বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০১:৫৫ অপরাহ্ন

শীতে বিপর্যস্ত জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক, নগরকন্ঠ.কম : টানা তিন দিন সূর্যের আসল রূপ দেখেনি দেশের মানুষ। সঙ্গে আছে কুয়াশাও। তীব্র কুয়াশার কারণে দুরপাল্লার গাড়িও নিজস্ব গতিতে চলতে পারেনি। আর বিমানের শিডিউলও ব্যাহত হয়েছে। শুক্রবার ছুটির দিনে রাস্তায় মানুষ ছিল খুবই কম। জরুরি কাজ না থাকলে ঘর থেকে বের হননি তারা।

আর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশা আরো দু-একদিন থাকতে পারে। তবে এর চেয়ে তাপমাত্রা আর কমবে না। ধীরে ধীরে উন্নতির দিকেই যাবে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন ছিল ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৪ এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিস গতকাল তাদের বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। রাজশাহী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহ আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে। আগামী ১২ ঘণ্টায় দেশের সর্বত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আবহাওয়ার দৃশ্যপটের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়, মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে এবং এর বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

ঘন কুয়াশার কারণে বিঘ্ন হয় বিমান চলাচলও। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল আন্তর্জাতিক আকাশপথের ফ্লাইটগুলো সময়মতো ঢাকা ছাড়লেও অভ্যন্তরীণ আকাশপথে প্রায় ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গতকালের সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ঢাকা-যশোরে নভোএয়ারের ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে, ইউএস-বাংলার যশোরে ৯টা ৪০ মিনিটের ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৪৪ মিনিটে, নভোএয়ারের ঢাকা-যশোরের সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের ফ্লাইটটি এক ঘণ্টা পর বেলা ১১টা ৫১ মিনিটে, নভোএয়ারের সৈয়দপুরে ৯টা ৫০ মিনিটের ফ্লাইটটি দুপুর ১২টা ৩৯ মিনিটে এবং ইউএস-বাংলার ঢাকা-সৈয়দপুরের ৯টা ৩০ মিনিটের ফ্লাইটটি বেলা ১টা ৪২ মিনিটে শাহজালাল বিমানবন্দর ছেড়ে যায়।

দেশজুড়ে অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ আর ঘনকুয়াশায় বিপর্যস্ত জনজীবন। নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। সূর্যের দেখা না মেলায় বেড়ে চলেছে শী?তের তীব্রতা। একটু উষ্ণতা পেতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগ। খবর আমাদের অফিস, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের।

চট্টগ্রাম: পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু অবস্থা চট্টগ্রামের মানুষের। শহরের বাইরের বিভিন্ন উপজেলায় শীতের তীব্রতা আরো বেশি। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া শৈতপ্রবাহের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল জানান, দেশজুড়ে চলমান মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় কুয়াশা থাকায় সূর্যের আলো কম পড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে রাতে। এতে রাতের বেলায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। বর্তমানে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার গতিতে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম : শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থায় ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে মানুষের। গরম কাপড়ের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছে শিশু-বৃদ্ধসহ শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষেরা। সূর্যের দেখা না মেলায় বেড়েই চলেছে শীতের তীব্রতা। এ অবস্থায় জেলার চরাঞ্চলের মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নি?য়ে বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।

পঞ্চগড় :জেলায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। শুক্রবার জেলার তেঁতুলিয়ায় ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। উত্তরের হিমশীতল বাতাসের কারণে এখানে শীতের প্রকোপ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রহিদুল ইসলাম রহিদ। পৌষের শুরু থেকেই শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশা পড়ছে এ এলাকায়।

মাগুরা : গতকাল gvàivq হিমেল হাওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পায়। শিশু ও বৃদ্ধরা নিউমোনিয়া, জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শিশু রোগীদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে । মাগুরা সদর আধুনিক হাসপাতালের ১০ বেডের শিশু ওয়ার্ডে শতাধিক শিশুরোগী ভর্তি রয়েছে। শহরের পুরাতন কাপড়ের মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। সকাল ও রাতে শহর ফাঁকা হয়ে যায় ।

সিরাজগঞ্জ :সিরাজগঞ্জে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার সঙ্গে বাতাসের কারণে বেড়েছে ঠান্ডা। সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশায় ছেয়ে যাচ্ছে চার পাশ। উত্তর থেকে থেমে থেমে বইছে ঠান্ডা বাতাস। যমুনা নদী বেষ্টিত সিরাজগঞ্জ শহরে শীতের প্রকোপ বাড়ায় বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী ও চরাঞ্চলের মানুষ। শীতের প্রকোপ বাড়তে শুরু করায় শীতজনিত রোগাক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।

কাহারোল (দিনাজপুর) : কাহারোলে প্রচণ্ড শীত ও শৈত্যপ্রবাহের ফলে বেকার হয়ে পড়েছে কর্মজীবী গরিব মানুষ। অনেকে ছুটছে গরম কাপড়ের দোকানে। এসব দোকানে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুক্রবার উপজেলার সর্বত্র কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে। বিকাল পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। প্রচণ্ড শীতের কারণে হাটবাজারে লোকজনের উপস্থিতি কমে গেছে। খেটে খাওয়া মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে।

ঈশ্বরদী (পাবনা) : এবার দেরিতে হলেও হঠাত্ ঈশ্বরদীসহ আশেপাশের এলাকায় জেঁকে বসেছে শীত। আবহাওয়া অফিস জানায়, গত দুই দিন ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা ৮.৮ ডিগ্রি হতে ১০.৩ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা করছে। হিমেল বাতাসের কারণে ঘরের বাইরে কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। শীতের তীব্রতায় পদ্মা তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষের নাকাল অবস্থা।

বেতাগী (বরগুনা) : পৌষের শুরুতেই বেতাগীতে জেঁকে বসেছে শীত। হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন অচল প্রায়। গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিয়েছে। গত তিন দিনে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস করে তাপমাত্রা কমছে।

নগরকন্ঠ.কম/এআর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com