বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

গাজীপুরে ডায়রিয়ার ভয়াবহ প্রকোপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, নগরকন্ঠ.কম : গাজীপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। গতকয়েক দিনে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন শতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে।

এদিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এলাকায় ৫ জনের মৃতুর খবর প্রচার হলেও একজন রোগীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষন দাস জানান, গত ৮ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০৬ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। বর্তমানে এখানে ওই রোগে আক্রান্ত ৯৪ জন ভর্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ ডিসেম্বর গাজীপুর মহানগরের সামন্তপুর এলাকার নুরুল ইসলাম (৫৫), ছোট দেওড়া এলাকার মোয়াজ্জেম ওরফে মোজাম্মেল হক (২২) ও মজিদ (৪০), এবং চাবাগান এলাকার ফিরোজ (২৩) নামের চার ডায়রিয়া রোগীকে ঢাকার কলেরা হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।

পূর্ব চান্দনা এলাকার বাসিন্দা মো. হাসান আলী জানান, তার আত্মীয়ের স্ত্রী সুমা ৯ ডিসেম্বর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। পরে তাকে মঙ্গলবার তাজউদ্দীন মেডিকেলে ভর্তি করতে নিলে তারা তাকে ঢাকার কলেরা হাসপাতালে পাঠায়। কিন্ত ঢাকায় যাওয়ার পথে সন্ধ্যায় সে মারা যায়।

ডায়রিয়া আক্রান্ত ছোট দেওড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মজিদের মেয়ে জামাতা মো. আকাশ জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সরবরাহ করা পানি পান করে তার শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালিকা ও বাড়ির কয়েক ভাড়াটিয়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। পরে তারা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে তার শ্বশুর মজিদকে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার কলেরা হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। বর্তমানে তিনি অনেকটা সুস্থ হয়েছেন।

গাজীপুর মহানগরের ছোট দেওড়া এলাকার মোজাম্মেল হক জানান, ৯ ডিসেম্বর দুপুরে জয়দেবপুর বাজারের এক হোটেলে ভাত খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হই। পরদিন সকালে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা আমাকে ঢাকা কলেরা হাসপাতালে পাঠান।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভোগড়া বাইপাস এলাকার হেলাল উদ্দিন (৪৫) জানান, তিনি বমি ও পাতলা পায়খানা নিয়ে গত দুইদিন ধরে ভর্তি হয়েছেন।

এছাড়া জামতলা এলাকার ওসমান গণি (৬৫), সামান্তপুর এলাকার নুরুল ইসলাম (৭০) জানিয়েছেন একই কথা।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (পানি) মো. নজরুল ইসলাম জানান, তাদের সরবরাহকরা লাইনে কোনো ত্রুটি বা পানি দূষিত হওয়ার মতো ঘটনা নেই, যা থেকে ডায়রিয়া হতে পারে। তারপরও আমরা তা নিশ্চিত হতে পানির স্যাম্পল পরীক্ষা করতে ঢাকায় পাঠাব। তবে কোনো এলাকার বাসিন্দাদের পানি সংরক্ষণের নিজস্ব ট্যাঙ্ক থেকে পানি দূষণের মতো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

আবাসিক চিকিৎসক ডা. প্রণয় ভূষন দাস জানান, কলেরা জীবানুবাহিত পানি ছাড়াও আবহওয়ার পরিবর্তন, খাবারের দূষন, ড্রেনের নোংরা পানি থেকেও এ রোগের বিস্তার লাভ করতে পারে।

তিনি আরও জানান, ঢাকা থেকে এক বিশেষজ্ঞদল মঙ্গলবার ডায়রিয়ার প্রকোপ সংক্রান্ত তথ্য নিতে এবং আক্রান্তদের খোঁজ খবর নেন। তারা আক্রান্ত এলাকার পানির স্যাম্পলও নিয়ে গেছেন।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের হেল্থ অফিসার ডা. মো. রহমত উল্লাহ জানান, মহানগরের পূর্বচান্দনা ও কাজীবাড়ি এলাকার লোকজন ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে আমরা সেখানকার পানির সোর্স লাইনের পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছি। আগামী রোববার হয়ত ওই পরীক্ষার ফল পাব।

তিনি বলেন, ওই এলাকায় নাগরিকদের মাঝে ৫ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ২০ হাজার প্যাক স্যালাইন সরবরাহ করা হয়েছে। পানি ফুটিয়ে পান করাসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার বিষয়ে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে জাতীয় রোগতত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা সংস্থার ডায়রিয়া আউটব্রেক ইনভেস্টিগেশন টিমের সদস্য ডা. দেবাশিষ কুমার সাহা ও অনুপম সরকারসহ ৬ সদস্যের টিম শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন এবং রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।

তাদের সঙ্গে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের হেলথ অফিসার ডা. রহমত উল্লাহ, ফুড ও সেনিটেশন অফিসার মলয় কুমার দাস উপস্থিত ছিলেন।

নগরকন্ঠ.কম/এআর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com