শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন

কক্সবাজারে ‘বিচ ক্লিনিং’, ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্মকর্তার সাথে ম্যাজিস্ট্রেটের বাদানুবাদ

বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজারের সৈকতে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেই চলেছে। সৈকতে গতকাল মঙ্গলবার একটি শিল্প গ্রুপের বিচ ক্লিনিং নিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সাথে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের বাদানুবাদের ঘটনা ঘটেছে। এতে করে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নেতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর তাতে কক্সবাজারের প্রতি ভ্রমণকারীরা দিন দিন বিমুখ হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, নিজেদের ভ্রমণসূচির সঙ্গে বিচ ক্লিনিং (সৈকত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মসূচি) কার্যক্রম যোগ করেছিলেন একদল পর্যটক। নিজেদের উৎসবে বাড়তি আনন্দ যোগ করার পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কাজের অংশীদার হতে এমন উদ্যোগ নেন তারা। কিন্তু এ কাজে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির অনুমতি নেওয়া হয়নি- এমন কারণ দেখিয়ে বিচ ক্লিনিং করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন রাজধানী ঢাকার একটি শিল্প গ্রুপের ৬ শতাধিক কর্মী।

জানা গেছে, আরএফএল-প্রাণ গ্রুপের ৬ শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারি কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে যান। তারা গতকাল মঙ্গলবার সকালে সৈকতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা (বিচ ক্লিনিং) অভিযানে নামেন। আরএফএল গ্রুপের ওয়াকার ফ্যুটওয়্যার প্রধান বিপনন কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান জানান, সৈকতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে তারা বিচ ক্লিনিং করছিলেন। তাদের সাথে এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তাসহ কয়েকজন সদস্যও ছিলেন। বিচ ক্লিনিং অভিযানের মূল উদ্যোক্তা হিসেবে আয়োজনের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল। তিনি বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে বিশ্বের কাছে আরো বেশি সমাদৃত করতে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এমন মহৎ কাজের চিন্তা করেই এমন কর্মসূচি নেওয়া হয়। সেখানে অনুমতির দরকার পড়ে কিনা তা আমাদের জানা নেই।

সূত্র জানায়, বিচ ক্লিনিং চলাকালীন আকস্মিক জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির বেশ কিছু সংখ্যক কর্মীসহ গিয়ে তাদের এ কাজে আপত্তি তোলেন। আরএফএল গ্রুপের কর্মকর্তারা এসময় আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতায় বিচ ক্লিনিংয়ের কথা জানান। এ নিয়ে ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ট্যুরিস্ট পুলিশের জ্যেষ্ট সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মিজানুর রহমানের (এএসপি) সঙ্গে বাদানুবাদ হয় ম্যাজিস্ট্রেটের। সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তার সাথে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের এ বাদানুবাদের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

বিচ ক্লিনিংয়ে বাধাপ্রদান বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া সৈকতে কোনো কর্মসূচি করা যায় না। বিচ ক্লিনিং কাজে নিয়োজিত আরএফএল গ্রুপের কর্মকর্তারা ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান, তারা কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে এসে স্বেচ্ছায় কাজটি করছিলেন। উন্মুক্ত সৈকতে এ ধরনের ভালো কাজ করতেও জেলা প্রশাসনের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি তারা জানতেন না। এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান ভ্রমণে এসে স্বেচ্ছায় বিচ ক্লিনিংয়ে অংশ নেওয়া লোকজন। ঘটনাটি দুঃখজনক উল্লেখ করে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে শিল্প গ্রুপ আরএফএল পরিবারের সদস্যরা তড়িঘড়ি করে তাদের কর্মসূচি সমাপ্ত করে ফেলেন।

এ বিষয়ে পর্যটনের দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কর্মীরা সকাল-বিকাল সৈকত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকেন। সেখানে কোনো ময়লা-আবর্জনা না থাকা সত্ত্বেও আরএফএল গ্রুপ তাদের প্রচারের মাধ্যমে ব্যবসায়িক স্বার্থে অহেতুক এমন কর্মসূচি পালন করছিলেন। তদুপরি এ ধরনের কর্মসূচি পালনের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু তারা অনুমতি না নেওয়ায় তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে বলে জানান। এডিএম আরো বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ সৈকতে কোনো কর্মসূচি করার জন্য কাউকে অনুমতি দিতে পারে না। তাদের কাজ কেবল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা।

এদিকে, কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করে জানান, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির নামে সৈকতে এরকম হেনস্থার ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও ঘটেছে অনেক ঘটনা। কমিটির সভায় আমি উপস্থিত থেকে অনেক অনিয়মের তথ্য সহকারে প্রস্তাবনা দিলেও এসব সভার কার্যবিবরণীতেও লিপিবদ্ধ করা হয় না। তিনি বলেন, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সৈকতে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের অনুমতি দিয়ে থাকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলেও জানানো হয় না। ট্যুরিস্ট পুলিশের তরফে এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হলেও তাও জানানো হয়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com