্ব একটা পরিকল্পনা আছে, তার আগে যেন আমরা তাকে চুক্তিতে না রাখি। সে চেয়েছে এখন না রাখতে, পরে বসার পর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে সে তখন আমাদের জানাবে যে সে কি করতে যাচ্ছে।’

নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকা করতে ইতোমধ্যে সভা করেছেন নির্বাচকরা। নির্বাচকরা তালিকা বোর্ডে জমা দিলে বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী সভায় কেন্দ্রীয় চুক্তির ক্রিকেটারদের তালিকা অনুমোদন করা হবে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা চূড়ান্ত করে বোর্ডে জমা দেওয়া হবে বলে জানান জালাল, ‘নির্বাচকরা ইতোমধ্যে এটি নিয়ে বসেছিল, আমিও সেদিন গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে একটা মিটিং হয়েছে, পরে এটি বোর্ডে আলোচনা হবে। ড্রাফট একটা করা হয়েছে আর কি। আশা করি, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা প্রস্তুত করব যেটা বোর্ডের কাছে দিব। তার আগে মাননীয় সভাপতির কাছে দিতে হবে। উনি একটু দেখবেন তারপর আমরা বোর্ডে রিলিজ করব।’

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের পর অনুষ্ঠেয় বোর্ড সভায় তামিমের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেবে বিসিবি। এ ব্যাপারে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে একটা সমঝোতা বৈঠকও করেছেন জালাল।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলে নিয়মিত খেলা ক্রিকেটারদেরও কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নেওয়া হচ্ছে না। মূলত গত দুই বছরের পারফরম্যান্স ও আগামী বছর জাতীয় দলে খেলার সম্ভাবনা বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় চুক্তির ক্রিকেটার নির্বাচন করা হতে পারে। সে হিসেবে এ বছর ধারাবাহিক জাতীয় দলে খেলার পুরস্কার পাচ্ছেন তাওহিদ হৃদয়। ২০২৪ সালের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নেওয়া হচ্ছে ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের এই সদস্যকে।

এ বছর আন্তর্জাতিক কোনো খেলাতেই বাংলাদেশ দলে ছিলেন না মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। আগামী বছর জাতীয় দলে ফেরাও তার প্রায় অনিশ্চিত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তিনি যে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকছেন না, তা এক প্রকার নিশ্চিত করেই বলা যায়।

এদিকে তানজিদ হাসান তামিম, তানজিম হাসান সাকিব, এনামুল হক বিজয়রা এখনই কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে জুনিয়র তামিম-সাকিব এশিয়া কাপ থেকে জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য হলেও আগামী এক বছর সিরিজভিত্তিক বেতন দেওয়া হবে তাদের। সৌম্য সরকার জাতীয় দলে নিয়মিত হলে ২০২৫ সালে চুক্তিতে ফিরতে পারেন। উইকেটরক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান ২০২৩ সালে টেস্ট আর টি২০র চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটার ছিলেন। তাকে এবার শুধু টেস্টের চুক্তিতে রাখা হতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়তে পারেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ।

সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ ছিলেন ২০২৩ সালের কেন্দ্রীয় চুক্তির তিন সংস্করণের ক্রিকেটার। এবার সেখানে যোগ হতে পারেন পেসার শরিফুর ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। পেসার এবাদত হাঁটুর চোটের কারণে খেলতে না পারলেও চুক্তিতে থাকছেন।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ওয়ানডেতে, মুমিনুল হক, খালেদ আহমেদ, জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান জয় টেস্টের ক্রিকেটার। মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শেখ মেহেদি হাসান, আফিফ হোসেন সাদা বলের চুক্তির ক্রিকেটার। এভাবে ২১ জনের একটা তালিকা কেন্দ্রীয় চুক্তির জন্য বিসিবিতে সুপারিশ করেছেন জাতীয় দল নির্বাচকরা।

এই তালিকায় এক বা দু’জনকে যোগ করতে পারে বোর্ড। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে কথা বলে তানজিদ হাসান তামিমকে চুক্তিভুক্ত করতে পারেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন।

কেন্দ্রীয় চুক্তির সম্ভাব্য ক্রিকেটার : সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, তাইজুল ইসলাম, এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ, জাকির হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুস্তাফিজুর রহমান, আফিফ হোসেন, শরিফুর ইসলাম, শেখ মেহেদী, হাসান মাহমুদ, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদুল হাসান জয়, নুরুল হাসান সোহান ও রনি তালুকদার।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com