শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন
বগুড়ার ধুনটে জীবিত বিধবা নারীকে মৃত বানিয়ে সরকারি ভাতার কার্ড বিক্রি করেছেন এক ইউপি চেয়ারম্যান। দীর্ঘ এক বছর ধরে সরকারি ভাতার কার্ডের টাকা না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ওই বিধবা নারী।
জানাগেছে, মথুরাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মথুরাপুর গ্রামের মৃত শুকুর আলীর মেয়ে আয়শা খাতুনের (৮১) স্বামী আবু কক্করের মৃত্যু হওয়ায় ২০১৬ সালের ২০ মার্চ তার নামে সরকারিভাবে একটি বিধবা ভাতার কার্ড ইস্যু হয়। কিন্তু এক বছর ধরে তিনি বিধবা ভাতার কোন টাকাই পাচ্ছিলেন না। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাসান আহম্মেদ জেমস মল্লিক তার মৃত্যু সনদ প্রদান করেছেন। তার নামে যে ইস্যুকৃত সরকারি বিধবা ভাতার কার্ডটি ছিল, সেটি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রতিস্থানের মাধ্যমে অন্য একজনের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।
জীবিত আয়শা খাতুনের মৃত্যু সনদে ইউপি চেয়ারম্যান লিখেছেন ‘গত ২৪/০৬/২০২২ তারিখে তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন। ওই মৃত্যু সনদে শোক প্রকাশ করে তার আত্মার মাগফেরাতও কামনা করেন মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ জেমস।
এদিকে দীর্ঘ এক বছর ধরে বয়স্ক এই বিধবা নারী সরকারি ভাতার টাকা না পেয়ে এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। আয়শা খাতুনের চার ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলেদের মধ্যে কেউ রিকসা চালিয়ে এবং কেউ শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালায়। একারনে অস্বচ্ছলতায় কাটছিল বিধবা আয়শার জীবন-যাপন।
এমতাবস্থায় তার ভাগ্যে মেলে সরকারি সহায়তার বিধবা কার্ড। সেই সরকারি সহায়তার টাকায় আয়শা খাতুন কোন মতে জীবন যাপন করলেও অর্থের লোভে সেই কার্ডটি বিক্রি করে দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ।
বিধাবা আয়শা খাতুন (৮১) বলেন, স্থানীয় এক ভাতিজার মাধ্যমে একটি বিধবা ভাতার কার্ড করে নিয়েছিলাম। সরকারি সহায়তায় কোন রকমে বেঁচে ছিলাম। কিন্তু আমি বেঁচে থাকালেও আমাকে মৃত বানিয়ে আরেক জনের কাছে আমার বিধবা ভাতার কার্ডটি বিক্রি করে দিয়েছেন চেয়ারম্যান। তাই আমি এই চেয়ারম্যানের শাস্তি দাবি করেছি এবং আমার সরকারি সহয়তার কার্ডটি ফেরত চাইছি।
তবে এবিষয়ে জানতে মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মথুরাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হাসান আহমেদ জেমস মল্লিকের সঙ্গে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে ধুনট উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল কাফি বলেন, সরকারি ভাতাভোগিদের মৃত্যু হলে, ইউপি চেয়ারম্যানের সনদে তা প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে যদি কোন জীবিত মানুষকে মৃত বানিয়ে সনদ প্রদান করা হয়, তাহলে এবিষয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।