শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩১ অপরাহ্ন

ঘুম, রমজান ও করোনাভাইরাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, নগরকন্ঠ.কম : এ বছরের রমজান মুসলিমদের জীবনে ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে। কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশে দেশে মসজিদ বন্ধ থাকা অথবা মুসল্লির সংখ্যা সীমিত করার কারণে তারা প্রার্থনার জন্য কাঙ্খিত স্থানে যেতে পারছেন না। কিন্তু তাই বলে প্রার্থনা থেমে নেই, ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা ঘরে থেকেই স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

করোনাভাইরাসের এই মহামারিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখা। কিন্তু প্রার্থনা করতে গিয়ে দীর্ঘ রাত জাগা অথবা সাহরি খেতে সূর্যোদয়ের পূর্বে ওঠা- এসবকিছু ঘুমের চক্রকে বিঘ্নিত করে।

ফলে রমজানে ঘুমের চক্রে যে বিঘ্নতা ঘটে তাতে কি করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিপর্যস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়? ঘুমের প্যাটার্নে পরিবর্তন ইমিউন সিস্টেম বা শরীরের রোগপ্রতিরোধ তন্ত্রকে কিভাবে প্রভাবিত করে?

ভালো স্বাস্থ্যের জন্য রাতে ভালোভাবে ঘুম যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে এটা পরিষ্কার যে, স্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য উচ্চমানের ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী অভিমত জানিয়েছেন, সুস্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি ও শরীরচর্চার মতো ঘুমও গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ঘুমের ঘাটতিতে ক্ষুধার হরমোন বৃদ্ধি পেয়ে অতিক্রিয়াশীল হতে পারে। ঘুমের হরমোন লেপ্টিন ক্ষুধা কমিয়ে ফেলে, অন্যদিকে ঘ্রেলিন ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলে। উভয় হরমোনেরই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি স্বাস্থ্যের জন্য ভালোকিছু নয়।

ভালো ঘুমে স্থূলতা, হৃদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, বিষণ্নতা ও উদ্বেগের ঝুঁকি কমে যায় বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে। উন্নতমানের ঘুমের সঙ্গে মনোযোগের ক্ষমতা-স্মরণশক্তি বৃদ্ধি ও সুস্থ ইমিউন সিস্টেমের যোগসূত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।

কার্যকরভাবে কাজ করতে ইমিউন সিস্টেমের অবশ্যই শরীরে প্রবেশ করা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মতো বহিরাগত শত্রুকে শনাক্তের সক্ষমতা থাকতে হবে। তারপর শত্রুকে ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া (ইমিউন রেসপন্স) দেখানোর ক্ষমতা থাকতে হবে। টি-কোষ হচ্ছে ইমিউন সিস্টেমের একটি অংশ যা বহিরাগত শত্রুকে শনাক্ত করে ও বিস্তৃত ইমিউন রেসপন্সকে উদ্দীপ্ত করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুমে টি-কোষ শত্রুর প্রতি কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে- এভাবে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত হয়।

সাইটোকিন নামে পরিচিত প্রোটিনও সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের ইমিউন রেসপন্সের একটি অংশ। সংক্রমণ শনাক্ত করে সাইটোকিন অসংক্রমিত কোষগুলোর কাছে এই বার্তা পাঠায় যে তারা যেন আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকে এবং সংক্রমণকে প্রতিহত করতে এনজাইমের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়।

গবেষণায় পাওয়া গেছে যে ঘুমের সময় সাইটোকিন কেবল সর্বোত্তম কাজই করে না, উৎপাদনের পরিমাণও বেড়ে যায়। যোগসূত্রটি একটি প্রাচীন পরামর্শকে সমর্থন করছে: অসুস্থতায় বিশ্রাম নিতে হবে। এতে শুধু শক্তির সংরক্ষণই হয় না, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে শরীর রসদও পেয়ে থাকে।

অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি ঘুমিয়েছেন ভ্যাকসিনের প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া বেশি ছিল। অর্থাৎ যে রোগের জন্য তাদেরকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছিল সেই রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তুলনামূলক বেড়েছিল। ফ্লু ভ্যাকসিন ও হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, ইমিউন সিস্টেমের সুস্থতায় প্রতিরাতে টানা আট ঘন্টা ঘুম যেতে হবে। রমজানের সময় এটা মেনে চলা কঠিন। কিন্তু এর কাছাকাছি উপায়ও রয়েছে। রাতে আট ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমাতে না পারলে যেটুকু সময় ঘুমাতে পারেননি তা দিনে ঘুমিয়ে পুষিয়ে নিতে পারেন। যেহেতু লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ মানুষই কর্মস্থল থেকে ছুটি পেয়েছেন, তাই দিনে বিছানায় যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

এটা ঠিক যে দিনে রাতের মতো ভালো ঘুম নাও হতে পারে, কারণ এসময় পরিবেশে কোলাহল বিরাজ করে। তাই যথাসম্ভব ঘুমের মান বাড়াতে নিরিবিলি ও অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষে চলে যান। আপনি কি খাচ্ছেন তাও ঘুমের মানকে প্রভাবিত করতে পারে। ইফতারে লোকজন মুখরোচক খাবার প্রচুর পরিমাণে খেয়ে থাকেন। এসব খাবারের সবটাই যে স্বাস্থ্যকর এমনটা নয়। এর ফলে শরীরে ক্যালরি ও সুগার বেড়ে যায়। এটি রাতে ঘুমের মান কমাতে পারে। তাই যথাসম্ভব ইফতারের খাবার তালিকা থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দেয়ার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, একইসঙ্গে শরবত, জিলাপি, চিনিযুক্ত চিড়া ও অন্যান্য চিনিযুক্ত খাবার খেলে যে সুগার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এটা স্পষ্ট যে ঘুমের বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে, যার মধ্যে সংক্রমণ পরাজিত করার ক্ষমতা বৃদ্ধিও একটি। কিন্তু ভালো ঘুমে কি কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা বাড়বে? যেহেতু সংক্রমণটি নতুন, তাই আমরা এখনই এই বিষয়ে নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। কিন্তু অতীতে অন্যান্য সংক্রমণের গবেষণা প্রমাণ জোরালো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, রাতের ভালো ঘুম ইমিউন সিস্টেমকে কোভিড-১৯ শনাক্ত ও প্রতিহত করতে সহায়তা করতে পারে।

নগরকন্ঠ.কম/এআর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com