বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, নগরকন্ঠ.কম : বড়লেখায় কয়েক কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন ৫ সেবায়েতকে দুদকে তলব করেছে।
১২ আগস্ট হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে হাজিরের নোটিশ দেয়া হলেও কেউ সেখানে উপস্থিত হননি। নোটিশপ্রাপ্তরা হলেন- রাধাকান্ত পুরকায়স্থ, শ্যামাকান্ত পুরকায়স্থ, অরবিন্দু রায় পুরকায়স্থ, রনেন্দ্র কুমার রায় পুরকায়স্থ (মৃত) ও রুদ্রেন্দ্র কুমার রায় পুরকায়স্থ ভোলা। সোমবার দুদকের (হবিগঞ্জ) একটি অনুসন্ধান টিম বড়লেখার কয়েকজন দেবোত্তর ভূমি ক্রেতার জবানবন্দি নিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে- উক্ত দেবোত্তর সম্পত্তির অন্যতম সেবায়েত রনজিৎ কুমার রায় পুরকায়স্থ জাল কাগজে লাখ লাখ টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি করেন। কিন্তু তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক হওয়ায় দুদক তাকে তলব করেনি।
উপজেলার পানিধারের দেবভক্ত প্রয়াত জমিদার রামকুমার রায় পুরকায়স্থ ৭৫ বছর পূর্বে উইলের মাধ্যমে কাঁঠালতলী মৌজাসহ কয়েকটি মৌজায় ১৩০৩ একর ভূমি শ্রীশ্রী লক্ষ্মী নারায়ন জিউর নামে দেবোত্তর করেন। দলিলের ৬নং শর্তানুযায়ী তিনি সেবায়েতগন কিংবা তাদের মধ্যে কেউ উক্ত দেবোত্তর সম্পত্তি দান, বিক্রি, হস্তান্তর, কোথাও দায়বদ্ধ কিংবা ভাগবাটোয়ারা করতে পারবেন না। বংশানুক্রমিক উত্তরাধীকারীগণ দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত থাকবেন। ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ না থাকলেও কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি সেবায়েতরা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রি করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাঁঠালতলী মৌজায় এসএ ৬৪৮ দাগের ৩০ শতাংশ দেবোত্তর সম্পত্তি সেবায়েত রনেন্দ্র কুমার পুরকায়স্থ, রমা কান্ত পুরকায়স্থ, রাধাকান্ত পুরকায়স্থ ও শ্যামাকান্ত পুরকায়স্থ ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর ৪৭১৫নং দলিলে ছিদ্দিকুর রহমান, ফয়জুর রহমান ও সুয়েদুর রহমানের কাছে বিক্রি করেন। সেবায়েত রনেন্দ্র রায় পুরকায়স্থ, রুদ্রেন্দ্র রায় পুরকায়স্থ, রমাকান্ত রায় পুরকায়স্থ, রাধাকান্ত রায় পুরকায়স্থ, শ্যামাকান্ত রায় পুরকায়স্থ ৬১ শতাংশ দেবোত্তর জমি ভুয়া কাগজে নিজেদের নামে রেকর্ডভুক্ত করে ২০০৫ সালে ৩০৬৬নং দলিলে আজমল আলীর কাছে হস্তান্তর করেন। সেবায়েত রনজিৎ কুমার রায়সহ অন্যরা ২০১৫ সালে ১৫৪৩নং দলিলে ৭ শতাংশ ভূমি দুই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। সেবায়েত রাধাকান্ত রায়, শ্যামাকান্ত রায় ও রনজিৎ কুমার রায় (বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক) ২০১৪ সালে ১৪ শতাংশ দেবোত্তর সম্পত্তি আব্দুর রাজ্জাকের কাছে হস্তান্তর করেন। রনজিৎ কুমার রায়সহ সেবায়েতরা ৬৩৯/২০১৭নং দলিলে নিজেদের সৃজিত জাল কাগজে ২০ শতক দেবোত্তর ভূমি ৬৫ লাখ টাকায়, সেবাইত রুদ্রেন্দ্র পুরকায়স্থ ভোলা ১৭ শতাংশ দেবোত্তর ভূমি ১০ লাখ টাকায় হস্তান্তর করেছেন।
দুদকের হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জানান, দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি/হস্তান্তর সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তের অনুমোদন দেয়ায় প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণের জন্য ৫ সেবায়েতকে ১২ আগস্ট দুদক হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে তলব করা হয়। কিন্তু কেউ উপস্থিত হননি। তবে দুই-একজন যোগাযোগ করে সময় চেয়েছেন। দুদক ধাপে ধাপে অভিযোগের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সোমবার দুদকের একটি অনুসন্ধান টিম কয়েকজন দেবোত্তর ভূমি ক্রেতার জবানবন্দি নিয়েছে।
নগরকন্ঠ.কম/এআর