সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন
সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান হরতাল-অবরোধের মধ্যেও রাজধানীসহ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে বার্ষিক পরীক্ষা কিংবা মূল্যায়নের কার্যক্রম।
চলতি নভেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে স্কুলের সব পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশ রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। হরতাল-অবরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও বাস-ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে সন্তানের সার্বিক নিরাপত্তা এবং পড়াশোনা নিয়ে অভিভাবকরা উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। তারা ছুটির দিনে এবং কর্মসূচির বিরতির দিনে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সেটি সম্ভব না হলে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিও তুলেছেন। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এখন অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
অন্যদিকে, সরকারবিরোধী দলগুলোর হরতাল-অবরোধে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরাও। তারা বলছেন, হরতাল-অবরোধে শিক্ষার্থীদের স্কুলে না আসার অপশন থাকলেও পরীক্ষার ক্ষেত্রে তা করা কঠিন। বাধ্য হয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ছুটির দিন শুক্র-শনিবার এবং হরতাল-অবরোধের বিরতির দিন পরীক্ষা নিচ্ছে। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ প্রতিপালনে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান হরতাল-অবরোধের মধ্যেও পরীক্ষা নিতে বাধ্য হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে স্কুলগুলোকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা শেষ করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে চায় তা নিতে পারে। এজন্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের কোনো নিষেধ নেই। তবে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর বেলাল হোসাইন বলেন, ‘নির্বাচনের বছর হওয়ায় একটু আগেভাগেই পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। এজন্য নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এদিকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে হরতাল-অবরোধও চলছে। তাই অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হরতাল-অবরোধের ফাঁকে ছুটির দিনে পরীক্ষা নিচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের আলাদা কোনো নির্দেশনা নেই। কিন্তু অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই।’
এদিকে অভিভাবকরা বলছেন, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি-ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় অবস্থিত উদয়ন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান উদ্দিনের বাবা মো. জুলফিকার বলেন, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য হলেও অন্তত ১৫ দিন রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত রাখা উচিত। আমার ছেলে নিজে স্কুলে আসতে পারে। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে তাকে এখন আর একা পাঠাই না। অফিস রেখে তাকে স্কুলে নিয়ে আসতে হচ্ছে। পরীক্ষা শেষ করে তাকে বাসায় দিয়ে তারপর অফিসে যাবো। বছরের শেষে এ ধরনের কর্মসূচি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।’
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফেরদৌসীর বাবা তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে মধ্যে স্কুলে পরীক্ষা চলছে। কিন্তু বাচ্চারা কীভাবে আসবে সেই চিন্তা কেউ করছে না। কারণ তাদের সন্তানরা বিদেশে পড়াশোনা করে। দেশে পড়লেও তারা নিরাপত্তা নিয়েই স্কুলে আসে। যত কষ্ট আমাদের মতো মানুষের।’
বিরোধী দলগুলোর এসব কর্মসূচির মধ্যেই রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। ছুটির দিনগুলোতে সুযোগ বুঝে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
রোববার থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়ন পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী জানান, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে। এজন্য শুক্র, শনি ও মঙ্গলবার তিন দিন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। তবে যেসব ক্লাসে বিষয় বেশি সেসব ক্লাসে অন্যান্য দিনেও পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের নিজের সন্তানকে সাবধানে স্কুলে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘স্কুলগুলো পড়েছে ঝামেলায়। একদিকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে, অন্যদিকে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দাবি হলো রাজনৈতিক দলগুলোকে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করতে হবে। কিন্তু তারা করছে না। আমরা চাই কোনো কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেন রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার না হয়। কিন্তু গত ১৫ দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আমরা অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন।’