শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

আফজাল হোসেনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন তানভীর তারেক

দেশবরেণ্য নির্মাতা-অভিনেতা আফজাল হোসেনের চলচ্চিত্র ‘মানিকের লালকাঁকড়া’-তে সংগীত পরিচালনা করলেন তানভীর তারেক। একই সঙ্গে চলচ্চিত্রের গানে ও দৃশ্যায়নে একজন মিউজিশিয়ানের চরিত্রেও তাকে দেখা যাবে!

এ প্রসঙ্গে তানভীর তারেক বলেন, “এটা একেবারেই কাকতালীয় ঘটনা। আফজাল ভাইয়ের শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘মানিকের লালকাঁকড়া’। তারই দুটি গান নিয়ে প্রথমে কথা হয়। প্রথম একটি গান গল্পের প্রয়োজনে… যা ছবির চিত্রনায়িকা সোহানা সাবার  ঠোঁটে যাবে। অন্যটি পুরো ছবির একটি থিম ট্র্যাক। হাতে অল্প সময় ছিল।

তাই প্রাথমিকভাবে আমরা একটা রাফট্র্যাক তৈরি করে আফজাল ভাইকে পাঠাই। তিনি কিছু কারেকশন দিলে আমি আবারও পাঠাই। গানটি ছিল রবীন্দ্রসংগীত। ‘দিনের বেলায় বাঁশি তোমার বাজিয়েছিলে’ শিরোনামের এই রবীন্দ্রসংগীতটি শ্রোতা-দর্শকদের কাছে খুব একটা জনশ্রুত নয়। নির্মাতা তাঁর গল্পের প্রয়োজনে এই গানটিই পছন্দ করেন। আফজাল ভাই আমাকে গিটারের ওপরেই গানটি বাঁধতে বলেন। সেভাবেই আমার স্টুডিওতে অণিমাকে দিয়ে গাওয়াই। এবং কম্পোজিশন করি।”

এদিকে আফজাল হোসেনের চলচ্চিত্রে শুধু গানের কম্পোজিশন নয়, একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীত পরিচালক তানভীর তারেক  বলেন, ‘এটা আমার জন্য সারপ্রাইজিং ছিল। কারণ আফজাল ভাই আমাকে কিছুই বলেননি। শুধু বললেন আগামীকাল শুটিং। তুমি কি তোমার গিটারটা নিয়ে আসতে পারবে? এখন দেশের কিংবদন্তি একজন নির্মাতার অনুরোধ আমার কাছে আদেশের মতো। আমি রাজি হলাম। বললেন, গানটি একটি বৈঠকী ঢঙে অভিনেত্রী গাইবে আর তুমি গিটারে সঙ্গত করবে। তুমি গিটারটা নিয়ে আমাদের ইউনিটে জয়েন করো।

তানভীর তারেক বলেন, আমি সেই অনুযায়ী গিটারটা নিয়ে গত ১১ জানুয়ারি ধানমণ্ডি মাত্রা অফিস থেকে শুটিং ইউনিটের গাড়িতে ভোরে রওনা হই। মানিকগঞ্জে শতবর্ষ আগের এক বনেদি বাড়িতে শুটিং। গিয়ে দেখি আফজাল ভাই তাঁর ইউনিট নিয়ে ফ্রেম রেডি করছেন। আমাকে দেখেই বললেন, ‘তানভীর জলদি মেকআপ নিয়ে রেডি হও। তোমার শট আরেকটু পরেই। আমি তো হতবাক! কারণ গানের বৈঠক নেই। আমি এখন কী করব? এরপর একজন মিউজিশিয়ানের চরিত্রে কিছু সংলাপ বোঝালেন। জীবনে প্রথম অভিনয়ের জন্য ডায়ালগ বললাম। সে-ও আফজাল হোসেনের নির্দেশনায়। আমি তখন ঠিক একই সঙ্গে মোহগ্রস্ত এবং দ্বিধাগ্রস্ত। তার অ্যাসিস্ট্যান্টকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আমি তো এসবের কিছুই জানি না। উনি বললেন, ‘আপনি শুধু বস্ যা বলেন তা-ই শুনুন।’

তিনি বলেন, এরপর চলচ্চিত্রে একজন মিউজিশিয়ান হিসেবে বেশ কিছু সিকোয়েন্স করালেন। কথা বলা, হাঁটাচলা- সব আফজাল ভাই বুঝিয়ে দিলেন। বললেন, ‘তুমি ফেসবুকে যেমন মজা করে লেখো। সেভাবে অভিনয় করবা।’

এদিকে আমি তো নার্ভাস হয়ে প্রায় ঘামছি। নির্মাতা ঠিকঠাক যা যা বললেন, আমি শুধু ফলো করলাম! আর ভয়ে ছিলাম, কখন আফজাল ভাই ‘হচ্ছে না’ বলে ধমক দিয়ে দেন!’

তানভীর বলেন, সারা দিনে কয়েকটি সিকোয়েন্স করালেন তিনি। আমার সিকোয়েন্স শেষ হলে সন্ধ্যার পর গানের আসর। নতুনভাবে সেট বসালেন। এ অংশে চিত্রনায়ক ফেরদৗস, সোহানা সাবার সঙ্গে আবারও সংলাপ আমার। সেখানে সাবা একজন শিল্পী, আমি গিটারিস্ট। একেবারেই মনে হচ্ছিল শীতের সময় কোনো বারান্দায় আমরা একসঙ্গে গান গাইছি। পুরো গান সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত অবধি ধারণ করা হলো।

তানভীরের মতে, আফজাল হোসেনের নির্মাণে সংগীত পরিচালক হিসেবে অংশগ্রহণই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া ছিল। সেখানে এই বাড়তি সংযোগটুকু নির্মাতা আমাকে দিয়ে করালেন হয়তো স্নেহ-ভালোবাসায়। তানভীর বলেন, জীবনে হয়তো এটিই প্রথম ও শেষ অভিনয়। তবে আমি অন্তত বলতে পারব। একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলাম, সেটিও আফজাল হোসেনের নির্দেশনায়। ছবিটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি গল্প অবলম্বনে তৈরি। ছবির আরো কিছু কাজ ঢাকাসহ বিভিন্ন লোকেশনে ধারণ করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 Nagarkantha.com