শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, নগরকন্ঠ.কম : শীতের তীব্রতা বাড়ায় শীতজনিত রোগ বাড়ছে। এ বছর শীতের শুরু থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৫০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৯ শিশু মারা যায়। শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের মধ্যে নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্র সংক্রমণে আক্রান্তের হার বেশি। পাশাপাশি রয়েছে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব। শীত মৌসুমে অতি বয়স্কদের মধ্যে এসব রোগের ঝুঁকি রয়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, ক্রনিক শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় ব্যাপক হারে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এই সময় গ্রামাঞ্চলে অনেকে শীতের জন্য গোসল করে না। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে। এসব কারণে এ রোগের সংক্রমণ বেশি হয়। এমন পরিস্থিতিতে শিশু ও বয়স্কদের জন্য আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত আলাদা যত্ন নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শীতের সময় অনেকে আগুন পোহায়। বিভিন্ন এলাকায় আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে অনেকে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বলেন, শীত নিবারণের জন্য আগুন পোহানোর চেয়ে জীবন রক্ষা করা আগে প্রয়োজন। এর থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
গত ২৪ ঘণ্টায় শীতকালীন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ১১৯ জন। ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের ৮০ ভাগই রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত। এরই মধ্যে মহাখালীর আইসিডিডিআর’বি পরীক্ষা করে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৯৬ জন, ডায়রিয়া (রোটা ভাইরাস) আক্রান্ত হয়ে ৮৫৫ জন ও অন্যান্য শীতজনিত রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৯৬৮ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৯৪৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে এক হাজার ৫৫১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৭২ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৮৫ জন, রংপুর বিভাগে ৫০৭ জন, খুলনা বিভাগে এক হাজার ৬৪০ জন, বরিশাল বিভাগে ১৯৯ জন, সিলেট বিভাগে ৩৩৪ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিত্সা নিয়েছেন ৩ লাখ ১২ হাজার ১৭ জন। এর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত হন ৫০ হাজার ১৮ জন, ডায়রিয়া (রোটা ভাইরাস) আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৪৯ জন ও অন্যান্য শীতজনিত রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক লাখ ৩৮ হাজার ২৫০ জন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ ইত্তেফাককে জানান, শীতজনিত কারণে শিশুরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, অ্যাজমাসহ শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ নিয়ে প্রতিদিনই অনেক রোগী হাসপাতালে আসছে। অন্যসব রোগীর সংখ্যা খুবই কমে গেছে। রোগীদের প্রচণ্ড চাপে সিট দেওয়া সম্ভব হয় না। তারপরও এদের জরুরি চিকিত্সা সেবা দেওয়া হচ্ছে। চিকিত্সা নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হয় না। আগত শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের হার সর্বাধিক। তাই শীতের সময় শিশুদের জন্য আলাদা যত্ন নিতে হবে অভিভাবকদের। শিশুকে গরম কাপড় পরিধান করা, হালকা গরম পানি পান করতে হবে। একই সঙ্গে হাত ধুয়ে খাবার খেতে হবে। এই সময়টাতে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে শিশুদের ঘর থেকে বের না হওয়াই ভালো। তিনি বলেন, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে ভাইরাসজনিত রোগ জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ ইনফ্লুয়েঞ্জাও হয়ে থাকে এই সময়ে। ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। এই ভ্যাকসিন নিলে শিশুসহ বয়স্কদের নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আর এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া ভালো। অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ বলেন, ছয় মাস পর্যন্ত শিশুদের শীতের মৌসুমে শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোই ভালো। অভিভাবকরা একটু সচেতন হলে শীতকালীন এসব রোগ থেকে শিশুদের নিরাপদ রাখা সম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, শীতজনিত রোগ হলে চিকিত্সা রয়েছে। তবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সারাদেশের সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় প্রধানদের শীতজনিত রোগের সঠিক চিকিত্সা দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ডা. আয়শা আক্তার বলেন, শীতে গরম কাপড় পরতে হবে। হাত ধুয়ে খাবার খেতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
নগরকন্ঠ.কম/এআর