বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩৮ অপরাহ্ন
তিস্তার চরের সমৃদ্ধি। এখন স্বপ্ন নয়। বাস্তবতায় রূপ পেতে যাচ্ছে। তিস্তা মহাউন্নয়ন পরিকল্পনার মহাযজ্ঞ দৃশ্যমান হচ্ছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনার অন্তরভূক্ত ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন হয়েছে। এই পরিকল্পনায় বেসরকারি খাতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৩০ মেগাওয়াট উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ জাতীয় মূলগ্রিডে যোগ হতে যাচ্ছে। নদীর পরিত্যক্ত বালু চরের বুকে এক খন্ড উপশহর এখন প্রায় দৃশ্যমান।
উৎপাদিত সৌর বিদ্যুৎ সেচ কার্যক্রমে তিস্তার চরের উদ্ধার হওয়া প্রায় ১২ লাখ হেক্টর বালু চর চাষাবাদে ব্যবহার হবে। কম মূল্যে কৃষক সেচ সুবিধা পাবে। জ্বালানি তেল নির্ভর বিদুৎতের চাপ কমবে। সৌর বিদুৎ দিয়ে দিনের বেলা সকাল ৮ টা হতে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ছোট, বড়, মাঝারি, শিল্প কলকারখানা চলবে। সৃষ্টি হবে হাজার-হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের।
জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শৈলমারীর দূর্গম পরিত্যক্ত ধূ-ধূ বালু চরে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লি. সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। প্রায় ১১০ একর বালু চরে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরিগ্রেশনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে। এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে চরের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটেবে। সভ্যতা ও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগবে। র্নিজন চর হতে বহু দুরের ৩টি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ বিদ্যুৎ সেবার আওতায় আসছে। প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলতে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান বাড়তে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা ২০২১ সালে প্রতি ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার কার্যক্রম শৈলমারী চরে শতভাগ সফল হতে চলছে। জনকল্যাণে ও সরকারের ব্যয় হ্রাসে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড নিজ খরচে স্থাপিত দুই কিলোমিটার বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন স্থাপন করে নেসকো বিদ্যুত বিক্রয় ও বিতরণে সহায়তা করেছে। ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার ৫৮টি সৌর প্লেট বসিয়ে তাদের দপ্তরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের ব্যবহার করেছে। সেখানে সোলার বিদ্যুৎ দিয়ে তারা কর্মকর্তার দপ্তরে এসি চালাচ্ছে। চরে এসি। ভাবতে অবাক লাগে।
লালমনিরহাট জেলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। পাল্টে গেছে চরে বসত বাড়ির গ্রামীণ চিত্র। চরবাসি সারাদেশের মানুষের মতো মুলধারার অর্থনীতিতে ফিরতে চলেছে। সবচেয়ে উপকৃত হবেন গ্রামের শিক্ষার্থীরা ও কৃষক পরিবার।
ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লি. সূত্রে জানা গেছে, সোলার কেন্দ্র যাতায়াতে ও নির্মাণ সামগ্রী, ভারী যন্ত্রপাতি, যানবাহন, শ্রমিক – কর্মচারী পরিবহনে ইন্ট্রাকো কয়েক কোটি টাকা নিজ ব্যয়ে চরে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা, দুটি স্টীলের বেইলি ব্রিজ, ১৮ টি কালভার্ট ও বক্স কালভার্ট নির্মাণ করেছে। কালভার্টের কাজ শেষ পর্যায়ে। সেতুর কাজ চলছে। নদী ভাঙন রোধে ৪ কি.মি. সাই ওয়াল নির্মাণ করেছে। দূর্গম অন্ধকারে আচ্ছন্ন চরাঞ্চলের প্রায় ১৬ হাজার মানুষের ঘরে বিদ্যুত পৌছে দেয়ার সকল আয়োজন প্রায় চুড়ান্ত পর্যায়ে।
সৌরশক্তি দিয়ে সরাসরি দিনের বেলায় সেচ পাম্প চলবে। দিনের বেলায় সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে সাশ্রয়ে চাহিদা মেটানো যাবে। চরের জমিতে সোলার সিস্টেম মডেলে সৌর প্যানেল বসানোয় আবাদি জমির অপচয় রোধ পাবে। চরাঞ্চলের একই জমিতে একই সময় বিভিন্ন ধরণের ফসল (দ্বি-স্তর কৃষি প্রযুক্তিতে) চাষাবাদে ফলন বাড়বে। উত্তরাঞ্চল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন হবে। প্রচলিত কৃষিও লাভজনক হবে।
সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্লান্ট ইনচার্জ প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান জানান, জোগেন বানিয়ার ঘাট ও জামির বাড়ি ঘাট দু’টি এই পাওয়ার প্লান্টের খুব কাছে। পাওয়ার প্লান্টের রাস্তা ব্যবহার করে এই ঘাটের মানুষ যাতাযাতে সুবিধা পাবে। কোম্পানির নিজ অর্থায়নে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি এ্যাপরোজ লোহার ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোদমে উৎপাদনে যাবে। ইরিগ্রেশন মৌসুমকে র্টাগেট করে জোরেসোরে ফিনিশিং কাজ চলছে।