বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৪ অপরাহ্ন
কঠোর আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেও নির্বাচনী ট্রেন চালু হওয়ায় বিএনপিতে এক ধরনের উদ্বেগ থাকলেও এখনই আশা ছাড়ছে না দলের নেতাকর্মীরা। চলতি সপ্তাহের শেষদিকে দুই কারণে অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করছে দলটি। এক. আজ রোববার থেকে আন্দোলন আরও বেগবান হবে এবং দুই. আন্তর্জাতিক চাপও আরও বৃদ্ধি পাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। ইসির ভূমিকার চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। এ ছাড়া পরবর্তী কর্মসূচি ও পরিকল্পনা নিয়ে কয়েক দিন ধরে দলের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতও নিচ্ছে দলটি।
বিএনপি সূত্রমতে, তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে বিরোধী দলের আন্দোলন দমানো এবং নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তারের যে অভিযান চলছে, তাতে নির্বাচন কমিশন কী ভূমিকা নিচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন নেতারা। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, তা কিভাবে প্রয়োগ করে, সে বিষয়টির ওপর বিএনপি নজর দিয়েছে।
হাইকমান্ডের আস্থাভাজন বিএনপির মধ্যসারির এক নেতা বলেন, তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নির্বাহী বিভাগের ওপর সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ থাকার কথা। কিন্তু বিএনপির আন্দোলন দমানো এবং নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত আছে। তাতে ইসির ভূমিকা আরও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ফলে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইসির আচরণও সরকারের মতোইÑ এরই মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হচ্ছে। একতরফা নির্বাচনের আয়োজনের সব ব্যবস্থা যে ইসি করছে তা জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রমাণসহ জানানো হচ্ছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মহলও বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছে। চলতি সপ্তাহেই এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পদক্ষেপ সামনে আসতে পারে। পাশাপাশি বিএনপির বিরতিহীন আন্দোলন চলছে, চলবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর করণীয় ঠিক করতে দলের শীর্ষ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা গত কয়েক দিনই ধারাবাহিক বৈঠক করেছে। ৪৮ ঘণ্টার এ হরতাল শেষে এক দিন বিরতি দিয়ে চলতি সপ্তাহের শেষ দুদিন ফের হরতালের কর্মসূচি আসতে পারে। এরপর জনস্বার্থে শুক্র ও শনিবার বিরতি দিয়ে আগামী সপ্তাহ থেকে দেশব্যাপী ফের অবরোধের কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি ও শরিকরা। এসব কর্মসূচি সফলে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে জেলা পর্যায়ে মহাসড়কগুলোতে পিকেটিং বাড়ানো হবে। হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি ঢাকাকেন্দ্রিক বিকল্প কর্মসূচির বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, একতরফা তফসিল বাতিল এবং একদফা দাবিতে তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সরকারের অব্যাহত দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা তাদের রয়েছে।
এদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক মহলও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে এমন আশা করছে বিএনপি নেতারা। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান মনিটর করছে। যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলেও বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে সরকারের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের চাপ অব্যাহত। এ ইস্যুতে আগামী দিনগুলোতে তাদের তরফ থেকে সরকারের ওপর নতুন করে আরও চাপ তৈরি হতে পারে। ফলে তপসিল হলেও সরকার শেষ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ উপেক্ষা করতে পারবেন না। চলমান আন্দোলন এবং নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত চাপে শিগগির অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হতে পারে।
সূত্রমতে, তফসিল ঘোষণার পরপরই অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও এখনই বিচলিত নয় বিএনপি। এর মধ্যে দিয়ে নির্বাচন হয়ে যাবে, সেটিও মনে করছে না তারা। কারণ এ দেশে পুনঃতফসিল হওয়ার একাধিক উদাহরণ রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আব্দুল মঈন খান যায়যায়দিনকে বলেন, দেশে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের একাধিক উদাহরণ আমরা দেখেছি। এমন তফসিল ঘোষণার পর একটি নির্বাচন সম্পূর্ণ বাতিলেরও উদাহরণ দেখেছি। তাই সময়ই বলে দেবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র কোন দিকে যাচ্ছে।