বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, নগরকন্ঠ.কম : নওগাঁর রানীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামের ১০ বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে চারজন পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। আর বয়সের ভারে নুয়ে পড়ে বেঁচে আছেন ছয় বীরাঙ্গনা।
সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি গেজেটের মাধ্যমে তাদের নাম প্রকাশ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী জানা যায়, রানীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর তীরে আতাইকুলা পালপাড়া গ্রাম।
১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনীর স্থানীয় দোসর রাজাকার ও আলবদরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নির্যাতন চালায় এ পালপাড়া গ্রামের সনাতন ধর্মের মানুষদের ওপর।
এ সময় গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সংখ্যালঘু পরিবারের কিশোর, যুবকসহ বিভিন্ন বয়সী নারীদের ধরে ওই গ্রামের সুরেশ্বর পালের বাড়ির বারান্দায় একত্রিত করে ব্রাশফায়ার করে গোবিন্দচরণ পাল, সুরেশ্বর পাল, বিক্ষয় সূত্রধর, নিবারণ পালসহ ৫২ জন মুক্তিকামী জনতাকে নির্বিচারে হত্যা করে।
পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, লুটপাট ও নির্যাতন থেকে বিশেষ করে নারীরা স্বামী-সন্তানদের প্রাণে বাঁচানোর শেষ আকুতিটুকু করলেও পাক জান্তাদের মন তা গলাতে পারেনি। উল্টো পাক জান্তারা সুযোগ বুঝে নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে নওগাঁ জেলা শহরের উদ্দেশে চলে যায়।
স্বাধীনতার পর সেদিনের পাশবিক নির্যাতনের শিকার ১০ নারীর বীরাঙ্গনার স্বীকৃতির দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর তাদের বীরাঙ্গনার স্বীকৃতির মিলেছে।
এদের মধ্যে বানী রানী পাল, ক্ষান্ত রানী পাল, রেনু বালা ও সুষমা সূত্রধর রোগশোকে ভুগে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি এ চারজনের।
আর বয়সের ভারে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কোনোমতে বেঁচে আছেন মায়া রানী সূত্রধর, রাশমনি সূত্রধর, সন্ধ্যা রানী পাল, কালীদাসী পাল, সন্ধ্যা রানী ও গীতা রানী পাল।
একাত্তরের সেই দুর্বিষহ যন্ত্রণা ও সামাজিক বঞ্চনার পাশাপাশি অনেকটা দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন আর অসুস্থতার মধ্যেই চলছে তাদের জীবন সংগ্রাম।
চোখের জল ফেলতে ফেলতে বীরাঙ্গনা কালী দাসী পাল (৭৫) বলেন, ‘ওইদিন সকালে যখন আমাদের গ্রামে পাঞ্জাবি আসে তখন আমার স্বামীসহ বাড়ির দরজা লাগিয়ে আত্মগোপনের চেষ্টা করি। কিন্তু স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় দরজা ভেঙে আমার স্বামীকে টেনেহিঁচড়ে পাঞ্জাবিরা রাইফেল দিয়ে মারতে মারতে যোগেন্দ্রনাথের বারান্দায় ফেলে রাখে। স্বামীর প্রাণভিক্ষা চাইতে গিয়ে আমার কথা না শুনে চোখের সামনে আমার স্বামীসহ ৫২ জনকে হত্যা করে উল্টো আমার ওপরও তারা নানা কায়দায় নির্যাতন চালায়। তবে অবশেষে এ স্বীকৃতি পেয়ে আমি অনেক খুশি।’
নগরকন্ঠ.কম/এআর