শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৭ অপরাহ্ন
প্রকল্প গ্রহণের প্রায় এক দশক পর ২০১৭ সালে কাজ শেষ হয় চট্টগ্রামের মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীর। দুই বছরের মধ্যেই ৮৮ শিল্পোদ্যোক্তার মধ্যে সব প্লট বরাদ্দ দেয় বিসিক। কিন্তু প্রকল্প শেষ হওয়ার সাড়ে ছয় বছরেও উৎপাদনে যেতে পারেনি ৮২টি শিল্প ইউনিট। বর্তমানে মাত্র ছয়টি প্রতিষ্ঠান এ শিল্পনগরীতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়ে দেশের শিল্প খাত। এরপর ব্যাংকে তারল্য সংকটের পাশাপাশি ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি, বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনীতিতে অস্থিরতা, ব্যাংক থেকে ঋণপ্রাপ্তিতে জটিলতাসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জে গুরুত্বপূর্ণ এ শিল্পনগরীর কার্যক্রম শ্লথ।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ১৫ দশমিক ৩২ একর আয়তনের মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে এ-টাইপ প্লট ২৭টি, বি-টাইপ ৩৩টি ও সি-টাইপ প্লট ২৮টি। ২০১৭ সালে কাজ শেষ হওয়ার পর দরপত্র আহ্বান করলে ১১৪টি আবেদন জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে শিল্পোদ্যোক্তাদের ৮৮টি প্লট বরাদ্দ দেয় বিসিক চট্টগ্রাম জেলা প্লট বরাদ্দ কমিটি। পাঁচ বছরের মধ্যে নয়টি কিস্তিতে প্লটের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন শিল্পোদ্যোক্তারা। এককালীনও প্লটের ইজারামূল্য পরিশোধের সুযোগ রাখা হয়। কিন্তু ১৪ শিল্পোদ্যোক্তা সময়মতো অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় প্লটগুলো শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে ১৪টি প্লটের বিপরীতে ৫৬টি আবেদন জমা পড়ে। পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে বাকি প্লটগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয় ২০২২ সালে। প্লটের প্রতি বর্গফুট জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০০ টাকা।
শিল্পনগরীটিতে প্রকৌশল খাতে ১৯টি, খাদ্য ও খাদ্যজাত শিল্প খাতে ১৯, তৈরি পোশাক খাতে ১৬, সিরামিকস ও নন-মেটালিক খাতে তিন, কেমিক্যাল অ্যান্ড অ্যালাইড খাতে ১০, রাবার-লেদার অ্যান্ড অ্যালাইড খাতে চার, প্যাকেজিং খাতে আট এবং বন ও বনজ খাতে তিনটি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। উৎপাদনের জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎসহ আনুষঙ্গিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৭ শতাংশ শিল্পোদ্যোক্তা কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছেন।
বিসিক কর্মকর্তারা বলছেন, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলসংলগ্ন হওয়ায় নতুন এ বিসিকের জন্য উদ্যোক্তাদের আগ্রহ ছিল। কিন্তু দেশে একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন ও কার্যক্রম শুরু হওয়া, শিল্প খাতে বিনিয়োগে নানা সংকটের কারণে অনেকেই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। তাছাড়া দেশীয় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের কারণে অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু করেও উৎপাদনে যেতে ভয় পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে নির্বাচনের পর দেশের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে মিরসরাই বিসিকের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে বলে আশা করছেন তারা।
এ বিষয়ে বিসিক চট্টগ্রামের উপমহাব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, চট্টগ্রামের বিদ্যমান শিল্পনগরীগুলোর চেয়ে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সন্নিকটে হওয়ায় শিল্পদ্যোক্তাদের মধ্যেও এখানে বিনিয়োগে বেশ আগ্রহ ছিল। কিন্তু মিরসরাই বিসিকের প্লট বরাদ্দ দেয়ার পর পরই কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তার ওপর সাম্প্রতিক দেশীয় ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট নতুন শিল্প স্থাপনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এর পরও বরাদ্দ নেয়া শিল্প প্লটগুলোয় নতুন কারখানা স্থাপনে কাজ করছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ছয়টি কারখানা চালুর পর নতুন করে আরো ছয়টি প্লটে অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরসরাই উপজেলা সফরকালে এ অঞ্চলে একটি পৃথক শিল্পনগরী স্থাপনের ঘোষণা দেন। ২২ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় মিরসরাইয়ে শিল্পনগরী স্থাপনে একটি প্রকল্প হাতে নেয় বিসিক। কিন্তু মাটি ভরাটসহ নানা জটিলতায় আটকে যায় শিল্পনগরীটি স্থাপনের কাজ। এর মধ্যে একাধিকবার প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়। ২০১৫ সালের ১২ মে একনেক বৈঠকে দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প আকারে ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার মিরসরাই বিসিক প্রকল্প অনুমোদন হয়। প্রকল্পের সময়সীমা দুই দফা বাড়ানো হলেও নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা হয়।