শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১১ অপরাহ্ন
বিশ্ব মন্দার কারণে অনেক দেশে বেকার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বের অন্যতম জনসংখ্যার দেশ চীনও এর বাইরে নয়। সেখানে ক্রমাগত বেকারের সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।আর এই কারণেই তরুণ সমাজ বিয়ে করতে চাই না। কারণ আর্থিকভাবে সচ্ছল নয় এমন ব্যক্তি কখনোই বিয়ে করতে পারে না। এটা তাদের দৃষ্টিতে হাস্যকর। তারা মনে করে অনেক মানুষ চাকরি পেতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। আর আপনি বলছেন বিয়ে করতে। এটা কি করে সম্ভব? সম্প্রাতিক এক জরিপে এই মত উঠে এসেছে।
সরকারি প্রণোদনা সত্ত্বেও উচ্চ যুব বেকারত্ব এবং আর্থিক চাপ চীনের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিয়ের প্রতি প্রবল অনীহার জন্ম দিয়েছে। চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শানসি প্রদেশের একজন স্কুলশিক্ষক ২৯ বছর বয়সী জিংজি হাউ-এর কাছে বিয়ে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গত তিন বছরে তার জন্য প্রায় ২০টি বিয়ের সম্বন্ধ দেখা হলেও জিংজি অবিবাহিত রয়ে গেছেন। বিবাহের সঙ্গী খুঁজে পেতে তিনি কোনো তাগিদও বোধ করছেন না। উচ্চ বেকারত্ব এবং আর্থিক চাপ তরুণদের মধ্যে বিয়ে এবং পরিবার শুরু করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জিংজি DW বলেন -“সবাইকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে হবে এমন কোনো মানে নেই।” জিংজি একা নন। ২০২৩ সালের জুন মাসে চীনের নাগরিক বিষয়ক মন্ত্রকের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, গত আট বছরের মধ্যে সারা দেশে বিবাহ নিবন্ধনের সংখ্যা সর্বনিম্ন ছিল। গত বছর এশিয়ার দেশটিতে মাত্র ৬.৮৩ মিলিয়ন দম্পতি গাঁটছড়া বেঁধেছেন। চীনে ১৯৯০ থেকে ২০০০ এর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক তরুণরা বিশেষ করে নারীরা বিয়ের মতো সামাজিক প্রত্যাশার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েছেন। সর্বশেষ চীনের আদমশুমারি অনুসারে, ২০২০ সালে দেশে প্রথম বিবাহের গড় বয়স ছিল ২৮.৬, যা ২০১০ সালের তুলনায় প্রায় ৪ বছর বেশি।
কিংস কলেজ লন্ডনের লাউ চায়না ইনস্টিটিউটের সিনিয়র লেকচারার ইয়ে লিউ DW কে বলেন যে লিঙ্গ বৈষম্য চীনা কর্মক্ষেত্রে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে রয়েছে বৈষম্যমূলক লিঙ্গ কোটা, গর্ভধারণের সম্ভাবনা এবং মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে নারী প্রার্থীদের মূল্যায়ন।এটি অনেক তরুণীকে তাদের ক্যারিয়ার অথবা একটি পরিবার শুরু করার মধ্যে যে কোনো একটিকে বেছে নিতে বাধ্য করছে।
ইয়ের মতে, “যখন নারীরা শিক্ষায় দীর্ঘ সময় ব্যয় করে, স্বাভাবিকভাবেই তারা বিবাহ এবং মাতৃত্বে প্রবেশের বয়স বিলম্বিত করে।” চীনের একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ২৫ বছরের ক্রিস্টার মতে, বিবাহের এখনই প্রয়োজন নেই।
কারণ বিয়ে ক্যারিয়ারকে প্রভাবিত করতে পারে। চীনের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দাও তরুণদের মধ্যে বিয়ের প্রতি আগ্রহের অভাবের জন্য দায়ী। ২০২৩ সালে, চীনের যুব বেকারত্ব (১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে) রেকর্ড-২০.৮ % এ পৌঁছেছে। চীনা তরুণী শান শান, DW কে বলেছেন যে বর্তমান চাকরির বাজারে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন। চাকরি খোঁজার চাপে বিয়ে নিয়ে চিন্তা করার সময় তিনি পাচ্ছেন না। একইভাবে, সিয়াও গ্যাং, একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার প্রযুক্তি শিল্পে ব্যাপক ছাঁটাইয়ের জেরে নিয়মিত ওভারটাইম কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। কাজের চাপে বন্ধুদের সাথে দেখা করারই সুযোগ পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন সিয়াও। গত বছর চীনের প্রায় ছয় দশকের মধ্যে প্রথম জনসংখ্যা ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে।
টেক্সাস এএন্ডএম ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডুডলি পোস্টন বলেছেন, “চীন একটি গুরুতর জনসংখ্যাগত সংকটে ভুগছে… দিন দিন দেশের জনসংখ্যা কমছে।” তিনি যোগ করেছেন যে চীনা জনসংখ্যার গড় বয়স এখন ৩৮ বছর। ভারতে ২৮ বছর , যা এই বছরের শুরুতে জাতিসংঘের দ্বারা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসাবে চীনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। মে মাসে, চীনের পরিবার পরিকল্পনা অ্যাসোসিয়েশন ২০ টিরও বেশি শহরে পাইলট প্রকল্প চালু করেছে যাতে দুই বা ততোধিক সন্তানের পরিবারকে আবাসন, কর এবং শিক্ষা সুবিধা প্রদান করা যায়। কিন্তু সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও লাভের লাভ কিছু হচ্ছে না।
ক্রিস্টা বলেন, ”মানুষ কেন একটি পরিবার শুরু করবে যখন তারা আর্থিকভাবে সচ্ছল নয় ? আমি মনে করি এটা হাস্যকর স্কিম। আমার মত অনেক মানুষ চাকরি পেতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।” সূত্র : হিন্দুস্থান টাইমস