শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২১ পূর্বাহ্ন

ফিরে গেল পেন্সিলে আঁকা পরী

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ৬০ লাখ টাকা সরকারি অনুদান পেয়েছিলেন মেধাবী পরিচালক অমিতাভ রেজা। চলচ্চিত্রটির জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু এখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চলচ্চিত্রটি না করার। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া অনুদানের টাকাও ফেরত দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার সাহিত্য ও সৃজনশীল সব বিষয় দেখভাল করার জন্য গঠন করা হয়েছে একটি ট্রাস্টি বোর্ড। এ ট্রাস্টি বোর্ডে হুমায়ূন পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ চলচ্চিত্রটি সরকারি অনুদান পাওয়ার পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে আবেদন করা হলে তারা নতুন কয়েকটি শর্ত আরোপ করেছে বলে দাবি অমিতাভ রেজার। তার মতে, ‘আমি কিন্তু মোটেও শর্তগুলোর বিরোধিতা করছি না। হুমায়ূন আহমেদ স্যারের কর্মের সঠিক সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই নিশ্চয়ই নিয়মগুলো করা হয়েছে। তবে সেটি পালন করে এ চলচ্চিত্র বানানো মোটেও সম্ভব নয়। এভাবে মুভি বানাতে গেলে যে পরিমাণ টাকা লাগবে, ওই পরিমাণ টাকা দিয়ে আমি এ সিনেমা বানাতে চাই না।’

অমিতাভ রেজা জানান, পাঁচ-সাত বছর ধরে এ চলচ্চিত্রের গল্প ও স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করে আসছিলেন তিনি। কয়েকটি শর্তের কারণে চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসাটা তার জন্য ভীষণ বেদনাদায়ক। বলেন, ‘একটি চলচ্চিত্রের সঙ্গে একজন নির্মাতার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। একবার প্রেমের সম্পর্ক ছুটে গেলে আর ফিরে আসে না। আমি তো এতদিন মুভিটি নিয়ে ভাবছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, সবকিছু যতটা সুন্দর ও যথাযথ সম্মানের মধ্য দিয়ে করার, করেছি। এরপরও হয়নি। সরকারের টাকা যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকটা ভেবে টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’ গল্পটি নিয়ে কাজ শুরুর আগে লেখক বা তার পরিবারের কাছ থেকে অনুমতি নেননি? জানতে চাইলে অমিতাভ রেজা বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকতে গল্পটা চেয়ে নিয়েছিলাম। ক্যানসার ধরা পড়ার পর সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পথে ফ্লাইটেও স্যার আমাকে এই সিনেমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন। বলেছিলেন, ছবিটা বানাবে না? তাড়াতাড়ি বানায়ে ফেলো।’

বিষয়টি নিয়ে যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক কথা হচ্ছে তখন হুমায়ূন আহমেদ ট্রাস্ট বোর্ডের অন্যতম সদস্য ও লেখকের স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন দেশ রূপান্তরকে বলেন, “একজন শিল্পী তিনি লেখক, কবি বা চিত্রশিল্পী যেই হোক না কেন, তার শিল্পকর্ম যেহেতু একটা ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি, তাই তার একটি ভ্যালু থাকে। সেই ভ্যালুটা হয় শিল্পী নিজে তৈরি করেন আর তিনি না

থাকলে তার উত্তরাধিকারীরা ঠিক করেন। সে ক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সবাই মিলে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু অমিতাভ রেজা ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’র মতো একটি গল্প যে বাজেটে নির্মাণ করতে চেয়েছেন সেটি আমাদের কাছে মনঃপূত হয়নি। তিনি এত ভালো একজন নির্মাতা। তার প্রথম সিনেমা ‘আয়নাবাজি’ সুপারহিট। তার বাজেটও ছিল অনেক বেশি। এরপর তার ‘রিকশা গার্ল’ সিনেমার বাজেটও বেশ বড়। সেখানে হুমায়ূন আহমেদের গল্পটা তো আরও এক্সক্লুসিভ। কারণ হুমায়ূন আহমেদের গল্প নিয়ে মানুষের এখনো এত আগ্রহ। আবার সেটা যখন অমিতাভ রেজা বানাবেন তখন দুটো বিখ্যাত নাম একসঙ্গে আসবে। তখন মানুষের এক্সপেকটেশন অনেক বেড়ে যাবে। তাছাড়া হুমায়ূন আহমেদের পরিবার হিসেবে আমাদেরও তো একটা এক্সপেকটেশন আছে। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের এত ভালো একটা গল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে তিনি যে বাজেট ধরছেন, সেটা আমাদের কাছে সম্মানজনক মনে হয়নি। আর আমাদের কাছে যেটা মানানসই মনে হয়েছে সেটা তার নাকি তার বাজেটের বাইরে। এর বাইরে আর কঠিন কিছু নেই এখানে।”

এটা তো গেল বাজেট প্রসঙ্গ। কিন্তু অমিতাভ রেজা বলেছেন কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে হুমায়ূন আহমেদ ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষ থেকে। সে বিষয়ে শাওন বলেন, ‘এখানে আসলে শর্তের কিছু নেই। ইন্টারন্যাশনাল কপিরাইটের যে নিয়ম, আমরা সেটাই তার কাছে তুলে ধরেছি। কিশোর কুমার মারা গেছেন বহু আগে। কিন্তু তার গান থেকে এখনো তার পরিবার রয়্যালিটি পায়। যেভাবে হুমায়ূন আহমেদের কোনো বই নতুন করে ছাপা হলে আমরা রয়্যালিটি পাই। কিন্তু এই চর্চা আমাদের দেশে শুরু হয়নি, সবাই করে না, অনেকে এ ব্যাপারে জানেই না। যিনি শিল্পী, যিনি শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছেন, তার দিকটাও তো দেখতে হবে। হুমায়ূন আহমেদের মতো একজন এক্সক্লুসিভ রাইটারের একটি গল্প আমি নেব, তখন তো অবশ্যই তার মূল্যমান দিতে হবে। এজন্য আমরা বলেছি, দেশে নয়, কিন্তু বিদেশের কোনো বড় প্ল্যাটফর্মে সিনেমাটি প্রদর্শিত হলে সেখান থেকে আমাদের রয়্যালিটি দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, “এর আগে জয়া আহসান ‘দেবী’ করেছেন। তখন তো এ ধরনের কথা উঠে আসেনি। কারণ তার আয়োজনে আমরা সবাই খুশি ছিলাম। হুমায়ূন আহমেদের গল্প নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে আরও অনেকে আলোচনা করেছেন আমাদের সঙ্গে। তার গল্পের এক্সক্লুসিভনেস বজায় রাখতে যে ধরনের মূল্যমান নির্ধারণ করতে হয় আমরা সেটা করেছি।” লেখকের ছেলে নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূনও একই মত প্রকাশ করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com