বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:০৭ পূর্বাহ্ন

বাসে আগুন দিলে বিকাশে পৌঁছে যেত বোনাস

রাজধানীতে বিএনপির ডাকা অবরোধে যাত্রীবেশে বাসে উঠে আগুনের ঘটনায় নির্দেশনায় জড়িত কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এই নেতার নেতৃতে রাজধানীতে প্রতিটি বাসে আগুন দিলে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হতো বিকাশে টাকা। এমন অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলে যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রকিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রকি ছাড়াও গ্রেপ্তাররা হলেন তার সহযোগী সাকিব ওরফে আরোহান (২১)। এ সময় তাদের কাছ থেকে বোতল ভর্তি পেট্রোল উদ্ধার করা হয়। গতকাল রোববার (৫ নভেম্বর) রাতে বাবুবাজার ব্রিজ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

আজ সোমবার (০৬ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

সিটিটিসিপ্রধান বলেন, গত ১ নভেম্বর রাজধানীর মুগদাপাড়া আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মিডলাইন বাসে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে আগুন দিয়ে পালানোর সময় আল আমিন নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। আল আমিন পুলিশের কাছে কার নেতৃত্বে কীভাবে বাসে আগুন দিয়েছে তা স্বীকার করে। এ ঘটনায় সিটিটিসির গোয়েন্দা দল আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরবর্তীতে সে বেশকিছু তথ্য দেয়।

সিটিটিসির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আল আমিন জানায়, তার নেতা বিএনপিকর্মী মিজানুর রহমান। এই মিজানের নেতৃত্বে আরও দুজন কমলাপুর টিটিপাড়া থেকে বাসে উঠে পেছনের সিটে গিয়ে বসে। এরপর সঙ্গে থাকা পেট্রোল ঢেলে বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মিজানসহ তিনজন পালিয়ে যেতে পারলেও স্থানীয়রা আল আমিনকে ধরে ফেলে। পরবর্তীতে মিজানকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সিটিটিসিকে জানায়, আমির হোসেন রকি নামের মহানগর ছাত্রদলের একজন নেতার নেতৃত্বে মিজান রাজনীতি করে। এই রকির নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে প্রথম দফায় মিডলাইন বাসসহ বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এই নেতার কাছ থেকে সকল রসদ পেয়ে চারজন বাসে আগুন দেওয়া শুরু করে। এর বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে তারা।

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, প্রথম দিনের অবরোধে মিজান এসে আল আমিনের কাছে বোতলে পেট্রোল ও টাকা দেয়। এ সময় মিজান তাদের আশ্বস্ত করে, তাদের দল ক্ষমতায় আসছে। কোনো সমস্যা হবে না। কমলাপুরের টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও সড়কে চলাচল করা বাসে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় আল আমিনকে। প্রতিটি বাসে আগুন দেওয়ার জন্য তিন হাজার টাকা বোনাস বিকাশ করেন রকি। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফা অবরোধে বাসে আগুন দেওয়ার জন্য ডাবল বোনাস ঘোষণা করেন রকি।

দ্বিতীয় দফা অবরোধে গতকাল রবিবার রাজধানীতে ১০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সিটিটিসিপ্রধান বলেন, গতকালও (রবিবার) রকির নির্দেশনায় দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। পাশাপাশি রকির নির্দেশে যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে আগুন দেওয়ার সময়ে হাতেনাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমাদের গোয়েন্দাদের তৎপরতায় আগুন ঠেকিয়ে দেওয়া হয়। এটাতে ব্যর্থ হওয়া রকি তার সহযোগী সাকিবকে নিয়ে কেরানীগঞ্জে এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিএনপির এক নেতার কাছে যাচ্ছিলেন। পরবর্তীতে আমরা তার পিছু নিয়ে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে পেট্রোলসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ছাত্রদলে যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রকির কাছ থেকে আমরা বেশকিছু তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি। সে কি কি কাজ করেছে এই দুই দফা অবরোধে, কার কার নির্দেশনা ছিল, কারা টাকা দিয়েছে সব তথ্য আমরা পেয়েছি বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার।

তিনি বলেন, প্রথম দিনের অবরোধে কি পরিমাণ জ্বালাও-পোড়াও করেছে সেই ফুটেজ আমরা রকির মোবাইলে পেয়েছি। অবরোধ কর্মসূচিতে বাসে আগুন দিতে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কারা কারা সহযোগিতা করেছে আমরা সবার নাম পেয়েছি। তারা আরও একটি ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে, প্রথমদিন অবরোধে একটি বাসে আগুন দিলে যা পুরস্কার দিত, দ্বিতীয় অবরোধে সেটি ডাবল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কার পাঠানো হতো বিকাশে। আমরা রকির কাছ থেকে নির্দেশদাতাদের তথ্য পেয়েছি। রকির নেতৃত্বে আরও কয়েকটি দল সক্রিয় রয়েছে।

পুরস্কারের অর্থদাতা কারা জানতে চাইলে সিটিটিসিপ্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা সবার তথ্য পেয়েছি। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে কারো নাম প্রকাশ করছি না। তবে একে একে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com