বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৩ অপরাহ্ন
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে ১১৯ জন সাংবাদিক হয়রানী, হুমকি, মামলাসহ বিভিন্নভাবে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি ২৯ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এরপর চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় জেলায় ৮ জন করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ছয় মাসের (জানুয়ারি থেকে জুন) মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ১০টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল এবং তাদের ‘নিজস্ব সূত্র’ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
গত ছয় মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে আসক জানায়, এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ছিল উদ্বেগজনক। এ ছাড়া বেআইনী আটকের অভিযোগ ও রহস্যজনক নিখোঁজ, সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়ন, সীমান্তে হত্যা, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বহুল আলোচিত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপপ্রয়োগের মতো ঘটনা ঘটেছে।
আসক দাবি করে, গত ছয় মাসে ১১৯ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানী, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন। জেলাওয়ারী পর্যালোচনা করলে লক্ষ্য করা যায় ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ২৯ জন এবং চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলাতে ৮ জন করে সাংবাদিক রয়েছেন।
আসক জানায়, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও ৭১ টিভির জামালপুর জেলা প্রতিনিধি গোলাম রব্বানী নাদিম গত ১৪ জুন রাতে তাঁর পেশাগত দায়িত্ব শেষে বাড়ি ফেরার পথে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালায় এবং ব্যাপক মারধর করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ জুন তাঁর মৃত্যু হয়। সাংবাদিকের ওপর এ ধরনের হামলা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।
সাংবাদিকের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার আগেও ঘটেছে, দু:খজনক হলেও সত্য যে গত দুই যুগে একজন সাংবাদিকেরও হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়নি কিংবা শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি।
আসক জানায়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন। বিশেষত প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধি শামসুজ্জামানকে সিআইডি পরিচয়ে ভোর রাতে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং দিনভর তাঁকে আটকের ঘটনা সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায়োগিক আচরণ যে অসঙ্গত ও বেআইনি তা প্রতীয়মান হয়েছে। এ ধরনের অমানবিক আচরণের অভিযোগ সাতক্ষীরা জেলায় কর্মরত সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে আটকের সময়ও পুলিশের বিরুদ্ধে উঠেছিল। রঘুনাথ খাঁকে আটকের পর পুলিশ দিনভর অস্বীকার করে প্রায় ৯ ঘণ্টা পর একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।
এ সময়ে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের মামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিরোধ করে তুলতে প্ররোচিত করবে বলে মনে করে আসক। আসকের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ প্রকৃতপক্ষে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত করবে, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরী করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
আইনমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা গ্রহণের পূর্বে বিশেষ সতর্কতা বজায় রাখার যে অঙ্গীকার করেছিলেন তার প্রতিফলন এ ঘটনাসমূহের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করে আসক। বরং উচ্চপদস্থ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রথম আলোর প্রতিবেদক এবং সম্পাদক সম্পর্কে নানা মন্তব্য এ ধরনের মামলা দায়ের করতে অতি উৎসাহীদের অনুপ্রাণিত করছে বলে মনে করছে আসক।