সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২২ অপরাহ্ন
আইপিএলে এবারের আসরে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। নিলাম থেকে দুই কোটি রুপিতে তাকে দলে নিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস। যদিও প্রতি বছরই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অনাপত্তিপত্র নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়। তবে এবার মুস্তাফিজের আইপিএল খেলার পথে বাধা হবে না বিসিবি। তাকে অনাপত্তিপত্র দেওয়ার বিষয়টি রোববার গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ক্রিকেট অপারেশন্স’র চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।
মুস্তাফিজ অনুমতি পেলেও তার দুই সতীর্থ তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম অনুমতি পাননি। শুরুতে নিলামে তাদের নাম থাকলেও পরে সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়। এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন বিসিবির পরিচালক।
জালাল ইউনুস বলেন, ‘তাসকিন-শরিফুলকে না দেওয়ার কারণ হচ্ছে তাদের ইনজুরি। তাসকিন কিন্তু এখনো অনুশীলন করছে। কালকেও আমার সঙ্গে কথা হয়েছে সে বলছে আমি প্রায় ফিট। এই দুইজন কিন্তু ইনজুরিপ্রবণ খেলোয়াড়। আপনারা জানেন যে, বিশ্বকাপে তাসকিন কিন্তু পুরোপুরি ফিট ছিল না। সে ফিফটি পার্সেন্ট ফিট হয়ে খেলেছে।’
বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে বিসিবির বাধ্যবাধকতার কথা শোনা যায়। বছরে দুটির বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলতে পারবে না, এমন আলোচনাও ছিল। এবার সেটি কেন্দ্রীয় চুক্তিতেও আনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন জালাল।
তিনি বলেন, ‘এক দুই বছর আগে এই রকম পরিকল্পনা ছিল- কিন্তু ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটে রাখিনি। এবার হয়তো আমরা কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রাখতে পারি। অথবা না রাখলেও হয়তো বলে দেব সারা বছরে তোমরা একটা বা দুইটা খেলবা। আমরা এটা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। ’
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলতে না পারায় ক্রিকেটারদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জালাল বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের কথা খারাপ শোনায়। কিন্তু এটা বোর্ড আর খেলোয়াড়দের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা।’
বাংলাদেশ থেকে এবার একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে আইপিএলে মুস্তাফিজকে দলে নেওয়ার পেছনে অনেকেই চেন্নাইয়ের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য দেখছেন। তবে আইপিএলের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা জানায়, মুস্তাফিজকে নেওয়ার চিন্তা আচমকা আসেনি। বরং নিলামের আগে থেকেই তার দিক নজর ছিল তাদের। কারণ হিসেবে তারা বলছে ঘরের মাঠের উইকেটে তার কার্যকারিতার কথা।
চেন্নাইয়ের ঘরের মাঠ চিপকের এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামের উইকেট কিছুটা স্লো। এমন পিচে মুস্তাফিজের কার্যকারিতা প্রমাণিত। ঢাকার মিরপুরের পিচেও তার বহু সাফল্যগাথার পেছনে ভূমিকা রয়েছে একইরকম পিচের। এমন উইকেটে ‘দ্য ফিজ’র স্লোয়ার ও কাটার বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
তাছাড়া চিপকের দুই পাশের বাউন্ডারির বড় সীমানাও মুস্তাফিজ কাজে লাগাতে পারবেন। গত শনিবার নতুন সাইনিং নিয়ে কথা বলার সময় এসব কারণের কথা উল্লেখ করেন চেন্নাইয়ের প্রধান নির্বাহী কেএস বিশ্বনাথন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে, মাঠের দুই পাশের সীমানা বিবেচনায় নিয়ে চিপকের উইকেটে মুস্তাফিজের ভালো পছন্দ হতে পারে। (নিলামের আগে থেকেই) আমাদের ভাবনায় এসব ছিল। কিন্তু আমরা নিশ্চিত ছিলাম না যে তাকে পাব। সৌভাগ্যবশত, এবারের নিলাম আমাদের ভালো কেটেছে।’
আইপিএলে মুস্তাফিজের অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিনের। এর আগে আরও চারটি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলেছেন তিনি। অভিষেক আসরে তিনি খেলেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে। প্রথমবারেই দলের শিরোপা জয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। পরের আসরে একই দলের হয়ে খেললেও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। এরপর মুম্বাই ইন্ডিয়ান ও রাজস্থান রয়্যালসে খেলেন এই বাঁহাতি কাটার মাস্টার।
সবশেষ মৌসুমে তাকে দেখা গেছে দিল্লি ক্যাপিটালসের জার্সিতে। তবে এবার তার দল পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। নিলামে চেন্নাই ছাড়া আর কোনো দল তাকে নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি। তবে অনেকের ধারণা, মহেন্দ্র সিং ধোনির দলে নিয়মিত সুযোগ হবে না মুস্তাফিজের। তাকে মূলত ‘সোশ্যাল মার্কেটিং’র কাজে লাগানো হবে বলে অভিযোগ অনেকের।
এর আগের মৌসুমগুলোতেও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো মুস্তাফিজকে নিয়ে ফেসবুকে নিয়মিত পোস্ট দিয়েছে। সেসব পোস্টে লাখো রিঅ্যাকশন এবং হাজারো কমেন্ট পড়েছে। কিন্তু নিয়মিত একাদশে তার সুযোগ মিলেছে কমই। এ নিয়ে সেসব পোস্টের নিচেই বাংলাদেশি সমর্থকরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। চেন্নাইও একই পথে হাঁটছে, এমন অভিযোগ সমর্থকদের। তবে বিষয়টা খোলাসা করেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। তবে আদতেই তাকে বসিয়ে রাখা হবে, নাকি নিয়মিত সুযোগ মিলবে- তা জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে সমর্থকদের।