বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০৫ অপরাহ্ন

অস্ত্র প্রতিযোগিতার টাকা জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় দিন : শেখ হাসিনা

অস্ত্র প্রতিযোগিতা না করে সেই অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মানুষদের রক্ষার জন্য ব্যয় করার আহ্বান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ দিবস–২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি। খবর বিডিনিউজের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বন্দ্ব, সংঘাত, যুদ্ধ আজ বিশ্ব শান্তি বিঘ্নিত করছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় ইসরাইলের হামলায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা… ইত্যাদি মানব জাতির জন্য এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আমি ঠিক জানি না, এই সংঘাত বা এই যুদ্ধ মানব জাতির জন্য কি কল্যাণ বয়ে আনছে, অস্ত্র প্রতিযোগিতা প্রতিনিয়ত যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানুষের জীবনও তত বেশি দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে নারী–শিশু, তারা সব থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। যুবকরা অকাতরে জীবন দিচ্ছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সকল কিছু সমাধান করতে চাই। বিশ্বের এক বিশাল সংখ্যক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে। কেটি কোটি মানুষ দু–বেলা খাবার পায় না, শিশুরা শিক্ষা পায় না, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। যারা অস্ত্র তৈরি এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতায় এত অর্থ ব্যায় করছে, তাদের কাছে আমার আহ্বান, আমরা শান্তির কথা বলি কিন্তু সংঘাতে লিপ্ত হই কেন?

এই যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে, এই অর্থ যদি ক্ষুধার্ত মানুষের আহারের ব্যবস্থায়, শিক্ষায় ব্যবহার করা হত, চিকিৎসায় ব্যবহার করা হত, তাহলে মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হত, মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারত। কিন্তু এই সংঘাত মানুষকে আরও কষ্টের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সংঘাত না, যদি কোনো সমস্যা থাকে, আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করা, সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কাজ। অস্ত্র তৈরি আর প্রতিযোগিতার এই অর্থটা যে সমস্ত দেশ এখনও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে, সেই জলবায়ু অভিঘাত থেকে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য সেই ফান্ডে সেই অর্থ দিতে পারে এবং ক্ষুধার্ত এবং শিক্ষা বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। সেই আহ্বানটি সকলকে জানিয়ে যাচ্ছি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যেসমস্ত দেশে আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে কাজ করছে, তাদের রাষ্ট্রপ্রধান সরকারপ্রধান বা মন্ত্রীদের সাথে যখন দেখা হয়, প্রত্যেকেই আমাদের শান্তিরক্ষীদের ভূয়সী প্রসংশা করে। আর এই প্রসংশা শুনে সত্যি আমার গর্বে বুক ভরে যায়। জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে আমরা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি। শান্তি রক্ষা মিশন ছাড়াও আমরা অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে অবদান রেখে যাচ্ছি।

নারী শান্তিরক্ষীদের চাহিদা বাড়ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে বৃহৎ নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সর্বমোট ৩ হাজার ৮০০ নারী শান্তিরক্ষী অত্যন্ত সফলতার সাথে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন সম্পন্ন করেছেন। তবে বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করা এখন অতীতের চেয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, প্রযুক্তির সামপ্রতিক প্রসার এবং অগ্রযাত্রার সাথে সাথে বাড়ছে নতুন নতুন হুমকি। ফলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনগুলোর শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাই শান্তিরক্ষা মিশনগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এখন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীগণ বিশ্বের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং বিপদজনক অঞ্চলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে, সেজন্য তাদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com