শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০১ পূর্বাহ্ন

এবার জোয়ারের পানিতে ভাসছে কয়রা-পাইকগাছা

নিজস্ব প্রতিবেদক, নগরকন্ঠ.কম : এবার অমাবস্যার প্রবল জোয়ারের পানিতে ভাসছে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রা ও পাইকগাছা।

আম্ফানের রেশ কাটতে না কাটতেই উপজেলা দু’টির বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

সম্প্রতি জোয়ারে কয়রায় ৫টি স্থান ভেঙে ৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ১০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন। কপোতাক্ষ আর কয়রা নদীর পানি উপচে পড়েও প্লাবিত হচ্ছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ২ নম্বর কয়রা, গোবরা, ৩ নম্বর কয়রা ও বেদকাশি গ্রাম।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিকেল থেকে লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে ভেঙে যাওয়া স্থানগুলো আটকাতে চেস্টা করে। এর আগে বুধবার কয়রা উপজেলার কাজী পাড়া, পুটিহারী, হরিণখোলা, কাশিরহাট খোলা, ঘাটাখালি প্লাবিত হয়।

অপরদিকে, পাইকগাছা উপজেলার শিবসা নদীর পানির চাপে হাড়িয়ার বাঁধ বুধবার ভেঙে মাজরাবাদ, বয়ারঝাপা ও টেংরামারী গ্রাম প্লাবিত হয়। স্থানীয় লোকজন বৃহস্পতিবার স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি আটকানোর কাজ শুরু করেন।

উত্তর বেদকাশি গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত পানি বাড়ায় কয়রার উত্তরবেদকাশি আবারও লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে।’

কয়রার গাজী পাড়ার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আম্ফানের পর কোন মতে ঘরে ফিরে বসবাস করছিলাম। কিন্তু জোয়ারের পানিতে আমরা ফের প্লাবিত হয়েছি। এখন আমার ঘরের মধ্যেও পানি প্রবেশ করেছে।’

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ করে জোয়ারের অতিরিক্ত পানির তোড়ে বাঁধ উপচে বিভিন্ন গ্রামে পানি ডুকেছে। এতে নতুন করে ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবারও ৫টি জায়গা ভেঙেছে।’

কয়রার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত যুব সংঘের সহ-সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, ‘জোয়ারের পানির চাপে কয়রার হরিণখোলা, গাটাখালী ও ২ নম্বর কয়রায় ৫টি স্থানের বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে আরও ৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ২৫০০ পরিবার সঙ্কটে পড়েছেন। সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ আটকানোর কাজ বিকাল ৪টা থেকে শুরু করেছে। হঠাৎ করে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে কয়রা ডুবেছে।’

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জোয়ারের পানির চাপে ঘাটাখালী, ২ ও ৩ নম্বর কয়রায় বাঁধ ভেঙে গেছে। সাধারণ মানুষের চেস্টায় বাঁধ আটকানোর কাজ চলছে। আর কিছু জায়গায় বাঁধ ও পাকা সড়ক উপচে গ্রামে গ্রামে পানি প্রবেশ করছে।’

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস জানান, জোয়ারের পানির চাপে বিভিন্ন স্থান ভেঙে ও সড়ক উপচে গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। জোয়ার কমলে এসব স্থানে প্রয়োজনীয় মেরামত করা সম্ভব হবে। আর বিভিন্ন স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমের কাজে বস্তা সরবরাহ করা হচ্ছে।

অপরদিকে, পাইকগাছায় আমাবশ্যার গত দু’দিনে প্রবল জোয়ারের পানির চাপে ৪টি ইউনিয়নের ৭টি স্থানে ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে ও উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে মৎস্য ঘের, ফসলের ক্ষেত ও বাড়ি-ঘর ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পাউবো’র উদ্যোগে সাময়িকভাবে বাঁধ মেরামত করা হলেও বেতবুনিয়ার আবাসন প্রকল্পের ৫ শতাধিক পরিবার পানির মধ্যে বসবাস করছে।

জোয়ারে উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নে বেতবুনিয়া আবাসন ও গুচ্ছগ্রাম পানিতে থৈ থৈ করছে। এই ইউনিয়নের টেংরামারী ও ভাঙা হাড়িয়ার ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে বুধবার ৫ হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে ফসল ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের উদ্যোগে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙনরোধ করলেও বৃহস্পতিবার দুপুরে কিছু অংশ ভেঙে যায়। বিকেলে ভাটার সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান এস,এম, এনামুল হক ৪ শতাধিক লোক নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধটি মেরামত করেন। এ সময় শতাধিক লোক টেংরামারী পুরাতন গেট সংলগ্ন ওয়াপদার ভাঙনও মেরামত করে।

অপরদিকে, দেলুটি ইউনিয়নের চকরি-বকরি বদ্ধ জলমহল ও গেওয়াবুনিয়ার ওয়াপদার বাঁধ উপচিয়ে জোয়ারের পানি এলাকায় প্রবেশ করে। এতে এলাকায় ব্যাপক মাছ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিপন মণ্ডল জানান, দ্বীপ বেষ্টিত দেলুটি সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার। বুধবার গদাইপুরের কচুবুনিয়া ও লতার কাঠামারীর ওয়াপদার রাস্তা জোয়ারের পানি উপচে শ শ বিঘার চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে বাঁধ দিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করেন।

পাইকগাছার সোলাদানার ভাঙাহাড়িয়ার ভাঙন স্থানীয় লোকদের নিয়ে বুধবার বিকেল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত মেরামত করেছে বলে স্থানীয় ইউিপি চেয়ারম্যান এসএম এনামুল হক নিশ্চিত করেছেন।

ইউপি সদস্য কল্যাণী মণ্ডল জানান, বাঁধ ভেঙে ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। ১৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, ভাঙন কবলিত এলাকা আপাতত আটকানে হয়েছে। এখানে দ্রুত টেকসই বাঁধ দেয়ার ব্যাপারে জরুরী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ- সহকারী মো. ফরিদউদ্দীন জানান, ইতোপূর্বে ৪ বার সরকারি ও স্থানীয়ভাবে বাঁধ মেরামত করা হলেও টেকসই মেরামতের অভাবে বারবার পাইকগাছার এ এলাকাটি ভেঙ্গে জোয়ারের পানি ঢুকছে। বাঁধ মেরামতের জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

নগরকন্ঠ.কম/এআর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com