বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৩০ অপরাহ্ন

অনুমোদনের আগেই ব্যয় বাড়ছে ২৪৩ শতাংশ

তথ্য ও প্রযুক্তি ডেস্ক, নগরকন্ঠ.কম : অনুমোদনের আগেই প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ২৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ এর আগে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল ৩৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

পুনর্গঠিত প্রস্তাবে ৮৯৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে ১২৬৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশন বলছে- প্রকল্পের কার্যপরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ব্যয় বেড়েছে।

কিন্তু এক বছরের মধ্যেই কার্যপরিধি ও ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি তাদের কাছে যৌক্তিক মনে হচ্ছে না। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ‘বিটিসিএলের বিদ্যমান অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্কের উন্নয়ন ও রিং টাইপ নেটওয়ার্কে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাবনায় উঠে এসেছে এ চিত্র। প্রকল্পটি নিয়ে আগামী রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, পিইসি সভার আগে পর্যন্ত এসব তথ্য মন্ত্রী পর্যন্ত আসে না। তবে বিষয়টি যেহেতু আমি জেনেছি, অবশ্যই খতিয়ে দেখব। পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সদস্য (সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গিস যথেষ্ট শক্ত ভূমিকা পালন করছেন। পিইসি সভায় যদি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা পরিকল্পনা কমিশনকে ব্যাখ্যা দিয়ে সন্তুষ্ট করতে না পারে তবে অবশ্যই সেটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হবে না।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, পরিকল্পনা কমিশন যে প্রশ্ন তুলেছে সেটি যথার্থ। কেননা কী এমন ঘটনা ঘটল যে এক বছরের মধ্যে এত নতুন কার্যক্রম যোগ করতে হল? এ ছাড়া যতটা ব্যয় বেড়েছে ততটা কাজ যুক্ত হয়েছে কিনা সেটি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। তবে রেট সিডিউল বৃদ্ধির কারণে এত ব্যয় বাড়ার কথা নয়। কেননা টেলিকম পণ্যের দাম সাধারণত বিশ্বব্যাপী নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সেখানে রেট সিডিউল বাড়লেও প্রকল্প ব্যয় এত বাড়ার কথা নয়।

এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের যুগ্ম প্রধান মো. মুসলেহ উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূত কোনো কাজ হয়নি। ২০১৮ সালে যখন প্রকল্পটি তৈরি করা হয় তখন ২০১৪ সালের রেট সিডিউল অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল। কিন্তু এখন সর্বশেষ রেট সিডিউল ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্কোপ অব ওয়ার্ক (কাজের পরিধি) বাড়ানোয় প্রকল্পের মোট ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রক্রিয়াকরণ শেষে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে। এটি বাস্তবায়ন করবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ১২৬৫ কোটি ১৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ে এটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানেও পিইসি সভায় প্রশ্ন তুলতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। বলা হয়েছে- বিটিসিএল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি। কিন্তু প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রাক্কলনে কোনো নিজস্ব অর্থের প্রস্তাব করা হয়নি।

সমুদয় অর্থ ইক্যুইটি হিসেবে সরকারের কাছে চাওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর কর্পোরেশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিসমূহকে স্থানীয় বা বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ প্রদানের সংশোধিত শর্তাবলিতে এটি নেই। কেননা সেখানে বলা হয়েছে, বিটিসিএলের জন্য ঋণ ও ইক্যুইটির অনুপাত ৬৭:৩৩ হতে ৬০:৪০ পর্যন্ত নির্ধারণের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

পিইসি সভার জন্য তৈরি কার্যপত্রে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেলের ছাড়পত্র সংগ্রহ আবশ্যক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ থেকে জনবল নির্ধারণসংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ নেয়া হয়েছে। মনিটরিং সেল থেকে কোনো ছাড়পত্রই নেয়া হয়নি। ডিপিপির অনুচ্ছেদ-৯ এ প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক ব্যয় পর্যালোচনা করে কমিশন দেখেছে, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ আট কোটি ৪২ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। যার পুরোটাই সরকারি খাতে।

প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতে প্রস্তাবিত ২২৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার ব্রেকআপ দেয়া হয়নি। অঙ্গভিত্তিক ব্যয় বিভাজনে প্রস্তাবিত যন্ত্রপাতির ব্রেকআপ উল্লেখ করার প্রয়োজন রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় অবশিষ্ট ৩৯২ কোটি টাকার কোনো ক্রয় পরিকল্পনা দেয়া হয়নি। এছাড়া প্রকল্পের আর্থিক ও অর্থনৈতিক ব্যয় বিশ্লেষণে ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট রেইট হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন থেকে সব উন্নয়ন প্রকল্পের আয়-ব্যয় বিশ্লেষণে ১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট রেইট ব্যবহারের শর্ত রয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বিটিসিএল থেকে বলা হয়েছে, বিটিসিএলের বিদ্যমান অপটিক ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের প্রায় সব উপজেলায় এবং এক হাজারেও বেশি ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কে যুক্ত করার কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। সারা দেশে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও রিং টাইপ নেটওয়ার্কে রূপান্তরের জন্য এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

নগরকন্ঠ.কম/এআর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com