শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন

চাঁদপুরের ছয় হাজার পল্লী চিকিৎসক মারাত্মক ঝুঁকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, নগরকন্ঠ.কম : মহামারী করোনার এই ক্রান্তিকালে চাঁদপুরের প্রায় ছয় হাজার পল্লী চিকিৎসক একরকম ঝুঁকিতে ও নানা সমস্যায় দিন কাটাচ্ছে। তারপরও তারা অনেকটা সামনের সারির যোদ্ধার মতো প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে চাঁদপুরের বেশ কয়েকজন পল্লী চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে কিংবা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।

করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে সারা দেশে হাসপাতাল, প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক যেখানে সাধারণ রোগী দেখা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে চাঁদপুরে প্রায় ছয় হাজার পল্লী চিকিৎসক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত গ্রামের সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

চাঁদপুরের প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান কামরাঙ্গা গ্রামের জামাই ফয়সাল। অসুস্থ হলে খবর দেয়া হয় রব ডাক্তারকে। তিনি দ্রুত ছুটে যান। গিয়ে প্রেশার ঠিক আছে দেখতে পান। তারপর উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে তিনি ফিরে আসেন। সন্ধ্যায় জানতে পারেন ফয়সাল মারা গেছেন। পরে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তার নমুনা পরীক্ষা করা হলে করোনা পজিটিভ আসে।

তারপর ফয়সালের শ্যালিকা ও শ্বশুরও করোনায় আক্রান্ত হন। করোনামুক্ত হয়ে সপ্তাহখানেকের মাথায় মারা যান তার শ্বশুরও। আর ১৪ দিনের জন্যে হোম কোয়ারেন্টিনে চলে যেতে হয় পল্লী চিকিৎসক আবদুর রবকে।

এমনই প্রশিক্ষণ নেয়া হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা বাজারে পল্লী চিকিৎসক অমল ধর (আরএমপি), চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার বাসাবাড়িয়া গ্রামের আবু ইউসুফ (এলএমএএফ) নিয়মিত রোগী দেখেন। অসুস্থদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। কখনোই বুঝতে পারেন না কে করোনাযুক্ত আর কে করোনামুক্ত।

চলতি মাসে করোনায় মারা গেছেন বাবরুহাট বাজারের পল্লী চিকিৎসক আশুতোষ আচার্যী, ফরিদগঞ্জের সহিদউল্লাহ পাটোয়ারী, চাঁদপুরে সদরে ঢালীরঘাট এলাকার আবু তাহের ভুঁইয়াসহ জেলার বেশ কয়েকজন পল্লী চিকিৎসক।

এ বিষয়ে একাধিক পল্লী চিকিৎসক জানান, সারা বছরই কেউ না কেউ জ্বর কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। আমরা চিকিৎসা দিই। তখনো ভাবিনি তারা করোনা রোগী কি না। এভাবেই মানুষের জন্যে আমরা কাজ করে যাই। কিন্তু বিনিময়ে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা পাই না। এমনকি একটা মাস্ক পর্যন্ত উপহার হিসেবে আমাদের ভাগ্যে জোটে না। তাদের মতে এই জেলায় রেজিস্টার্ড-আন-রেজিস্টার্ড প্রায় ৬ হাজার পল্লী চিকিৎসক রয়েছেন।

চাঁদপুর জেলা অফিস তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী মো. মোস্তফা জামান জানান, চাঁদপুর জেলা প্রায় ২২ হাজার ফার্মেসি রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোর ট্রেড লাইসেন্স আছে। আমাদের কাছে নিবন্ধন নিয়েছে কেউ কেউ। নিবন্ধনের বাইরে অনেক ফার্মেসি রয়েছে। তবে চাঁদপুরে কী পরিমাণ পল্লী চিকিৎসক আছে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. শাখাওয়াত উল্ল্যাহ বলেন, যে কোনো মানুষ অসুস্থ বোধ করলে প্রথমেই পল্লী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকে। মহামারি করোনা সময়েও তাদের চিকিৎসায় অনেকেই হয়তো ভালো হয়ে যাচ্ছে। যা আমাদের জানা নেই। এ কঠিন দুর্যোগের সময়ে তাদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখায় ধন্যবাদ জানাই।

নগরকন্ঠ.কম /এআর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com