শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৫ অপরাহ্ন
প্রতিবছরের মতো এবছরও কোরবানির পশুরহাটগুলো প্রায় আগের মূল্যেই টেন্ডারের মাধ্যমে ইজারা দিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তবে ভিন্ন দৃশ্য একমাত্র মোহাম্মদপুর বসিলা হাটে। অস্থায়ী এই পশুরহাটে এবছর সাত গুণেরও বেশি দামে ইজারা নিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান; যা টাকার অঙ্কে আড়াই কোটি টাকা বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল বছরগুলোতে মোহাম্মদপুর বসিলার ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন ‘বসিলা গার্ডেন’-এলাকায় অস্থায়ী হাটটি ২৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছিলেন মেসার্স শাহীন ইন্টারন্যাশনাল। এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. আমজাদ হোসেন; যিনি দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের নেতা। এবছরও তিনি নিলামে অংশগ্রহণ করেন। তবে ইজারা পাননি। উচ্চদামে হাটের ইজারা বাগিয়ে নেন এনায়েত হোসেন ভূঁইয়া।
ক্যাসিনোকাণ্ডে মোহাম্মদপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. হাবিবুর রহমান মিজান গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তারা এই হাট নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর নিজেদের সাম্রাজ্য হারিয়ে ফেলেন তারা। সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তারা পুনরায় মাঠ দখলে নেমেছেন, ফিরে পেতে চান নিজেদের আধিপাত্য। এ কারণেই নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠানের নামে মোটা অঙ্কের টাকা দেখিয়ে রাজীবের বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত এনায়েত হোসেন ভূঁইয়ার নামে হাটটি ইজারা নেওয়া হয়েছে। দলীয় তেমন পদ-পদবী না থাকলেও ক্যাসিনোকাণ্ডে অভিযুক্তদের সঙ্গে ওঠা-বসার ছবি প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন এনায়েত হোসেন।
সূত্র বলছে, প্রায় তিন কোটি টাকা দিয়ে নেওয়া হাটে লাভ করা তাদের উদ্দেশ্য না। মূলত অনুসারীদের পুনরায় মাঠে একত্রিত করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চান তারা। সাত গুনের বেশি টাকায় হাটটি নেওয়া হলেও সেই টাকা উঠে আসার সম্ভাবনা না থাকলেও মাঠে নিজেদের জানান দিতে তাদের এই বিনিয়োগ।
গণমাধ্যমকে এনায়েত হোসেন ভূঁইয়াও সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেন, টাকা উঠবে কিনা জানি না। তবে নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে হাট নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, প্রতিবছর হাটটি যারা নিতেন এবার তাদের টেক্কা দিতে তা নেওয়া হয়েছে।
হাটটি একাই নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার শেয়ার আছে। নেতাকর্মী সবাই থাকবে।
সিটি করপোরেশনের ইজারার কাগজ মূল্যায়ন করে দেখা গেছে, গতবছর হাটটি ইজারা দেওয়া হয় ২৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়; সঙ্গে শতকরা ৩৫ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স দিতে হয়। যা সর্বসাকূল্যে আসে ৪০ লাখের কিছু বেশি। কিন্তু সেই হাটই এবছর নিলামে দর দেওয়া হয় ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। সঙ্গে ৩৫ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স দিতে হবে। সব মিলিয়ে যার মূল্য দাঁড়াই প্রায় তিন কোটি টাকা।
এদিকে বসিলা গার্ডেন সিটির লোকজন জানান, এখানে যখন হাট বসে তখন গন্ধে টিকে থাকা যায় না। রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে; চলাফেরা করা যায় না। তাছাড়া সীমানা প্রাচীর ভেঙে যায়, কত কিছু যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়। কিন্তু কিছু বলার থাকে না।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা গণমাধ্যমকে বলেন, এবছর আমরা প্রায় সবগুলো হাটেই আগের থেকে ইজারা দর বেশি পেয়েছি। তবে বসিলা হাটে একটু বেশি টাকা পেয়েছি। কারণ এই হাট নিয়ে এবার প্রতিযোগিতা ছিল।