শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন
সেলফোন নেটওয়ার্কের উন্নয়ন ও পরিধি বাড়াতে নতুন করে তরঙ্গ বিক্রির পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত সরকার। চলতি সপ্তাহে দেশটির মন্ত্রিসভায় তরঙ্গ বিক্রির পরিকল্পনায় অনুমোদন দেয়া হয়। খবর ইটিটেলিকম।
ভারতের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, নিলামের মাধ্যমে ৯৩ হাজার ৬৩০ কোটি রুপি (১ হাজার ১১৬ কোটি ডলার) মূল্যের তরঙ্গ বিক্রি করা হবে। ৮০০, ৯০০, ১৮০০, ২১০০, ২৩০০, ২৫০০, ৩৩০০ মেগাহার্টজ ও ২৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে ১০ হাজার ৫২৩ দশমিক ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বিক্রি করা হবে বলে জানা গেছে। তবে কবে নাগাদ তরঙ্গ বিক্রির নিলাম আয়োজিত হবে সে বিষয়ে সরকারি সূত্রে কিছু জানা যায়নি।
দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় থাকা কোম্পানির কাছে থাকা তরঙ্গও নিলামে তোলা হবে বলে সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এর মাধ্যমে সরকারি পর্যায়ে অর্থায়ন আরো শক্তিশালী হবে এবং বাজেট ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।
ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, নিলামের পর টেলিকম পরিষেবার উন্নয়ন ও গ্রাহক পর্যায়ে কভারেজ বাড়াতে অবিক্রীত তরঙ্গ ব্যবহার করা হবে। এছাড়া নিলামের মাধ্যমে রিলায়েন্স জিও ইনফোকম, ভারতী এয়ারটেল ও ভোডাফোন আইডিয়ার মতো ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলো পরিষেবা বাড়াতে পারবে। ২০২২ সালের শেষদিকে দেশটির স্থানীয় কোম্পানিগুলো ফাইভজি পরিষেবা চালু করেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা জানান, ভারতের ফাইভজি নেটওয়ার্ক খাত অলিগোপলিস্টিক কাঠামোর মধ্যে রয়েছে। মূলত যে বাজারে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম এবং সেগুলো সম্মিলিতভাবে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ওপর প্রভাব ফেলে সেটিই অলিগোপলিস্টিক কাঠামো। এখানে একজন যদি গ্রাহক পর্যায়ে প্যাকেজে পরিবর্তন আনে তখন বাকিরাও উদ্যোগ নেয়।
বিনিয়োগ সংস্থা বেক্সলি অ্যাডভাইজরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উৎকর্ষ সিনহা বলেন, ‘ভারতে সবসময়ই তরঙ্গ নিলামের আয়োজন হয়। কিন্তু তীব্র প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ কোম্পানিই তাদের মার্জিনকে প্রভাবিত করছে। এছাড়া অতিরিক্ত তরঙ্গ ক্রয়ে তাদের যে সক্ষমতা সেটিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে।’
২০২২ সালেও তরঙ্গ নিলামের আয়োজন করেছিল ভারত। সে সময় ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার মূল্যের তরঙ্গ বিক্রি করেছে। যেখানে রিলায়েন্স জিওই ১ হাজার ১০০ কোটির তরঙ্গ কিনেছিল।
ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালুর পর ভারতের টেলিকম খাতের ব্যবহারকারী বাড়তে শুরু করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর দেশটি সাশ্রয়ী টেলিকম সেবা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে।
ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেস ২০২৩-এ গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের তথ্যমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছিলেন, ‘সরকারের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। আমরা চাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের টেলিকম পরিষেবা সবচেয়ে সাশ্রয়ী হবে। সেই সঙ্গে এটি বলতে চাই, বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য বড় অর্থনীতির দেশের তুলনায় ভারতের টেলিকম খাত সাশ্রয়ী।’
বিশ্লেষকদের মতে, ফাইভজি নেটওয়ার্কের পরিধি বাড়াতে টেলি নেটওয়ার্ক পরিষেবা কোম্পানিগুলো বড় বিনিয়োগ করছে। বর্তমানে ভারতের কোম্পানিগুলো গ্রাহকপ্রতি ১৪০-২০০ রুপি মুনাফা করছে। যেখানে এর বৈশ্বিক গড় ৬০০-৮৫০ রুপি এবং চীনে এর হার ৫৮০ রুপি।
টেলিকম অপারেটরদের দাবি, ভারতে চার-পাঁচটি অ্যাপে ব্যবহারকারী বা ট্রাফিক সবচেয়ে বেশি। এসব অ্যাপ দেশটিতে ভালো ব্যবসা করছে। বর্তমানে মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিষেবা দিচ্ছে চারটি কোম্পানি।