শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় একটি জিনের সন্ধান পেয়েছেন। এই জিনটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের শরীরে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে গবেষক দল। অন্যদিকে, ইউরোপীয়দের শরীরে এই জিনটি প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষের শরীরে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এই জিনটি প্রায় দুই শতাংশ আফ্রিকান-ক্যারিবীয় অঞ্চলের মানুষের শরীরে রয়েছে, এবং ১.৮% পূর্ব এশীয় বংশোদ্ভূতদের শরীরে রয়েছে।
এই জিনটি কোভিড সংক্রমণের কারণে ফুসফুস বিকল করে দেয় এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায় বলে জানিয়েছে বিজ্ঞানীরা। এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমানোর উপায় হচ্ছে টিকা নেয়া।
দ্য নেচার জেনেটিকস নামে একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষের কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কেন বেশি এমন একটি গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। খবর: বিবিসি
এর আগে জিনের ওপর চালানো গবেষণার ধারাবাহিকতামূলক পরীক্ষায়, সেইসঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং নতুন অণু সংক্রান্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এই নির্দিষ্ট জিনটির সন্ধান পেয়েছেন। কোভিডের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য দায়ী এই জিনটির নাম- এলজেডিএফএল১ (LZTFL1)।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক জেমস ডেভিস বলছেন, এই ঝুঁকিপূর্ণ জিনটি সব ধরনের জনগোষ্ঠীর শরীরে সমান অনুপাতে না থাকার বিষয়টি বিজ্ঞানীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, একজন মানুষের ঝুঁকি কম বেশি হওয়ার পেছনে অন্যান্য কারণও থাকে – বিশেষ করে বয়সের বিষয়টি।
তিনি বলেন, ‘আমরা তো চাইলে বংশগতভাবে পাওয়া শরীরের জিন বদলে ফেলতে পারব না। কিন্তু এই গবেষণার ফলাফল এটা প্রমাণ করছে যে এই জিন যেহেতু একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য বাড়তি ঝুঁকির কারণ, তাই এই জনগোষ্ঠীর জন্য টিকা নেয়াটা বিশেষভাবে ফলদায়ক হতে পারে।’
কীভাবে সুরক্ষা নষ্ট করে
গবেষকেরা বলছেন, এই জিন যাদের শরীরের আছে করোনা হলে তাদের ফুসফুস বেশিরকম আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে।
তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ফুসফুসকে বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে যে কোষের আস্তরণ থাকে, যা কোভিড সংক্রমণ হলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কাজ করে, এই জিন সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া নষ্ট করে দেয়।
ফুসফুসের আবরণের এই কোষগুলো যখন করোনার মুখোমুখি হয়, তখন তারা প্রতিরক্ষা কৌশল হিসেবে চেহারা ও কার্যপদ্ধতি বদলে বিশেষ ধরনের কোষে রূপান্তরিত হয়।
করোনা কোন কোষের সঙ্গে আটকে থাকার জন্য যে প্রোটিনের ওপর নির্ভর করে তার নাম এসিই-২। ফুসফুসের আবরণের কোষগুলো তাদের আচরণ বদলে ফেলে এই প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, ফলে এই প্রোটিনের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।
কিন্তু যাদের শরীরে জিনটি আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া একেবারেই কাজ করে না। ফলে কোভিডের জীবাণু ঢুকলে, তাদের ফুসফুসের কোনো সুরক্ষা শরীর দিতে পারে না।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই জিনটি ফুসফুসকে বিকল করে মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। তবে শরীরের অন্য রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এই জিন ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না। ফলে টিকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ালে এই জিন সেটা নষ্ট করতে সক্ষম হয় না। কাজেই টিকা কার্যকর থাকে বলে তারা বলছেন।
এই বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই আবিষ্কারের ফলে সুনির্দিষ্টভাবে ফুসফুস বাঁচানোর জন্য বিশেষ ওষুধ উদ্ভাবনের পথ খুলে যাবে।